images

ইসলাম

আল্লাহর রহমতের মধ্যে ডুবে থাকার আমল

ধর্ম ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:১৩ পিএম

মহানবী (স.) উম্মতকে বিশেষ কিছু নেক আমলের কথা বলেছেন, যেসব আমলের গুরুত্ব ও মর্যাদা আলাদা। একটি আমলের বর্ণনা দিতে গিয়ে নবীজি (স.) জানিয়েছেন যে, ‘সে যেন আল্লাহর রহমতে ডুবে গেলো’। এ বিষয়ে হাদিসটি হলো—হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—যে ব্যক্তি রোগীর খোঁজ-খবর নিল সে আল্লাহর রহমতে ডুবে গেল আর সে যখন বসল তখন সে তার মধ্যে স্থির হয়ে গেল।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ৫২২)

প্রসঙ্গ হলো- রোগীর সেবা। ইসলামে রোগীর সেবা অনেক বড় ইবাদত। এর ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে আরও এসেছে, ‘যখন কোনো মুসলিম তার (অসুস্থ) মুসলিম ভাইয়ের সেবায় নিয়োজিত হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফলবাগানে (তার ছায়ায়) অবস্থান করতে থাকে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৮)

বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি রোগীকে দেখতে যায়, এক ফেরেশতা তাকে ডাক দিয়ে দোয়া করা শুরু করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় অথবা নিজের ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায়, একজন ঘোষক (ফেরেশতা) তাকে ডেকে বলতে থাকে, ‘কল্যাণময় তোমার জীবন, কল্যাণময় তোমার এই পথ চলা-ও। তুমি তো জান্নাতের মধ্যে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে।’ (সুনানে তিরমিজি: ২০০৮)

আরও পড়ুন: ইসলামে পরনিন্দার আসর বর্জনের নির্দেশ

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কোনো মুসলমান যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীকে সকালে দেখতে যায় তাহলে ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। যদি সন্ধ্যায় দেখতে যায় তবে ৭০ হাজার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি হয়।’ (সুনানে তিরমিজি: ৯৬৯)

রোগীর সেবাসহ চারটি আমল কারো মধ্যে একসঙ্গে পাওয়া গেলে সে নিশ্চিত জান্নাতি বলে নবী (স.) ঘোষণা করেছেন। হাদিসটি হলো— আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) একদিন বললেন, তোমাদের মধ্যে আজ কে সিয়ামরত ছিলে? আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ জানাজায় শরিক হয়েছ? আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ দরিদ্রকে আহার দিয়েছ? আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের কেউ কোনো অসুস্থকে দেখতে গিয়েছ? আবু বকর (রা.) বললেন, আমি। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, এ কাজগুলো যদি কোনো মানুষের মধ্যে একত্রিত হয়, তাহলে সে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতি হবেন। (সহিহ মুসলিম: ২/৭১৩, হাদিস: ১০২৮, কিতাবুজ জাকাত)

আরও পড়ুন: দান-সদকার যত উপকার নগদে পাওয়া যায়

উল্লেখ্য, সামর্থ্য ও সুযোগ থাকার পরও রোগীর প্রতি যদি অবহেলা করা হয়, তবে কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ছয়টি অধিকার। এর মধ্যে একটি হলো—যখন কেউ অসুস্থ হবে, তার সেবা করা’ (সহিহ মুসলিম: ২১৬২)। মহানবী (স.) রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে আহার করাও, রোগীর শুশ্রূষা করো এবং বন্দিদের মুক্ত করো।’ (সহিহ বুখারি: ৫৩৭৩)

প্রসঙ্গত, ইসলামে রোগী দেখার কিছু আদব রয়েছে। আদবগুলো হলো—রোগীর অবস্থা জানতে চাওয়া, রোগীর কোনো প্রয়োজন বা চাহিদা আছে কি না জানতে চাওয়া, রোগীর কাছ থেকে দোয়া চাওয়া,  রোগীর জন্য দোয়া করা। রাসুলুল্লাহ (স.) সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-কে দেখতে গিয়ে তিনবার দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি সাদকে সুস্থ করে দিন’ (সহিহ বুখারি: ৫৬৫৯)। বর্তমান ইসলামি আইনজ্ঞরা আরো কিছু আদবের কথা বলে থাকেন। যেমন- রোগীর যেন কষ্ট না হয় সাক্ষাৎ সংক্ষিপ্ত করা, নিয়ম ও সময়সূচি মান্য করে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া, তাকে হতাশার পরিবর্তে আশান্বিত করা, কষ্টদায়ক কথা ও কাজ পরিহার করা—এমনকি সুগন্ধি ব্যবহারে রোগীর কষ্ট হলেও তা পরিহারের নির্দেশ দেন বিশেষজ্ঞরা, বেশি দেখা-সাক্ষাৎ না করা—যাতে তার বিশ্রাম ও চিকিৎসা ব্যাহত হয়। (আল-মাউসুআতুল ফিকহিয়্যা কুয়েতিয়্যা: ৩১/৭৭-৭৯)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোগী দেখতে যাওয়া এবং সেবা করার মাধ্যমে মহান ফজিলতলাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।