ধর্ম ডেস্ক
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:২৯ পিএম
সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা বড় নেয়ামত। একজন প্রকৃত মুমিনের কখনও স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীন থাকা উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় সবল মুমিন অধিক কল্যাণকর এবং আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। আর যা তোমাকে উপকৃত করবে, সেটিই কামনা করো।’ (মুসলিম: ২৬৬৪)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘...আল্লাহভীরুর জন্য প্রাচুর্য ক্ষতিকর নয়। আল্লাহভীরুর জন্য প্রাচুর্যের চেয়ে সুস্বাস্থ্য অধিক উপকারী। মনের প্রসন্নতাও নেয়ামতের অন্তর্ভুক্ত।’ (ইবনে মাজাহ, আদাবুল মুফরাদ: ৩০১)
এখানে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রিয়নবীজির কয়েকটি উপদেশ তুলে ধরা হলো।
১. পরিমিত খাবার ও পানি পান
সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের বিকল্প নেই। নবীজি (স.) পরিমিত খাবারে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি (স.) বলেছেন, ‘পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাবারের জন্য। এক ভাগ পানির জন্য। এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখো।’ (তিরমিজি: ২৩৮০)
২. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম
ঘুম দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তি আনে। মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন রাতের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর ঘুম। চিকিৎসকরা দেরিতে ঘুমের অভ্যাসকে শরীরের জন্য নানাবিধ জটিল রোগের উৎস বলে থাকেন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন, আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি: ৫৯৯)
৩. পরিচ্ছন্নতা
ইসলামে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অনুষঙ্গ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুল (স.) বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ।’ (মুসলিম: ২২৩) তাছাড়া অপরিচ্ছন্নতা ও নোংরা পরিবেশ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এর কারণে নানা রোগজীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটে শরীরে। তাই অজু ও গোসলের পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি শরীরের অবাঞ্ছিত কয়েকটি বিষয়ের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। (সহিহ বুখারি: ৫৮৮৯)
আরও পড়ুন
ইসলামে পবিত্রতার গুরুত্ব
নারীর পবিত্রতা ও সাজসজ্জা সংক্রান্ত মাসয়ালা
৪. দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ
প্রিয়নবী (স.) তার সাহাবিদের যেকোনো অসুস্থতায় দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি নিজে অসুস্থতার সময় চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি।’ (বুখারি: ৫৬৭৮)
৫. শরীরচর্চা কিংবা দ্রুত হাঁটা
সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরচর্চার বিকল্প নেই। যারা কর্মব্যস্ততায় শরীরচর্চার সুযোগ পান না, চিকিৎসকরা তাদের প্রতিদিন নিয়ম করে দ্রুত হাঁটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শরীরচর্চার অংশ হিসেবে নবীজি (স.) সাহাবিদের সঙ্গে কুস্তি লড়েছেন। মাঝেমধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। প্রিয়তম স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গেও এক রাতে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সবসময় স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে দ্রুত গতিতে হাঁটতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, ‘আমি নবীজি (স.)-এর চেয়ে দ্রুতগতিতে কাউকে হাঁটতে দেখিনি।’ (তিরমিজি: ৩৬৪৮)
৬. দাঁতের যত্নে মেসওয়াক
সুস্থতার জন্য দাঁত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা, দাঁতের ময়লা ও দুর্গন্ধ দূর করতে সচেষ্ট থাকা জরুরি। রাসুল (স.) নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিতেন। দাঁত যত্নের প্রক্রিয়ায় গাছের শেকড় জাতীয় মেসওয়াক ছিল রাসুল (স.)-এর একমাত্র মাধ্যম। তিনি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত এই মেসওয়াকের আমল করতেন। রাসুল (স.) রাত-দিনের যখনই ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন অজুর আগে মেসওয়াক করে নিতেন। (আবু দাউদ: ৫৭)
উল্লেখ্য, আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জ্বিন সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদতের প্রতি তৎপর থাকতে হয় একজন মুমিনকে। কিন্তু অসুস্থতা ইবাদতে বিঘ্ন ঘটনায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুস্বাস্থ্য রক্ষায় নবীজির উপদেশগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।