ধর্ম ডেস্ক
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:২১ এএম
আরবের মরুর বুকে কোরাইশ বংশে আব্দুল্লাহর ঘরে ৫৭০ সালে পৃথিবীতে এসেছিলেন এক টুকরো চাঁদ। মা আমেনার কোলের সেই চাঁদের টুকরোটির নাম নাম- হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স.)। মানবতার মুক্তির দূত এবং বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে তিনি দুনিয়াতে আগমন করেছেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব যে ঘরে জন্মেছিলেন সেই ঘরটি ছিল শিআবে আলী’র প্রবেশমুখে। মসজিদুল হারাম থেকে সামান্য দূরে। বনু হাশেম গোত্র যেখানে বাস করত সেটিই ‘শিআবে আলী’ হিসেবে তখন পরিচিত ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে, বাবা আবদুল্লাহর যে ঘরে মহানবী (স.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন মক্কায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসুল (স.) সে ঘরেই বসবাস করতেন। পরে মদিনায় হিজরতের পর নবীজি (স.) বিশিষ্ট সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)-এর ঘরে অবস্থান করেন।
মসজিদে নববীর পাশে নবীজি (স.)-এর ঘর নির্মাণ করা হয়। মসজিদে নববীর পাশের ও সংলগ্ন ভূমির মালিক ছিলেন হারিস ইবনে নোমান (রা.)। সেখানে তাঁর বাড়ি ছিল। কিন্তু তিনি তা মহানবী (স.)-এর প্রয়োজনে ছেড়ে দেন। তিনি উপহার হিসেবে ছেড়ে দিলেও রাসুল (স.) তাঁকে উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করেন। তাঁর পুরো বাড়িই রাসুল (স.) ও তাঁর পবিত্র স্ত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হতো। (আল ওয়াফা বি-আহওয়ালিল মোস্তফা, পৃষ্ঠা-২৬০)
নবীজির বাড়ি যেমন ছিল
হারিস ইবনে নোমান (রা.)-এর কাছ থেকে জমিটি কেনার পর সেখানে মাটি ও পাথর দিয়ে রাসুল (স.) ও তাঁর স্ত্রীদের ঘর নির্মাণ করা হয়। সেখানে মোট ৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়। অবকাঠামোতে কাঁচা ইট ও খেজুরের ডাল ব্যবহার করা হয়। চারটি ঘরের সামনে পাথরের দেয়াল বা বেড়া ছিল। অন্যগুলোর সামনে শক্ত মাটির দেয়াল ছিল, যেন কেউ সহজেই ঢুকতে না পারে। প্রতিটি ঘরের ছিল দরজা ও জানালা। হাদিসের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, আয়েশা (রা.)-এর ঘরে এক পাল্লাবিশিষ্ট কাঠের দরজা ছিল এবং তার সামনে পর্দা ঝোলানো থাকত। কোনো কোনো ঘরের সামনে ছোট কক্ষও ছিল। সেক্ষেত্রে মূল কক্ষে লাকড়ির তৈরি দরজা থাকত এবং ছোট কক্ষের দরজায় পর্দা ঝোলানো থাকত। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ঘরে সাধারণ পশমের তৈরি কাপড়ের পর্দা ব্যবহৃত হত।
স্ত্রীদের জন্য তৈরি ঘরগুলো ছিল অপ্রশস্ত। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) রাতের বেলা নামাজ আদায়ের সময় আয়েশা (রা.)-এর হাতের তালু তাঁর পায়ের নিচে পড়েছিল, এ থেকেই ঘর সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
নবীজির বিছানা-বালিশ
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.)-এর বিছানা ছিল চামড়ার তৈরি এবং তার ভেতরে ছিল খেজুর গাছের ছাল।’ (বুখারি: ৬৪৫৬) আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যে বালিশের ওপর রাসুলুল্লাহ (স.) হেলান দিতেন সেটি ছিল চামড়ার। এর অভ্যন্তরে খেজুরগাছের ছাল ছিল।’ (মুসলিম: ৫৩৩৯) আয়েশা (রা.) বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ঘুমানোর বালিশটি ছিল চামড়ার তৈরি এবং তার ভেতর ছিল খেজুরগাছের ছাল-বাকলে ভরা।’ (তিরমিজি: ২৪৬৯)
নবীজির চাদর
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমাদের ঘরের দরজায় একটি পাতলা রঙিন পর্দা ঝোলানো ছিল, এতে কিছু ছবি ছিল। রাসুলুল্লাহ (স.) তা দেখে বলেন, এটা খুলে নামিয়ে ফেলো। যেহেতু এটা আমাকে দুনিয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি (আয়েশা রা.) আরো বলেন, আমাদের কাছে একটি রেশমি বুটিদার চাদর ছিল, আমরা তা পরিধান করতাম।’ (তিরমিজি: ২৪৬৮)
নবীজির চাটাই
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর বর্ণনায়ও রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ঘরের আসবাবের বিবরণ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘রাসুল (স.) একটি চাটাইয়ের ওপর শুয়ে ছিলেন। চাটাইয়ের ওপর কিছুই ছিল না। তাঁর মাথার নিচে ছিল খেজুরের ছালভর্তি চামড়ার বালিশ। আমি তাঁর শরীরে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেললাম। তিনি বলেন, কাঁদছ কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কায়সার ও কিসরা (পারস্য ও রোম সম্রাট) ভোগবিলাসে মত্ত অথচ আপনি আল্লাহর রাসুল! তিনি বলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে তাদের জন্য পার্থিব জীবন আর আমাদের জন্য পরকাল।’ (বুখারি: ৪৯১৩)
উল্লেখ্য, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হয়েও তিনি সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। অনাড়ম্বরপূর্ণ ও দরিদ্রতা পছন্দ করতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) দোয়া করে বলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে দরিদ্র অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখো, দরিদ্র থাকা অবস্থায় মৃত্যু দিও এবং কেয়ামত দিবসে দরিদ্রদের দলভুক্ত করে হাশর করো...।’ (তিরমিজি: ২৩৫২)