ধর্ম ডেস্ক
১৪ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৪৫ পিএম
‘নিশ্চয় নামাজ মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফরজ’ (সুরা নিসা: ১০৩)। সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত ফজরের নামাজের সময়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই ফজরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়। ওই সময়ের মধ্যে নামাজ পড়তে না পারলে নামাজ কাজা করতে হবে। আর সূর্যোদয়ের হলুদ রঙ দূর হওয়ার পর আলো ভালোভাবে ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত নামাজ পড়া নিষেধ। কারণ ওই সময়টি নামাজের জন্য হারাম। কাজা পড়তে হলে এসময়ের পরেই পড়তে হবে। কেননা হাদিসে এসেছে, উকবা বিন আমের জুহানি (রহ.) বলেন—
‘তিনটি সময়ে রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের নামাজ পড়তে এবং মৃতের দাফন করতে নিষেধ করতেন। (১) সূর্য উদয়ের সময়; যতক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। (২) সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত। (৩) যখন সূর্য অস্ত যায়।’ (সহিহ মুসলিম: ১৩৭৩)
ফিকহের কিতাব থেকে জানা যায়, ফজরের সময়ে সূর্যোদয়ের পর সর্বোচ্চ ১১মিনিট পর্যন্ত এবং মাগরিবের সময়ে সূর্যাস্তের পূর্বে সর্বোচ্চ ১৬মিনিট পর্যন্ত মাকরুহ বা হারাম সময়। (আহসানুল ফতোয়া: ২/১৪৩)
তবে, নামাজের ব্যাপারে অবহেলা করা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা ওসব নামাজিদের ব্যাপারে বলেন, ‘অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে বে-খবর।’ (সুরা মাউন: ৪-৫)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যারা নামাজের নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরিতে আদায় করে…।’ (তাফসিরে কুরতুবি: ২০/২১১)
সুতরাং ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে ফজর নামাজ ছুটে গেলে তার ওপর কাজা করা ওয়াজিব। কেননা, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করতে ভুলে যায় বা সে সময় ঘুমিয়ে থাকায় তা ছুটে যায়, তাহলে তার কাফফারা হলো সে যখনই তা মনে করবে, তখনই (সঙ্গে সঙ্গে) নামাজ আদায় করে নেবে।’ (মুসলিম: ৬৮৪)
ফজরের সুন্নত কাজা করতে হবে?
ফজরের সুন্নত নামাজ সুন্নতে মোয়াক্কাদা। আবার অন্য সকল সুন্নতের চেয়ে এর গুরুত্বও বেশি। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা কিছু রয়েছে, তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম: ৭২৫)
অন্য হাদিসের বর্ণনায়, ‘ঘোড়া যদি তোমাদের রেখে চলেও যায়, তবুও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ত্যাগ করো না।’(আবু দাউদ: ১২৫৮)
ফজরের সুন্নতের গুরুত্ব এত বেশি হওয়ার কারণে কাজা করার সময় সুন্নতসহ পড়তে বলেছেন রাসুলুল্লাহ (স.)। অর্থাৎ সূর্য উদিত হওয়ার পরে দুই রাকাত করে— মোট চার রাকাত (দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ) নামাজ আদায় করে নেওয়া। নবীজি (স.) বলেন, ‘যে ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) পড়তে পারে না, সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর পড়ে নেয়।’ (তিরমিজি: ৪২৩)
ফিকহের কিতাবে রয়েছে, ছুটে যাওয়া ফজরের নামাজ যদি ওইদিন জোহরের ওয়াক্ত শুর হওয়ার পূর্বেই কাজা করা হয়, তাহলে দুই রাকাত দুই রাকাত করে মোট চার রাকাত পড়তে হবে। আর যদি জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যাওয়ার পর কাজা করা হয়, তাহলে শুধু দুই রাকাত ফরজ পড়তে হবে; সুন্নত পড়ার দরকার নেই। (সূত্র: সুনানে তিরমিজি: ৪২৩; আল-মাবসুত, সারাখসি: ১/১৬১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের ব্যাপারে আরও বেশি সজাগ ও সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।