images

ইসলাম

কোরআন বুঝে পড়ার তাৎক্ষণিক উপকার

ধর্ম ডেস্ক

১৪ আগস্ট ২০২৩, ০১:৫৮ পিএম

পবিত্র কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনবিধান, মানবজাতীর পথপ্রদর্শক। এটি এমন অমূল্য সম্পদ যা পাঠ করলেও সওয়াব। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পড়বে, সে একটি নেকি পাবে। আর প্রতিটি নেকি দশগুণের সমান। আমি বলি না যে, ‘আলিফ লাম মিম’ একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মিম একটি হরফ।’ (তিরমিজি: ২৯১০)

কোরআন যারা বুঝে পড়ে, কোরআনের চর্চা করে তাদেরকে কোরআনের ধারক-বাহক বলা হয়। এসব লোক আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে সম্মানিত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘মানুষের মধ্যে আল্লাহর কিছু পরিবারভুক্ত লোক আছে।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, তারা কারা? তিনি বললেন, ‘যারা কোরআনের ধারক-বাহক; এরা আল্লাহর পরিবারভুক্ত ও তার বিশেষ লোক।’ (তারগিব ওয়া তারহিব: ০২/৩০৩)

ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনার প্রতি এ বরকতপূর্ণ কিতাব নাজিল করেছি; তারা যেন এর আয়াতগুলো অনুধাবন করে এবং জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (সুরা সোয়াদ: ২৯)। ‘তারা কি কোরআন নিয়ে চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তঃকরণ বন্ধ?’ (সুরা মুহাম্মদ: ০৪)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘উপদেশ গ্রহণ করার জন্য আমি কোরআন সহজ করেছি; অতএব, কেউ কি আছে চিন্তা করবে?’ (সুরা কামার: ১৭)

তবে, উপরোক্ত আয়াতসমূহের অর্থ এই নয় যে, কোরআন না বুঝে পড়লে সওয়াব হবে না। কেননা, কোরআন তেলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। তবে, কোরআন সারাজীবন না বুঝে তেলাওয়াত করলে অনেক নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হতে হয়। অন্যদিকে বুঝে পড়ার উপকার সীমাহীন। কোরআন বুঝে পড়ার তাৎক্ষণিক উপকারগুলো জেনে নিন—

১. ওহির উদ্দেশ্য বুঝতে পারবেন
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা কী আদেশ করেছেন বা নিষেধ করেছেন অথবা কোন ঘটনা কীজন্য উপস্থাপন করেছেন সবকিছু বুঝতে হলে কোরআন বুঝে পড়ার বিকল্প নেই। সারাজীবন শুধু না বুঝে পড়তে থাকলে কোরআন নাজিলের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। তাই আল্লাহ তাআলা কোরআন বুঝে পড়ার এবং আয়াতগুলো নিয়ে গবেষণা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গবেষণা করে। (সুরা ছোয়াদ: ২৯)

২. অন্তর হবে সুস্থ ও সতেজ
আমরা সবাই জানি ফজরের সালাত আদায় করা ফরজ। কিন্তু এরপরেও খুব অল্প কিছু মানুষ মসজিদের জামাতে অংশ নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু কেন? এমন নয় যে, তারা এ বিষয়টির গুরুত্ব জানে না, মূল কারণ হচ্ছে—আমাদের অন্তর ব্যধিগ্রস্ত ও মরিচা ধরা। অধিকাংশ লোকের একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, কোরআন শুধুমাত্র একটি আদেশ-নিষেধের কিতাব। অথচ বিধি-নিষেধের আলোচনা করা হয়েছে এমন আয়াতের সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগেরও কম! বাকি ৯০ ভাগেরও বেশি আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে এমন বিষয় সম্পর্কে, যা আমাদের মন ও মস্তিষ্কের খোরাক, এগুলো আমাদের মনকে সতেজ ও পুষ্ট রাখে। কাজেই এই মরিচা পড়া অন্তরে ঘষা মাজা এবং মজবুত করতে চাই কোরআন। আমাদের চারপাশে নানা প্রলোভন ও পরীক্ষা থেকে বাঁচতে সর্বদা তাজকিরাহ ( এমন উপদেশ যা আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়) ও সতর্কবাণী মনে রাখা প্রয়োজন, যা আমরা লাভ করতে পারি অর্থ বোঝার মাধ্যমে। আল্লাহ এ কারণেই বলছেন, ‘হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবাণী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য।’ (ইউনুস ৫৭) ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি, যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত...।’ (ইসরা: ৮২) এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘(আমি কোরআন অল্প অল্প করে নাজিল করেছি) যাতে আপনার হৃদয় শক্তিশালী হয়।’ (সুরা ফুরকান: ৩২)

৩. আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) কোরআন তেলাওয়াতের সময় আয়াতসমূহের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতেন। যেমন- যখন তিনি আল্লাহ তাআলার প্রশংসার কোনো আয়াত তেলাওয়াত করতেন, তখন তিনিও নিজে নিজে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। যখন কোনো প্রার্থনার আয়াত আসত, তখন তিনিও প্রার্থনা করতেন। যখন কোনো আয়াতে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় চাওয়া হত, তখন তিনিও আল্লাহর আশ্রয় চাইতেন। (মুসলিম) কিন্তু কোরআনের অর্থ না বুঝলে আয়াতসমূহের সঙ্গে এরকম মিথস্ক্রিয়া করার কল্পনাও করা যায় না।

৪. আল্লাহর নির্দেশনাগুলো সরাসরি হৃদয়ঙ্গম হবে
কোরআন থেকে যা-ই তেলাওয়াত করা হয় কিংবা শোনা হয়, তার সবটাই আল্লাহর পক্ষ হতে মানবজাতির প্রতি সরাসরি নির্দেশনা। অর্থ বুঝে তেলাওয়াত না করলে আল্লাহ তাআলার এই নির্দেশনা অজানাই থেকে যায়, যা আল্লাহর একজন প্রকৃত বান্দার জন্য বাঞ্ছনীয় নয়। তাছাড়া আল্লাহর কালামের সৌন্দর্য ও চমৎকারিত্ব সম্পর্কে জানবেন বুঝে পড়লে। এক আয়াতে এসেছে, ‘তবে কি তারা কোরআন অনুধাবন করে না? এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে আসত, তাহলে তারা এতে অনেক অসংগতি পেত।’ (সুরা নিসা: ৮২)

৫. চারিত্রিক মাধুর্য ফিরে পাবেন
চরিত্র গঠনে কোরআন বোঝার বিকল্প নেই। আয়েশাকে (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চরিত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, তাঁর চরিত্র হল আল কোরআন। তাই কোরআনি চরিত্র গঠন করতে হলে কোরআনের অর্থ অনুধাবনপূর্বক এর শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। মানবহৃদয়ে কোরআনের প্রভাব সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন উত্তম বাণীসংবলিত কিতাব, যা সুসামঞ্জস্য এবং যা পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি করা হয়। এতে যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, তাদের শরীর রোমাঞ্চিত হয়, অতঃপর তাদের দেহমন বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে।’ (সুরা ঝুমার: ২৩)

৬. চক্ষুষ্মান ব্যক্তিতে পরিণত হবেন
পবিত্র কোরআন যেখান থেকেই পড়ুন, আপনার চোখ খুলে যাবে। অন্তর পরিশোধিত হবে। কোরআনহীন অন্তর শূন্য ঘরের মতো, যে ঘরে কোনো আসবাব নেই। দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা বিচিত্র ঘটনার সামনে এসে দাঁড়াই। মুসলিম উম্মাহর উচিত—সমস্যাগুলোর সমাধান আল্লাহর কালামের কাছ থেকে নেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করা। এটা কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন কোরআন বুঝতে পারবো, একইসঙ্গে দৈনন্দিন পরিস্থিতির মিল খুঁজে বের করতে পারবো। আল্লাহ বলেন, ‘একজন চক্ষুষ্মান লোক আর একজন অন্ধ ব্যক্তি কখনো সমান হতে পারে না; আর না আঁধার ও আলো সমান হতে পারে’। (সুরা ফাতির: ১৯-২০)

৭. ঈমান বেড়ে যাবে
পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াত, চর্চা মানুষের ঈমান বাড়ায়। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের ওপর তার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের ওপরই ভরসা করে।’ (সুরা আনফাল: ২)

৮. অন্তরে প্রশান্তি নেমে আসবে
মানবজীবনে অর্থ বা অন্য কোনো কারণে জাগতিক তৃপ্তি আসলেও প্রকৃত তৃপ্তি এবং শান্তি কোরআন শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ: ২৮)

উল্লেখ্য, কোরআন মেনে চলার ব্যাপারে আন্তরিকতা না থাকলে, অপবিত্রতা নিয়ে পড়লে উপকৃত হওয়া যাবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ এর (কোরআনে বর্ণিত দৃষ্টান্ত) মাধ্যমে বহুজনকে পথভ্রষ্ট করেন এবং বহুজনকে পথপ্রদর্শন করেন। এর মাধ্যমে বস্তুত পাপীদের পথভ্রষ্ট করা হয়।’ (সুরা বাকারা: ২৬) এজন্য গবেষক আলেমরা বলেন, কোরআন দ্বারা উপকৃত হওয়ার শর্ত হলো—পবিত্র মন ও শরীর নিয়ে তা পাঠ করা, অর্থ-মর্ম উপলব্ধির চেষ্টা করা, মনোযোগসহ পাঠ করা এবং অন্তরে সুপথ লাভের আকাঙ্ক্ষা থাকা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) তাদের পথ দেখান, যারা তাঁর অভিমুখী।’ (সুরা রাদ: ১৩)