images

ইসলাম

টাকার বিনিময়ে মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে কি?

ধর্ম ডেস্ক

১১ আগস্ট ২০২৩, ০৩:৪৯ পিএম

images

মৃত্যুর পরে বান্দার আমল বন্ধ হয়ে যায়। দুনিয়া থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ থাকে না। তবে তিনটি কাজ এমন আছে যার কারণে বান্দা মৃত্যুর পরেও কবরে থেকে সওয়াব পেতে থাকেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, যখন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার আমলের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল বন্ধ হয় না। ১. সদকায়ে জারিয়া ২. এমন ইলম যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয় ৩. নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (সহিহ মুসলিম: ৪০৭৭; সুনানে আবু দাউদ: ২৮৭০)

সুতরাং দুনিয়াতে এমন কিছু করে যেতে হবে যার সওয়াব কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। যেমন জনকল্যাণমুখী কাজ, মসজিদ নির্মাণ, সন্তানকে আলেম বানানো ইত্যাদি। অবশ্য মৃত ব্যক্তির রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া, তার নামে সদকা ইত্যাদি সঠিক পন্থায় ঈসালে সওয়াব পাঠালে মৃত ব্যক্তি সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ।

তবে, ওসব আমলের বিনিময় গ্রহণ বা কোরআন তেলাওয়াতের বিনিময়ে টাকা নেওয়া বৈধ নয়। আব্দুর রহমান ইবনে শিবল (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা কোরআনের বিনিময় গ্রহণ করো না এবং এর দ্বারা আয় বৃদ্ধির চিন্তা করো না। (মুসনাদে আহমদ: ১৫৫২৯) 

অন্য বর্ণনায় এসেছে, সাহাবি ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা কোরআন পড় এবং বিনিময় আল্লাহ তাআলার কাছে চাও। তোমাদের পর এমন জাতি আসবে, যারা কোরআন পড়ে এর বিনিময় মানুষের কাছে চাবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৯৯১৭)

অন্য বর্ণনায় আছে, তাবেয়ি যাযান (রহ) বলেন, যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে মানুষের থেকে তার বিনিময় গ্রহণ করে সে যখন হাশরের মাঠে উঠবে তখন তার চেহারায় গোশত থাকবে না। শুধু হাড্ডি থাকবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৭৮২৪)

এ প্রসঙ্গে ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, মৃত ব্যক্তির ঈসালে সওয়াবের জন্য কোরআন খতম বা যেকোনো খতম পড়ে অথবা দোয়া করে কোনো প্রকার বিনিময়/হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া জায়েজ নেই। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৬; ফতোয়া তাতারখানিয়া: ২০/৫৩; ফাতহুল বারি: ৮/৭১৯; ইমদাদুল ফতোয়া: ৩/৩৩৪; ইমদাদুল আহকাম: ১/২১২; কিফায়াতুল মুফতি ২/৪১)

অবশ্য দুনিয়াবি উপকার যেমন রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করা, বিপদ-আপদ দূর হওয়া বা ঘরে বরকতের জন্য কোনো সুরা তেলাওয়াত করে বা কোরআন খতম করে বিনিময় নেওয়ার অবকাশ আছে। (দ্র: সহিহ বুখারি: ৫৭৩৭; শরহু মাআনিল আছার: ২/২৪৬; উমদাতুল কারি: ১২/৯৫, ২১/২৬৪; শিফাউল আলিল, পৃষ্ঠা-১৫৭)

কিন্তু এ কাজকেও পেশা বানানো সমীচীন নয়। (ফাতহুল বারি: ১১/৯৭)

উল্লেখ্য, শুধুমাত্র দোয়া ও খমতকারীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হলে তা বিনিময় হিসেবে গণ্য হবে এবং নাজায়েজ হবে। আর যদি ব্যাপকভাবে দাওয়াতের আয়োজন করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তা বিনিময় হিসেবে গণ্য হবে না এবং অন্যদের মতো খতম পড়ুয়ারাও খেতে পারবেন।

(তথ্যসূত্র: মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৪/১৭০; রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৬; ইমদাদুল ফতোয়া: ৩/৩৩৪; ফতোয়া তাতারখানিয়া: ২০/৫৩; ইমদাদুল আহকাম: ১/২১২; কিফায়াতুল মুফতি: ২/৪১)