ধর্ম ডেস্ক
০৪ আগস্ট ২০২৩, ০২:৩১ এএম
নবীজির ওপর দরুদ পাঠ অন্যতম নেক আমল। হাদিসে এর বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনেও নবীজির প্রতি দরুদ পাঠের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর ওপর দরুদ পাঠান, হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরাও নবীর ওপর দরুদ পাঠাতে থাকো এবং উত্তম অভিবাদন (সালাম) পেশ করো।’ (সুরা আহজাব: ৫৬)
নবীজি (স.)-এর বদৌলতে আমরা ইসলামে দীক্ষিত হতে পেরেছি। আমাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহ অগণিত। এ অনুগ্রহের হক আদায় আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই অন্ততপক্ষে উম্মত হিসেবে আমাদের দ্বীনি ও ঈমানি দায়িত্ব হলো নবীজি (স.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।
নবীজির প্রতি দরুদ পাঠের আল্লাহর নির্দেশ একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তাঁর রাসুলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত, বরকত ও অবারিত কল্যাণ লাভের অন্যতম উপায়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন।’ (সহিহ মুসলিম: ১/১৬৬; তিরমিজি: ১/১০১
অন্য হাদিসে হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন, তার ১০টি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং ১০টি দরজা বুলন্দ হবে।’ (নাসায়ি: ১/১৪৫; মুসনাদে আহমদ: ৩/১০২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২/৪৩)
অন্য বর্ণনায়, আবু বুরদা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তার আমলনামায় ১০টি নেকি লেখা হবে। (আলমুজামুল কাবির, তাবারানি: ২২/৫১৩)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকেও দরুদের একই ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ: ২/২৬২, হাদিস: ৭৫৬১)
দরুদ ফেরেশতাদের দোয়া লাভের উপায়
ফেরেশতারা দরুদ পাঠকারীর জন্য মাগফেরাতের দোয়া করেন। আমের ইবনে রবিয়াহ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে খুতবায় বলতে শুনেছি- ‘আমার ওপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩/৪৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪০; ইবনে মাজাহ: ৯০৭)
ইহকাল-পরকালের সকল কল্যাণ লাভের উপায়
দরুদ ও সালামে ইহকাল-পরকালের সকল কল্যাণ নিহিত। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (স.) আল্লাহর জিকিরের খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা। আমি বললাম, চারভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরূদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।’ (তিরমিজি: ২/৭২) মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/২৪৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪৫)
কেয়ামতের দিন নবীজির সবচেয়ে নিকটবর্তী হওয়ার আমল
দরুদ পাঠকারী কেয়ামতের দিন নবীজির সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। (তিরমিজি: ১/১১০)
দরুদ পাঠকারীদের জন্য জান্নাত অবধারিত
হাদিসে এসেছে দরুদ পাঠকারীর জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। রুওয়াইফি ইবনে সাবিত আল আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এ দরুদ পাঠ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে। اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ مِنْكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আনজিলহুল মাক্বআদাল মুক্বাররাবা মিনকা ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি।’ (আলমুজামুল কাবির, তবারানি: ৫/৪৪৮১; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/২৫৪)
সকল কল্যাণের জন্য দরুদ পাঠ যথেষ্ট
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে চায় আমাদের ওপর অর্থাৎ আহলে বাইতের ওপর দরুদ পাঠের সময় তাকে পাত্র ভরে দেওয়া হোক, সে যেন এভাবে দরুদ পড়ে- اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ وَأَزْوَاجِهِ أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ وَذُرِّيَّتِهِ وَأَهْلِ بَيْتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন্নাবিয়্যি ওয়া আজওয়াজিহি উম্মাহাতিল মু’মিনীনা ওয়াজুররিয়্যাতিহি ওয়া আহলে বাইতিহি কামা সাল্লাইতা আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’ (আবু দাউদ: ১/১৪১)
দরিদ্র পাবে সদকার সওয়াব
আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই সে যেন দোয়ায় বলে- اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَ رَسُوْلِكَ وَ صَلِّ عَلَى الْمُؤمِنيْنَ وَالْمُؤمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসুলিকা ওয়া সাল্লে আলাল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাত, ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাত’ এটি তার জন্য জাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩/১৮৫)
দরুদবিহীন দোয়া আসমান-জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে
উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (স.) উপর দরুদ না পড়বে ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না, আসমান-জমিনের মাঝে থেমে থাকবে।’ (জামে তিরমিজি: ১/১১০)
উম্মতের সালাম নবীজির কাছে পৌঁছানো হয়
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলার জামিনে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা আছেন, তাঁরা আমার নিকট উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ১/৪৪১; ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪৪; নাসায়ি: ১/১৪৩)
একজন আশেকে রাসুলের কাছে দরুদ পাঠের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ফজিলত লাভ নয়, এটি তাঁর কাছে কর্তব্য। কেননা নবীজি (স.) উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সদা ব্যাকুল থাকতেন। উম্মত কীভাবে নাজাত ও মুক্তি লাভ করতে পারে এই ফিকিরে ছিলেন সদা বিভোর। সর্বোপরি এই উম্মতের ওপর রয়েছে তাঁর অবারিত ইহসান-অনুগ্রহ, পার্থিব-অপার্থিব উভয় বিবেচনায়। তাই উম্মতের কর্তব্য নবীজির সেই ইহসানের দাবি রক্ষা করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মহানবী (স.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ ও সালাম পাঠের তাওফিক দান করুন। তাঁর সুপারিশ নসিব করুন। আমিন।