মো. মারুফুল আলম
০১ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৩৮ পিএম
আলহামদুলিল্লাহ অর্থ সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। পবিত্র কোরআনের শুরু হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ শব্দ দিয়ে। মহানবী (স.) আলহামদুলিল্লাহ বলার অসংখ্য ফজিলত বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলার মাহাত্ম্য বর্ণনা ও প্রশংসার জন্য আলহামদুলিল্লাহর চেয়ে উত্তম বাক্য আর নেই। হাদিসে এসেছে, নবীজি (স.) বলেছেন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সর্বোত্তম ফজিলতপূর্ণ বাক্য এবং সর্বোত্তম দোয়া হলো আলহামদুলিল্লাহ।’ (তিরমিজি: ৩৩৮৩)
এক হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি নিজের প্রশংসা পছন্দ করেন, এজন্য তিনি নিজের প্রশংসা করেছেন এবং আমাদেরও তাঁর প্রশংসার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি: ২/১৮১৭) নবীজি (স.) আরো বলেছেন, আলহামদুলিল্লাহ মিজানকে পূর্ণ করে দেয়। আর সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ শব্দ দুটি আসমান ও জমিনের খালি জায়গা পূর্ণ করে দেয়। (সহিহ মুসলিম: ২২৩)
সাধারণত খুশির সংবাদে বা সুখের সময় আলহামদুলিল্লাহ বলার রেওয়াজ রয়েছে আমাদের সমাজে। যেমন- খাওয়া-দাওয়ার পরে, সকল খুশির খবরে, বাথরুমের কাজ সেরে, হাঁচি দিয়ে, যেকোনো কাজ-কর্ম শেষ করার পরে এবং আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সবসময় আলহামদুলিল্লাহ বলা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে বান্দা কিছু খেলে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং কিছু পান করলেও আল্লাহর প্রশংসা করে (অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ) পড়ে।’ (মুসলিম: ২৭৩৪, তিরমিজি: ১৮১৬)
কিন্তু দুঃখের সময়ও আলহামদুলিল্লাহ বলার বিশেষ ফজিলতের কথা বলেছেন রাসুলুল্লাহ (স.)। এক হাদিসে মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনো বান্দার সন্তান মারা যায়, তখন মহান আল্লাহ (জান কবজকারী) ফেরেশতাদের বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ হরণ করেছ কি? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তোমরা তার হৃদয়ের ফলকে হনন করেছ? তারা বলেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বলেন, ‘সেসময় আমার বান্দা কী বলেছে?’ তারা বলেন, ‘সে আপনার হামদ (প্রশংসা) করেছে ও ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রা-জিউন পাঠ করেছে।’ মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমার (সন্তানহারা) বান্দার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি গৃহ নির্মাণ করো, আর তার নাম রাখো ‘বায়তুল হামদ’ (প্রশংসাভবন)।’ (তিরমিজি: ১০২১)
অসুস্থ ব্যক্তির আলহামদুলিল্লাহ বলা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমি আমার মুমিন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করি, আর বান্দা সে অবস্থায় আমার প্রশংসা করে আলহামদুলিল্লাহ বলে; তবে সে বিছানা থেকে এমনভাবে ওঠে দাঁড়ায়; যেন তার মা তাকে ভূমিষ্টকালে যেমন জন্মদান করেছিল।’ (হাদিসে কুদসি) alhamdulillah আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত
ইসলামে আলহামদুলিল্লাহ হলো সর্বোত্তম দোয়া (তিরমিজি: ৩৩৮৩)। আলহামদুলিল্লাহর ফজিলত বর্ণনায় নবীজি (স.) বলেছেন, ‘..যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল (সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে) এই দুই সময়ে ১০০ বার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলল সে যেন আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ১০০টি ঘোড়ার পিঠে মুজাহিদ প্রেরণ করলো, অথবা আল্লাহর রাস্তায় ১০০টি গাজওয়া বা অভিযানে শরিক হলো..।’ (তিরমিজি: ৫/৫১৩, নং ৩৪৭১; নাসায়ি, সুনানুল কুবরা: ৬/২০৫; সহিহুত তারগিব: ১/৩৪৩)
হাদিসে আরও এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যদি আমার কোনো উম্মতকে পুরো দুনিয়া দিয়ে দেওয়া হয় আর সে আলহামদুলিল্লাহ বলে তাহলে এই শব্দ পুরো দুনিয়া থেকে উত্তম। অর্থাৎ, পুরো পৃথিবী পেয়ে যাওয়া এত বড় নেয়ামত নয়, যা আলহামদুলিল্লাহ বলার মধ্যে রয়েছে। কারণ এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহর সওয়াব থেকে যাবে। (ইবনে মাজা) হাদিসে আরও এসেছে, আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয় বাক্য চারটি— সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবর...(সহিহ মুসলিম: ২১৩৭; ইবনে মাজাহ: ৩৮১১; আবু দাউদ: ৪৯৫৮; মেশকাত: ২২৯৪)
শেষ কথা হলো- মুসলিম উম্মাহকে সবকিছুতে সর্বাবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুখের সময় আলহামদুলিল্লাহ পড়লে যেমন সওয়াব, দুঃখের সময় পড়লেও সওয়াব। তাছাড়া এটি সর্বোত্তম দোয়া হওয়ার কারণে এই শব্দটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুখে-দুঃখে আলহামদুলিল্লাহ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।