images

ইসলাম

প্রিয়নবীর পছন্দের ১৫ খাবার

ধর্ম ডেস্ক

৩১ জুলাই ২০২৩, ০২:৩৬ পিএম

কিছু খাবার ও পানীয় নবীজির খুব পছন্দের ছিল। নবীজির পছন্দের কারণেই  কেউ যদি সেগুলো পছন্দ করেন এবং খান, তাহলে সুন্নত আদায় হবে এবং সওয়াব লাভ হবে। তাছাড়া প্রিয়নবী (স.) যেসব খাবার গ্রহণ করেছেন, তা ছিল সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। আজকের বিজ্ঞানের গবেষণা সে কথারই সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখানে নবীজির ১৫টি পছন্দের খাবার নিয়ে আলোচনা করা হলো।

১. খেজুর
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত-আমি রাসুল (স.)-কে এক টুকরো রুটির ওপর একটি খেজুর রাখতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, এটিই সালন-মসলা।’ (আবু দাউদ: ৩৮৩০)। রসুল (স.) আবারও বলেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়ির অধিবাসীরা অভুক্ত।’ (আবু দাউদ: ৩৮৩১)। রাসুল (স.) সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মাকেও খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিতেন।

২. পনির
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তাবুকের যুদ্ধে রাসুল (স.)-এর কাছে কিছু পনির উপস্থাপন করা হয়। রাসুল (স.) বিসমিল্লাহ পড়ে একটি চাকু দিয়ে সেগুলো কাটেন এবং কিছু আহার করেন। (আবু দাউদ: ৩৮১৯)

৩. মাখন
আতিয়্যাহ বিন বুসর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের এখানে এলেন। আমরা তার বসার জন্য আমাদের একটি চাদর পেতে দিলাম। পানি ছিটিয়ে আমরা তা তার জন্য নরম করে দিলাম। তিনি তার ওপর বসলেন। তখন আমাদের ঘরে মহান আল্লাহ তার ওপর অহি নাজিল করলেন। আমরা তার সামনে মাখন ও খেজুর পেশ করলাম। তিনি মাখন পছন্দ করতেন। (ইবনে মাজাহ: ৩৩৩৪)

৪. মধু ও মিঠাই
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (স.) মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন।’ (বুখারি: ৫১১৫; মুসলিম: ২৬৯৫)। আরেক হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মধু হলো উত্তম ওষুধ।’ (বুখারি: ৫৩৫৯)

৫. কিশমিশ
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (স.)-এর জন্য কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হত এবং তিনি সেগুলো পান করতেন।’ (মুসলিম)

৬. তরমুজ ও শসা নবীজির প্রিয় খাবার
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) তরমুজের সঙ্গে ‘রাতাব’ বা (পাকা-তাজা) খেজুর খেতেন। (বুখারি :  ৫১৩৪, তিরমিজি : ১৮৪৪) আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (স.)-কে শসার সঙ্গে ‘রাতাব’ খেতে দেখেছি। (মুসলিম : ৩৮০৬)

৭. সারিদ
সারিদ হলো গোশতের ঝোলে ভেজানো টুকরো টুকরো রুটি দিয়ে তৈরি বিশেষ খাদ্য। ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুল (স.)-এর কাছে একটি ‘পেয়ালায় করে সারিদ আনা হলে নবী (স.) বললেন, তোমরা চতুর্দিক থেকে খাও, মধ্য থেকে খেও না, কেননা মধ্যেই বরকত বর্ষিত হয়। (বুলুগুল মারাম: ১০৫০)

৮. লাউ নবীজির পছন্দের খাবার
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার একজন দর্জি রাসুল (স.)-কে খাবারের দাওয়াত করে। আমিও মহানবী (স.)-এর সঙ্গে সেই খাবারে অংশগ্রহণ করি। রাসুল (স.)-এর সামনে রুটি এবং গোশতের টুকরা ও লাউ মেশানো ঝোল পরিবেশন করে। আমি দেখেছি, রাসুল (স.) প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে লাউ নিয়ে খাচ্ছেন। (শামায়েলে তিরমিজি: ২৬২)

৯. মোরগ নবীজির পছন্দের খাবার
জাহদাম আল-জারমি (রহ.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, আমি আবু মুসা (রা.)-এর সামনে গেলাম। তিনি তখন মুরগির গোশত খাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, আমার সামনে এগিয়ে এসো এবং খাবারে অংশগ্রহণ করো। রাসুলুল্লাহ (স.)-কে আমি মুরগির গোশত খেতে দেখেছি। এ ছাড়া আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে আমি মোরগের গোশত ভক্ষণ করতে দেখেছি। (তিরমিজি: ১৮২৬ ও ১৮২৭)

১০. ঘিয়ের সঙ্গে রুটি প্রিয়নবীর প্রিয় খাবার
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) একদিন বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে বাদামি গমে তৈরি ও ঘিয়ে সিক্ত সাদা রুটি থাকত তাহলে সেগুলো আহার করতাম।’ আনসারি এক সাহাবি এ কথা শুনে এ ধরনের রুটি নিয়ে আসেন। (ইবনে মাজাহ: ৩৩৪০)

১১. দুধ
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘মেরাজের রাতে বায়তুল মাকদিসে আমি দুরাকাত নামাজ পড়ে বের হলে জিবরাইল (আ.) আমার সম্মুখে শরাব ও দুধের আলাদা দুটি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন।’ (বুখারি: ৮২)

১২. খাসির পায়া
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট খাসির পায়া রান্না করতাম। রাসুল (সা.) কোরবানির ১৫ দিন পরও সেগুলো খেতেন।’ (বুখারি: ৫১২২)

১৩. সামুদ্রিক মাছ
মহানবী (স.) সাগরের মাছ পছন্দ করতেন। এ বিষয়ে আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)-এর একটি দীর্ঘ হাদিস আছে। হাদিসটি বুখারি (৪৩৬১) ও মুসলিম  (১৯৩৫) শরীফে বর্ণিত হয়েছে।

১৪. জলপাই
রাসুল (স.) বলেন, তোমরা জয়তুন খাও এবং জয়তুনের তেল গায়ে মাখো। কেননা এটি একটি মোবারক বৃক্ষ থেকে তৈরি। (তিরমিজি: ১৮৫১)

১৫. ভিনেগার বা সিরকা
হজরত জাবের (রা.) বলেন, ‘রাসুল (স.) তাঁর পরিবারের কাছে সালন কামনা করেন। তাঁরা বলেন, আমাদের কাছে তো সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। মহানবী (সা.)-এর কাছে সেগুলো নিয়ে আসা হলে তিনি তা থেকে খেতে শুরু করেন। তারপর বলেন, ‘সিরকা কতই না উত্তম সালন! সিরকা কতই না উত্তম সালন!’ হজরত জাবের (রা.) বলেন, ‘সেদিন থেকে আমি সিরকা পছন্দ করতে শুরু করি।’ (মুসলিম: ২০৫১)

এছাড়াও তিনি মরুভূমির এক ধরনের পাখির গোশত, ভিনেগার, মাশরুম, বার্লি, গাজর, ডুমুর, আঙুর, ডালিম ইত্যাদি পছন্দ করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় জানা যায়। নবীজির খাদ্যাভ্যাসে থাকা খাদ্যগুলো গবেষণা করে দেখা গেছে, তা মানবদেহের জন্য শুধু উপকারীই নয় বরং সর্বোৎকৃষ্ট।

মূলত নবীজির সুন্নত অনুসরণেই উম্মতের কল্যাণ—সেটাই এর প্রমাণ।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সুন্নত অনুসরণের মাধ্যমে পবিত্র আহার গ্রহণ এবং সওয়াব লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।