ধর্ম ডেস্ক
১৯ জুলাই ২০২৩, ০১:৪৬ পিএম
নবীজির হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সাবধানতা জরুরি। কেননা যদি হাদিস বলে উল্লেখ করা তথ্যটি প্রকৃত হাদিস না হয় তবে তা হবে মারাত্মক অপরাধ। আর জেনেশুনে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করলে তার স্থান হবে জাহান্নামে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত আমার ওপর মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।’ (মুসলিম: ৩)
বারো চান্দের ফজিলত শিরোনামের বেশ কিছু পুস্তিকায় মহররম মাসের প্রথম ১০ দিন রোজা রাখার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। এক পুস্তিকার ভাষায়- হুজুর (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মহররমের প্রথম ১০ দিন রোজা রাখে, সে ১০ হাজার বছর দিনে রোজা ও রাতে ইবাদতের নেকি পাবে।’ এটি একটি ভিত্তিহীন বর্ণনা। জাল বর্ণনা বিষয়ক কিতাবেও এর অস্তিত্ব নেই। অবশ্য এর কাছাকাছি একটি কথা জাল বর্ণনার কিতাবে দেখা যায় যে, ‘মহররম মাসের প্রথম নয় দিন যে ব্যক্তি রোজা রাখবে আল্লাহ তার জন্য শূন্যে একটি কুববা (তাঁবু) নির্মাণ করবেন; যা হবে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে এক মাইল। এর চারটি দরজা থাকবে।’
ইবনুল জাওযী (রহ) এই বর্ণনাটি উল্লেখ করার পর বলেন- هَذَا حَدِيثٌ مَوْضُوعٌ عَلَى رَسُولِ الله صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ ‘এটি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নামে জাল বর্ণনা।’
ইবনে হিব্বান (রহ) বলেন, ‘মুসা আততাবিল হজরত আনাস (রা.)-এর সূত্রে অনেক জাল বিষয় বর্ণনা করেছে; এগুলোর (অসারতা প্রকাশ এবং এর) ওপর বিস্ময় প্রকাশের জন্য ছাড়া তা লেখা বা উল্লেখ করা বৈধ নয়।’ (আলমাউজুআত, ইবনুল জাওযী, খ. ২, পৃ-১৯৯)
আসলে কোনো মাসের প্রথম দশকে রোজার বিষয়টি এসেছে জিলহজ মাসের ক্ষেত্রে। এসব পুস্তিকায় সেটিকে নিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে মহররমের সাথে এবং যুক্ত করা হয়েছে বিশাল ফজিলত।
জিলহজের প্রথম দশকে রোজার বিষয়ে উম্মুল মুমিনিন হজরত হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, চারটি আমল নবী কারিম (স.) কখনও ছাড়তেন না। আশুরার রোজা, জিলহজের প্রথম দশকের (অর্থাৎ প্রথম নয় দিনের) রোজা, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের রোজা, ফজরের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ। (সুনানে নাসায়ি: ২৪১৫; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৬৪২২; মুসনাদে আহমদ: ২৬৩৩৯)
আর বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে কেবল আশুরা তথা মহররমের দশম তারিখের রোজার বিষয়ে। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, আশুরার রোজার বিষয়ে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
উল্লেখ্য, মহররম মাসের প্রথম দশকের রোজা বিষয়ে কিছু বর্ণিত না হলেও সাধারণভাবে মহররম মাসে রোজা রাখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন- أَفْضَلُ الصِّيَامِ، بَعْدَ رَمَضَانَ، شَهْرُ اللهِ الْمُحَرّمُ ‘রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬৩)
আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবীজি (স.)-কে জিজ্ঞেস করল- আল্লাহর রাসুল! রমজানের পর আপনি আমাকে কোন মাসে রোজা রাখার নির্দেশ দেন? উত্তরে নবীজি (স.)বললেন, ‘তুমি যদি রমজানের পর আরও কোনো মাসে রোজা রাখতে চাও তাহলে মহররমে রোজা রাখ। কেননা তা আল্লাহর মাস। এই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও সেদিন আরও মানুষের তাওবা কবুল করবেন।’ (জামে তিরমিজি: ৭৫১)
(সূত্র: মাসিক আলকাউসার, মহররম ১৪৪২, সেপ্টেম্বর ২০২০)