images

ইসলাম

আল্লাহ সহজ-সরল মানুষের জন্য যা বরাদ্দ রেখেছেন

ধর্ম ডেস্ক

১৮ জুলাই ২০২৩, ০৩:৩৪ পিএম

সহজ-সরল মানুষ বলতে এক কথায় ভালো মানুষকেই বোঝানো হয়। যারা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, ভদ্র। সহজ নিয়মে বাঁচতে চান, কারো ক্ষতি করেন না। অহংকার নেই, সত্যকে দ্বিধাহীন চিত্তে গ্রহণ করেন এবং যথাসম্ভব জটিলতা এড়িয়ে চলেন। তারা অতি সাধারণ, সৎ ও খাঁটি হয়ে থাকেন। তাদের লুকানো উদ্দেশ্য থাকে না, কোনো দুশমনি থাকে না। মুখে যা বলেন, মনেও তা-ই। তাদের আশেপাশে থাকা নিরাপদ। কারণ আপনাকে তাদের সত্যিকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। সরলতার কারণে মানুষের বোকামি দূর হয়, অতি চালাকিও দূর হয়ে যায়।

মহানবী (স.) এমন মানুষগুলোকে বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী বলে অভিহিত করেছেন এবং তাদের সর্বোত্তম মানুষ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলা হলো, কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি।’ সাহাবিরা বলেন, সত্যভাষীকে তো আমরা চিনি; কিন্তু বিশুদ্ধ অন্তরের ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, ‘সে হলো পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ, যার কোনো গুনাহ নেই, দুশমনি, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্মঅহমিকা ও কপটতা নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২১৬)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি সরল ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে; কিন্তু পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ধোঁকাবাজ ও নির্লজ্জ হয়।’ (আবু দাউদ: ৪৭৯০) সরল মানুষ জান্নাতে, সহজ সরল মানুষ জান্নাতে যাবে

রাসুল (স.) উম্মতের অন্তরের পবিত্রতাকে এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে তিনি তাঁর সামনে কারো ব্যাপারে অহেতুক অভিযোগ করাকেও পছন্দ করতেন না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আমার সাহাবিদের কেউ যেন অন্য সাহাবি সম্পর্কে আমার কাছে কোনো অভিযোগ না করে। কারণ আমি তোমাদের কাছে প্রশান্ত অন্তরে আসতে পছন্দ করি। (আবু দাউদ: ৪৮৬০)

সহজ-সরল মানুষগুলো আল্লাহ তাআলার কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবো না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি, সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী।’ (তিরমিজি: ২৪৮৮)

অন্যত্র রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতি মানুষের সংবাদ দেব না? আর তারা হলো সরলতার দরুণ দুর্বল প্রকৃতির লোক। মানুষ তাদের হীন, তুচ্ছ ও দুর্বল মনে করে। তারা কোনো বিষয়ে কসম করলে আল্লাহ তা সত্যে পরিণত করেন। রাসুল (স.) আরো বলেন, আমি কি তোমাদের জাহান্নামিদের সংবাদ দেব না? আর তারা হলো প্রত্যেক অনর্থক কথা নিয়ে ঝগড়াকারী বদমেজাজি ও অহংকারী। ’ (মুসলিম, মেশকাত: ৫১০৬)

সহজ-সরল মানুষগুলো সাধারণত হিংসা থেকে মুক্ত থাকেন। আর হিংসা-বিদ্বেষ না থাকা জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে।’ (সুরা হিজর: ৪৭)

জান্নাতে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা (সেখানে) একে অন্যের সঙ্গে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না। পরস্পর শত্রুতা করবে না। পারস্পরিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে না।’ তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৪২৪)

সহজ-সরল মানুষের আরেকটি দিক হচ্ছে তারা মানুষের ওপর সহজে রাগ করে না। ক্ষমতাবান হলেও তারা সামান্য ব্যাপারে ক্রোধান্বিত হন না। মানুষের ওপর রাগ না করা ও নিজের রাগ সংবরণ করার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)

প্রিয়নবী (স.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)

তাই সম্মানিত সালফে সালেহিনরা সহজ-সরল জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন এবং মানুষকেও সরলতার তাগিদ দিতেন। কারণ সরলতার বিপরীত বিষয়গুলো যেমন- হিংসা, লোভ, অহংকার, ঈর্ষা ইত্যাদি মানুষের নেকআমল বরবাদ করে এবং জান্নাতে প্রবেশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এজন্যই পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তাদের অন্তর থেকে ঈর্ষা দূর করব, তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হবে নদী।’ (সুরা আরাফ: ৪৩)

অর্থাৎ অসুস্থ অন্তরের মানুষের স্থান জান্নাতে নেই। তাই জাহান্নামে শাস্তির পর জান্নাতে প্রবেশ করানোর আগে পাপী মুমিনদের অন্তরকে পূত-পবিত্র করানো হবে। রাসুল (স.) বলেন, ‘মুমিনরা যখন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে এক পুলের ওপর তাদের আটকে রাখা হবে। তখন পৃথিবীতে একের প্রতি অন্যের যা যা জুলুম ছিল, তার প্রতিশোধ গ্রহণের পরে যখন তারা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদের জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার আবাসস্থল যেরূপ চিনত, তার চেয়ে বেশি তার জান্নাতের আবাসস্থল চিনতে পারবে।’ (বুখারি: ২৪৪০)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে অন্তরের ব্যাধি থেকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। সহজ-সরল জীবন যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।