ধর্ম ডেস্ক
১২ জুলাই ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম
বীর্য মানব ভ্রূণ সৃষ্টিতে সহায়ক উপাদান। এটি পাক-নাপাক হওয়ার ব্যাপারে মতবিরোধ থাকলেও হানাফি মাজহাবে বীর্য নাপাক বা অপবিত্র। আমার বিন মাইমুন (রহ) সুলাইমান বিন ইয়াসার (রা.)-কে বীর্য লাগা কাপড়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘আমি রাসুল (স.)-এর কাপড় থেকে তা ধুয়ে ফেলতাম তারপর তিনি নামাজের জন্য বের হতেন এমতাবস্থায় যে, কাপড়ে পানির ছাপ লেগে থাকত। (সহিহ বুখারি: ২৩১, ২২৯)
এ পরিচ্ছেদের অধীনে গায়রে মুকাল্লিদ আলেম ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেন, ‘ইমাম বুখারি (রহ) এ পরিচ্ছেদে বীর্য ছাড়া অন্য কোনো নাপাকির কথা উল্লেখ করেননি। হয়ত বাকি নাপাককে বীর্যের উপরই কিয়াস করেছেন। এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ইমাম বুখারি (রহ) এর নিকট বীর্য নাপাক। (তাইসিরুল বারি: ১/১৭০)
আম্মার বিন ইয়াসার (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় ৫টি কারণে কাপড় ধৌত করতে হয়, যথা-১. পায়খানা, ২. প্রস্রাব, ৩. বমি, ৪. রক্ত, ৫. বীর্য। (সুনানে দারা কুতনি: ৪৫৮) বীর্য নাপাক, বীর্য পাক, মানুষ কি নাপাক?
ওমর বিন খাত্তাব (রা.) বলেন, বীর্য সিক্ত থাকলে তা ধুয়ে ফেল, আর শুকিয়ে গেলে তা খুঁটিয়ে ফেল। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৯৩৩)
উল্লেখিত দলিলাদির আলোকে বীর্যকে নাপাক বলেন হানাফি মতাবলম্বী আলেমরা। ফতোয়ার কিতাব বাদায়েউস সানায়িতে এসেছে, ‘নিশ্চয় যে সকল জিনিস মানুষের শরীর থেকে বের হলে অজু বা গোসল ওয়াজিব হয়ে যায় তা নাপাক। যেমন, পেশাব, পায়খানা, ওদি, মজি, বীর্য, হায়েজ এবং নেফাসের রক্ত। (বাদায়েউস সানায়ি: ১/৬০ আলমুহিতুল বুরহানি: ১/৫০)
কিন্তু বীর্য থেকে সৃষ্ট হওয়ার কারণে মানুষ নাপাক হয় না। যেমন নাপাক গোবর ও রক্ত দ্বারা সৃষ্ট দুধ নাপাক নয়। যা পবিত্র কোরআনে এভাবে এসেছে— ‘অবশ্যই গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে আমি তোমাদের পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।’ (সুরা নাহল: ৬৬) বীর্য নাপাক, বীর্য পাক, মানুষ কি নাপাক?
মূলত মানুষ দুভাবে নাপাক হতে পারে। ১. কলব বা অন্তর নাপাক হয়ে যাওয়া, ২. দেহ নাপাক হওয়া। এছাড়া মানুষ নাপাক হয় না। বরং মানুষ আল্লাহর এক মর্যাদাসম্পন্ন সৃষ্টি। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই আমি আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং তাদের পানিতে ও স্থলে প্রতিষ্ঠিত করেছি, তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সুরা ইসরা: ৭০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্নাহসমর্থিত বিবেচনাবোধ দান করুন। সুন্নাহর ওপর জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।