ধর্ম ডেস্ক
০৩ জুলাই ২০২৩, ০৬:৫৩ পিএম
হজ সম্পন্ন করার পর দেশে ফিরছেন সম্মানিত হাজিরা। তারা মূলত বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত হয়েই দেশে ফিরছেন। যাদের হজ কবুল হয়েছে তাদের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অসংখ্য পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে। হাজিদের কিছু পুরস্কার নিচে তুলে ধরা হলো।
১. জান্নাতের সুসংবাদ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘এক ওমরার পর আরেক ওমরা—উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হলো কবুল হজের প্রতিদান।’ (সহিহ বুখারি: ১৭৭৩)
২. জন্মের সময়ের মতো নিষ্পাপ: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করল এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হতে বিরত রইল, সে সেদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল।’ (সহিহ বুখারি: ১৫২১) হজ করার পর মর্যাদা, হজ করার সওয়াব, হজ করলে যে প্রতিদান
৩. অসীম সওয়াবের অধিকারী: আয়েশা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করাকে সর্বোত্তম আমল মনে করি, তবে কি আমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করব না? আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমাদের জন্য উত্তম সংগ্রাম হচ্ছে কবুল হজ।’ (বুখারি: ২৭৮৪)
হাদিস বিশারদরা বলেন, এর দ্বারা হজের বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ পুণ্য অর্জন করা উদ্দেশ্য।
৪. প্রাচুর্য: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা ধারাবাহিকভাবে হজ ও ওমরা আদায় করো। কেননা এ দুটি ধারাবাহিকভাবে আদায় করলে তা দারিদ্র্য ও গুনাহ দূরীভূত করে, যেমন হাঁপর লোহার মরিচা দূর করে।’ (ইবনে মাজাহ: ২৮৮৭) হাজীরা দেশে ফিরছেন
৫. দোয়া কবুলের ঘোষণা: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘হজ ও ওমরার যাত্রীরা আল্লাহর প্রতিনিধিদল। তারা তাঁর কাছে দোয়া করলে তিনি তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাঁর কাছে মাফ চাইলে তিনি তাদের ক্ষমা করেন।’ (ইবনে মাজাহ: ২৮৯২)
৬. আল্লাহর নিরাপত্তা: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায় (নিরাপত্তায়) থাকে: এক. যে ব্যক্তি কোনো মসজিদের উদ্দেশে বের হয়, দুই. যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে বের হয়, তিন. যে ব্যক্তি হজ করতে বের হয়।’ (মুসনাদে হুমাইদি: ১০৯০)
৭. সর্বোত্তম আমল: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সর্বোত্তম আমল হলো, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা, অতঃপর আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা, এরপর কবুল হজ। এগুলো পৃথিবীর সমস্ত আমলের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী।’ (সহিহুল জামে: ১০৯২) হজের সওয়াব
৮. উচ্চ মর্যাদা: আল্লাহ হজ আদায়কারীকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘হাজির উট পা উঠালে বা নামালে বিনিময়ে আল্লাহ তার জন্য পুণ্য লেখেন বা তার পাপ মোচন করেন অথবা মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।’ (শুআবুল ঈমান: ৪১১৬)
৯. সুস্থতা: হজে গিয়ে হাজিরা জমজমের পানি পান করেন। আর এ পানিতে আল্লাহ বহু রোগের আরোগ্য রেখেছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘পৃথিবীর বুকে সর্বোত্তম পানি জমজম কূপের পানি। তাতে আছে তৃষ্ণার তৃপ্তি ও রোগের আরোগ্য।’ (সহিহুত তারগিব: ১১৬১)
১০. হাজিদের নিয়ে আল্লাহ গর্ব করেন: জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আরাফার দিন আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং হাজিদের ব্যাপারে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করে বলেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকাও, তারা আমার কাছে আসছে এলোমেলো চুলে, ধুলাবালি গায়ে, আহাজারি করতে করতে দূর-দূরান্ত থেকে উপস্থিত হয়েছে। আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, আমি তাদের মাফ করে দিলাম। তখন ফেরেশতারা বলে, হে প্রতিপালক, অমুক বান্দাকে তো বড় গুনাহগার বলে অভিহিত করা হয় এবং অমুক পুরুষ ও নারীকেও। তিনি (স.) বলেন, আল্লাহ তখন বলেন, আমি তাদেরও ক্ষমা করে দিলাম। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আরাফার দিনের চেয়ে এত বেশি জাহান্নাম হতে মুক্তি দেওয়ার মতো আর কোনো দিন নেই।’ (মেশকাতুল মাসাবিহ: ২৬০১) হাজিরা দেশে ফিরছেন
আল্লাহ তাআলা সকল হাজির হজ কবুল করুন। হজ-পরবর্তী জীবনে বেশি বেশি পরহেজগারিতা দান করুন। জীবন অনেক বেশি সুন্দর ও বরকতময় করুন। আমিন।