images

ইসলাম

ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম

ধর্ম ডেস্ক

২৮ জুন ২০২৩, ০৩:৩৩ পিএম

ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদ মুসলমানদের বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি। প্রতিবছর জিলহজের মাসের ১০ তারিখ এই ঈদ পালিত হয়। সে হিসেবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) দেশে কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হবে। পশু কোরবানির আগে ঈদের নামাজ পড়তে হয়। অনেকে ঈদের নামাজের নিয়ম ভুলে যান। এখানে পাঠকদের সুবিধার্থে ঈদের নামাজের নিয়ম তুলে ধরা হলো। ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব, ঈদুল ফিতরের নামাজের তাকবীর

ঈদের নামাজ ঈদের নামাজের তাকবীর
ঈদের নামাজ দুই রাকাত। আর তা ওয়াজিব। এতে আজান-ইকামত নেই। যাদের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব, তাদের ওপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব। ঈদের নামাজ ময়দানে পড়া উত্তম। তবে মক্কাবাসীর জন্য মসজিদে হারামে উত্তম। শহরের মসজিদগুলোতেও ঈদের নামাজ জায়েজ আছে। (বুখারি: ১/১৩১, ফতোয়া শামি: ১/৫৫৫, ১/৫৫৭, আল মুহাজ্জাব: ১/৩৮৮)

ঈদের নামাজের নিয়ম কোরবানির ঈদের নামাজ, রমজানের ঈদের নামাজ
প্রথমত, স্বাভাবিক নামাজের মতোই তাকবিরে তাহরিমা বলে হাত বাঁধবেন। তারপর ছানা পাঠ করবেন। তারপর অতিরিক্ত তিনটি তাকবির বলবেন। প্রথম দুই তাকবিরে হাত তুলে ছেড়ে দেবেন এবং তৃতীয় তাকবিরে হাত বেঁধে ফেলবেন। তারপর আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ার পর ইমাম সুরা ফাতিহা পড়ে এর সঙ্গে অন্য একটি সুরা মেলাবেন। তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই রুকু-সিজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করবেন।

দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম কিরাত পড়া শেষে রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত তিন তাকবির দেবেন। প্রতি তাকবিরের সঙ্গে হাত উঠাবেন এবং ছেড়ে দেবেন। তারপর চতুর্থ তাকবির বলে রুকুতে চলে যাবেন। তারপর স্বাভাবিক নামাজের মতোই নামাজ শেষ করবেন। নামাজ শেষে ইমাম মিম্বারে উঠবেন। দুটি খুতবা দেবেন। এ সময় ইমামের খুতবা মনোযোগসহকারে শুনতে হবে। কোনো ধরনের কথা বলা বা অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়া যাবে না। খুতবা শেষে সবাই ঈদগাহ ত্যাগ করবেন।

ঈদের নামাজের সময় কোরবানির ঈদের নামাজের নিয়ম, ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম
সূর্য উদিত হয়ে এক বর্শা (অর্ধহাত) পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত ঈদের নামাজের সময় বাকি থাকে। তবে ঈদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত, যেন নামাজের আগেই বেশি থেকে বেশি সদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদির: ২/৭৩, আল মুগনি: ২/১১৭)

ঈদের নামাজের নিয়ত কোরবানির ঈদের নামাজের নিয়ত
ইসলামে নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়ত অর্থ হলো, মনের ইচ্ছা, সঙ্কল্প বা প্রতিজ্ঞা। এটি অন্তরের কাজ, জিহ্বার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোনো কাজের শুরুতে মনের মধ্যে যে ইচ্ছাপোষণ করা হয়, সেটাকেই নিয়ত বলা হয়। তাই মনে মনে নির্দিষ্ট করতে হবে যে, আমি এই ঈদের নামাজ কিবলামুখী হয়ে ইমামের পেছনে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি।

ঈদের নামাজের তাকবির ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত
ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা ও ‘ছানা’র পর তিন তাকবির। দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর রুকুতে যাওয়ার আগে তিন তাকবির। এই তাকবিরগুলো বলার সময় ইমাম-মুক্তাদি সবাইকে হাত ওঠাতে হবে। তৃতীয় তাকবির ছাড়া প্রতিটি তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দিতে হবে। কেউ যদি এই তাকবিরগুলো না পায়, তাহলে সে রুকুতে থাকা অবস্থায় আদায় করে নেবে। কারো পূর্ণ এক রাকাত ছুটে গেলে সে দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর তাকবিরগুলো আদায় করে নেবে। কেরাতের আগে আদায় করারও সুযোগ রয়েছে। নামাজ শেষে খুতবা প্রদান ইমামের জন্য সুন্নত, তা শ্রবণ করা নামাজির জন্য ওয়াজিব। (ফতোয়ায়ে শামি: ১/৫৫৯, ৫৬০) 

ঈদের দিনের সুন্নত ও মোস্তাহাব ঈদুল আজহার নামাজের দোয়া, কোরবানির ঈদের নামাজে দোয়া
১. মিসওয়াক করা সুন্নত। ২. গোসল করা সুন্নত। ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। ৪. ঈদুল আজহায় কিছু না খেয়ে এবং ঈদুল ফিতরে কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। ৫. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া উত্তম। এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, অন্য রাস্তা দিয়ে আসা মোস্তাহাব। ৬. ঈদগাহে যাওয়ার পথে নিচুস্বরে তাকবির (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পড়া সুন্নত। ৭. সাধ্যমতো উত্তম পোশাক পরিধান করা মোস্তাহাব। ৮. (ঈদুল ফিতরে) নামাজের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করা সুন্নত (দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে রমজানেও প্রদান করা যায়)। ৯. ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা এবং কারো সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা মোস্তাহাব। ১০. আনন্দ-অভিবাদন বিনিময় করা মোস্তাহাব। (ফতোয়ায়ে শামি : ১/৫৫৬, ৫৫৭, ৫৫৮, হেদায়া: ২/৭১, বুখারি: ১/১৩০, ইবনে মাজাহ: ৯২)

পরিচিত কারো সঙ্গে কিছুদিন বা অনেক দিন পর দেখা হলে উভয়ে ডান গলা মিলিয়ে মহব্বতের সঙ্গে একবার কোলাকুলি করা এবং ‘আল্লাহুম্মা জিদ মহাব্বাতি লিল্লাহি ওয়া রাসুলিহ’ পড়া সুন্নত। তবে ঈদের দিন জরুরি মনে করে কোলাকুলি করা বিদআত। অন্যথায় জায়েজ। (তিরমিজি: ২/১০২, মাহমুদিয়া: ২৮/২১১, ইসলাহি খুতুবাত: ১/১৮৬-১৮৭) কোরবানির ঈদের নামায পড়ার নিয়ম

ঈদ আল্লাহর নেয়ামত। নেয়ামতের চাহিদা হলো, এর শুকরিয়া আদায় করা এবং অবাধ্য আচরণ না করা। এসব দিকে লক্ষ রাখা সকল মুসলমানের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈদের দিনের যাবতীয় সুন্নত-মুস্তাহাবগুলো মেনে চলার এবং আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন। ঈদের নামায পড়ার নিয়ম ও নিয়ত

ঈদুল আজহা নামাজের নিয়ত (আরবি) نويت ان اصلي لله تعالي ركعتي صلاة العيد الاضحى مع ستة تكبيرات واجب الله تعالى اقتديت بهذا الامام متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر ঈদের নামাজের নিয়ম আল কাউসার, ঈদের নামাজ কয় রাকাত

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত (উচ্চারণ) ‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা আলা রাকয়াতাই ছালাতি ঈদিল আযহা মাআ ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তা আলা ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেবে আর মুসল্লিরা তা মনোযোগের সঙ্গে শুনবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈদের নামাজসহ ইসলামের সকল বিধান যথাযথ নিয়মে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন। ঈদের নামাজের নিয়ম, মহিলাদের ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে, ১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম, ঈদের নামাজের ফরজ কয়টি