ধর্ম ডেস্ক
২৮ জুন ২০২৩, ১১:৪৭ এএম
আজ সৌদি আরবে পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হচ্ছে। মক্কার কাবা শরিফ, মদিনার মসজিদে নববিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মসজিদে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এরপর সেসব দেশের মুসলমানরা কোরবানি করবেন। হাজীরাও ঈদ উদযাপন ও কোরবানি করবেন।
সৌদি আরবে এবার পালিত হচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হজ। প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম হজ পালন করছেন। আজ ঈদের দিন বুধবার (২৮ জুন) বড় জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন হাজীরা এবং তা জোহরের আগেই সম্পন্ন করবেন।
কংকর নিক্ষেপের পরে মিনায় কোরবানি করবেন এবং চুল কাটাবেন। অতঃপর ইহরামের কাপড় বদলিয়ে সাধারণ পোশাক পরে ফেলবেন। মাথা ন্যাড়া করে হজের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার মাধ্যমে সাধারণ কাজ করতে পারলেও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। এরপর তাওয়াফে ইফাদা (তাওয়াফে জিয়ারত) করবেন। এদিন তা করতে না পারলে ১১ বা ১২ তারিখেও করার অবকাশ রয়েছে এবং এরসঙ্গে সাঈও করবেন।
উল্লেখ্য, তাওয়াফে জিয়ারত বা ইফাদা হলো হজের মুল তাওয়াফ, যা বাদ পড়লে হজ সম্পন্ন হবে না। আর ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে তাওয়াফে জিয়ারত না করতে পারলে দম বা কোরবানি কাফফারা আদায় করতে হবে। তাওয়াফে ইফাদার অপর নাম তাওয়াফে জিয়ারাহ বা ফরজ তাওয়াফ।
৯ জিলহজ হজের মূল বিধান আরাফাতের ময়দানে সারাদিন অবস্থানের পর মুজদালিফায় গেছেন হাজিরা। রাতটা মুজদালিফার খোলা আকাশের নিচে ইবাদত ও জিকির করে কাটিয়েছেন। ফজরের পর শয়তানকে মারার জন্য হাজিরা ছোট আকারের ২১টি পাথর সংগ্রহ করে মিনায় গেছেন, কেউ মিনার পথে রয়েছেন। মিনায় গিয়ে তিনটি স্থানে কংকর নিক্ষেপ করতে হবে—১. জামারাতুল আকাবা (শেষ জামারা) ২. জামারাতুল উস্তা (মধ্যম জামারা) এবং ৩. জামারাতুল উলা (প্রথম জামারা)
কংকর নিক্ষেপের পদ্ধতি
প্রথমদিন ১০ জিলহজ তথা আজ কোরবানির দিনে জামরাতুল আকাবায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দিতে হয়। নিক্ষেপের সময় কাবাঘর বাঁ দিকে ও মিনা ডান দিকে রেখে দাঁড়ানো সুন্নত। অন্য দুই জামারায় এদিন কংকর নিক্ষেপ করতে নেই। ১১ তারিখে তিন জামারায় (প্রথমে ছোট, এরপর মধ্যম এবং সব শেষে বড় জামারায়) ৭*৩=২১টি পাথর মারতে হয়। ১২ তারিখেও অনুরূপ তিন শয়তানকে ২১টি পাথর মারতে হয়। তিন দিনে সর্বমোট ৭+২১+২১=৪৯টি কঙ্কর মারতে হয়।
কংকর নিক্ষেপের সময়
সূর্যোদয়ের পর থেকে কংকর নিক্ষেপের সময় শুরু হয়। তবে সুন্নত হলো সূর্য উঠার কিছু সময় পর দিনের আলোতে কংকর নিক্ষেপ করা। জাবের (রা.) বলেন, ‘কোরবানির দিবসের প্রথম ভাগে (সূর্য উঠার কিছু পর) রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উটের পিঠে আরোহণ অবস্থায় জামারায় কংকর নিক্ষেপ করেছেন।’ (আবু দাউদ: ২/১৪৭)
সূর্য হেলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এর সময় থাকে। দুর্বল ও নারীদের জন্য ১০ তারিখের রাতে সূর্যোদয়ের আগে কংকর নিক্ষেপের অবকাশ রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যখন সহজে সুযোগ হয় তখনই কংকর মারা যাবে।
কংকর নিক্ষেপের ফজিলত
কঙ্কর নিক্ষেপের ফজিলত সম্পর্কে একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আর তোমার কংকর নিক্ষেপ, তা তো তোমার জন্য সঞ্চিত করে রাখা হয়।’ (মুজাম কাবির: ১৩৩৯০)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আর জামারায় পাথর নিক্ষেপ, এ ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর নিচের বাণীটি প্রযোজ্য, ‘অতঃপর কোনো ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ-জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ।’ (সুরা : সাজদাহ, আয়াত : ১৭) (সহিহ আত তারগিব ওয়াত তারহিব: ১১১৩)
আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর জামারায় তোমার কংকর নিক্ষেপ, এতে তোমার নিক্ষিপ্ত প্রতিটি কংকরের বিনিময়ে একেকটি কবিরা গুনাহ মোচন করা হবে।’ (সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব: ১১১২)
রাসুলুল্লাহ (স.) আরো বলেন, ‘তুমি যদি কংকর নিক্ষেপ করো, তোমার জন্য তা কেয়ামতের দিন নূর হবে।’ (সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব: ১৫৫৭)