ধর্ম ডেস্ক
২৭ জুন ২০২৩, ০৩:৫৯ পিএম
আরাফাত ময়দানে হজের প্রধান আনুষ্ঠানিকতায় সমবেত হয়েছেন সারা বিশ্বের ২৫ লাখের বেশি মুসলিম। আজ মঙ্গলবার (২৭ জুন) স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সায়িদ।
খুতবায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনাসহ ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে। ইসলামের রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে ভাই ভাই হয়ে তাওহিদের পথে অটল থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। খুতবায় বলা হয়, যেভাবে এই মাসটি সম্মানিত ও হারাম ঠিক তেমনি সবার জান-মালও হারাম।
শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সায়িদ হজের খুতবায় বলেন, শয়তানের পথ পরিহার করতে হবে। কেননা শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। শয়তান মুসলমানদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করতে চায়। ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য সবরকম চেষ্টা চালায়। সেই চক্রান্ত থেকে দূরে থাকাই মুসলমানদের কর্তব্য ও বিধান।
জীবনের সকল অঙ্গনে ইহসানের আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে দেওয়ার উজ্জ্বল দিকনির্দেশনা দেওয়া হয় খুতবায়। সবাই এক আল্লাহর বান্দা। আরব-অনারব ভেদাভেদ নেই, কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নেই, ধনী-গরীব পার্থক্য নেই। নামাজ, জাকাত, দরিদ্রদের সহায়তা করতে আমরা নির্দেশপ্রাপ্ত। পবিত্র হজও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুকন। আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করতে হবে যেন তিনি আপনাদের দেখছেন। যেভাবে এই মাসটি সম্মানিত ও হারাম ঠিক তেমনিভাবে সবার জান-মালও হারাম। প্রত্যেক নবী এই দাওয়াত-ই দিয়েছেন যে- এক আল্লাহর ইবাদত করো।
খুতবায় মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়েছে। মুসলিমদের জন্য করণীয় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয় হজের খুতবায়। এক আল্লাহর ইবাদত তথা নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত নিয়ে কোরআনের উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়। আহ্বান জানানো হয় পরস্পর সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষার। গোনাহের কাজে নয়, বরং তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যের সহযোগিতা করার বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয় খুতবায়। খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বিভিন্ন টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে।
হজের খুতবায় শায়খ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সায়িদ আরও বলেন, আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (স.)-কে শেষ নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে নাজিলকৃত পবিত্র কোরআনে নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজ ফরজ করেছেন। মুসলমানদের কাছে আল্লাহ ছাড়া অন্যকোনো উপাস্য নেই, তিনি এক, তার কোনো অংশীদার নেই। যুগে যুগে সকল নবী আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছন। ইবাদতে তাঁর উপযুক্ত কেউ নেই। আল্লাহ ছাড়া সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
খুতবায় বলা হয়, আল্লাহ তাআলা বাবা-মার সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলাম ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। আল্লাহ তাআলা বাবা-মা’র পর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন, যে বান্দা নিজের ওপর জুলুম করে তার জন্য তওবার দরজা খোলা রয়েছে। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না।
খুতবায় মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে বলা হয়, হে মানব সম্প্রদায়, আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায় ও ইনসাফের নির্দেশ দিয়েছেন। মানবজাতির জন্য এমন বিধিবিধান তিনি পাঠিয়েছেন, যার মাধ্যমে মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। ন্যায়বিচার করতে হবে। কেননা এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসবকিছু ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। আমাদের আচরনে তা ফুটিয়ে তুলতে হবে।
হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতি বছর আরবি জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফাত ময়দানে হজের খুতবা অনুষ্ঠিত হয়। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী মুহাম্মদ (স.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
এবার ২০ টি ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ সম্প্রচার করা হয়েছে। ভাষাগুলো হলো- ইংরেজি, ফরাসি, ফার্সি, উর্দু, হাউসা, রাশিয়ান, তুর্কি, বাংলা, চীনা, মালয়, সোয়াহিলি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, আমহারিক, জার্মান, সুইডিশ, ইতালীয়, মালয়ালম, বসনিয়ান ও ফিলিপিনো।
টানা চতুর্থবারের মতো বাংলা ভাষায় হজের খুতবা শোনা যাচ্ছে। এবার খুতবার বাংলা অনুবাদ করছেন আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান ও ড. খলীলুর রহমা। তাদের সাথে আরো রয়েছেন মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। মানারাতুল হারামাইন অ্যাপ, আল কোরআন চ্যানেল ও আস সুন্নাহ চ্যানেলসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটারে খুতবাটি শোনা যাচ্ছে। এ বছর বিশ্বের ৩০ কোটির বেশি মানুষের কাছে ইসলামের বাণী লাইভ সম্প্রচারিত খুতবার মাধ্যমে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এবছর বিভিন্ন দেশ থেকে রেকর্ডসংখ্যক মুসল্লি পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে জড়ো হয়েছেন। এ বছর ২৫ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক লাখ ২২ হাজার ২২১ জন মুসল্লি হজ পালন করতে গেছেন বাংলাদেশ থেকে।