images

ইসলাম

আরাফার দিন রোজা রাখার পুরস্কার 

ধর্ম ডেস্ক

২৭ জুন ২০২৩, ০৯:৩৫ এএম

জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পবিত্র আরাফাতের দিন। এবারের হজে সৌদি আরবে অবস্থানকারীদের জন্য সেই দিনটি হলো ২৭ জুন, মঙ্গলবার। আর সৌদি আরবের বাইরের দেশে অবস্থানকারীরা জিলহজের চাঁদ ওঠা সাপেক্ষে ৯ জিলহজ রোজা রাখবেন। বাংলাদেশে সেই দিনটি হলো বুধবার। অর্থাৎ মঙ্গলবার শেষরাতে সেহেরি খেয়ে বুধবার রোজা রাখলে আরাফার দিনে রোজা রাখার ফজিলত পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

এদিন আল্লাহ তাআলা অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘আরাফার দিনের মতো আর কোনোদিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮) আরাফার দিনে রোজা রাখার ফজিলত

আরাফার দিন রোজা রাখলে দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘আরাফার দিনের (৯ জিলহজের) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি যে, তিনি আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

আরও পড়ুন
আরাফার রোজা কয়টি?
দেশে আরাফার দিনের রোজা কত তারিখ?
হাদিসের আলোকে আরাফাতের ময়দানের বিশেষত্ব 

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘আরাফার দিনের রোজার সওয়াব এক হাজার দিন রোজা রাখার সমান’। (তারগিব)।

আরাফাতের দিন নির্দিষ্ট করা নিয়ে দুইটি মত লক্ষ্য করা যায়। প্রথমটি হলো- স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখে তারিখ নির্ধারণ করা; দ্বিতীয়টি হলো- সৌদি আরবের তারিখের অনুসরণ করা। যারা সৌদি আরবের তারিখের অনুসরণ করতে বলেন, তাদের যুক্তি হলো— আরাফার রোজার ফজিলত সংক্রান্ত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি, বরং নির্দিষ্ট একটি বিশেষ দিনের উল্লেখ করেছেন; আর সেই দিনটি হলো হজের দিন, যে দিন হাজীগণ আরাফা ময়দানে অবস্থান করেন। সুতরাং ৮ বা ৯ তারিখ নয় বরং হজের দিনই রোজা রাখতে হবে। হজ যেহেতু পৃথিবীতে শুধুমাত্র এক জায়গায় মক্কা শরীফেই অনুষ্ঠিত হয়, তাই সারা পৃথিবীতে সেই হজের দিনই আরাফার রোজা প্রতিপালিত হবে। কারণ এই রোজাটি তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং স্থান ও কর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আর তা হলো মক্কা ও হজ। আরাফার দিন ২০২৩, আরাফার দিনে রোজা রাখার ফজিলত

কিন্তু প্রথম মতের প্রবক্তারা বলেন, সৌদি আরবের অনুসরণ নয়, বরং পৃথিবীর যেখানে যখন জিলহজ মাসের ৯ তারিখ হবে সেখানকার অধিবাসীদের জন্য সেদিনই আরাফার দিন অর্থাৎ ইয়াওমুল আরাফা। যেমন- জিলহজ মাসের ৮ তারিখকে ইয়াওমুত তারবিয়াহ এবং ১০ তারিখকে ইয়াওমুন নাহার (কোরবানির দিন) বলা হয়। অনুরূপভাবে ৯ তারিখ হলো ইয়াওমুল আরাফা বা আরাফার দিন। তাছাড়া মুসলিম শরিফের হাদিসে আরাফার দিনের রোজা বলতে ৯ জিলহজের কথা বলা হয়েছে, তারিখের কথাটি অন্য হাদিসেও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জনৈকা স্ত্রী বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (স.) ৯ জিলহজ তারিখে রোজা রাখতেন।’ (আবু দাউদ: ২৪৩৭, নাসায়ি: ২৩৭২) আরাফার রোজা কয়টি, আরাফার রোজার ফজিলত

যুক্তিও একই কথাই বলে। যেমন- পৃথিবীর অনেক দেশে আরবের একদিন আগেও চাঁদ দেখা যায়। সেক্ষেত্রে যেদিন আরবের ৯ তারিখ, ওই দিন সেসব দেশে ১০ জিলহজ তথা ঈদুল আজহা। তাদের আরবের সঙ্গে আরাফার রোজা রাখতে হলে ঈদের দিন রোজা রাখতে হবে। অথচ হাদিসে ঈদের দিন রোজা হারাম করা হয়েছে। এছাড়াও যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ইসলাম শুধু একবিংশ শতাব্দীর যোগাযোগমাধ্যমের সহজলভ্যতার ধর্মই নয়, বরং সর্বযুগের সব মানুষের ধর্ম। সেক্ষেত্রে যারা কোনো কারণে যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে, তারা কিভাবে আরবের আরাফার দিন জানতে পারবে? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই।

সুতরাং সৌদি আরবে আরাফায় অবস্থানের সঙ্গে মিলিয়ে সব দেশে আরাফার রোজা রাখা ভুল। এমনকি সব দেশে সেটি সম্ভবও নয়। তাই সঠিক হলো- নিজ নিজ দেশের তারিখ অনুসারে মুসলমানরা ৯ জিলহজ তারিখে আরাফার রোজা রাখবে। অবশ্য কেউ চাইলে একাধিক রোজাও রাখতে পারেন। এতে বাড়তি রোজাগুলোর সওয়াব লাভ হবে। জিলহজ মাসের ১ তারিখ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত যারা রোজা রাখবেন, তারা অনেক সওয়াব ও ফজিলত লাভ করবেন। হাদিসে এসেছে, জিলহজের ১ থেকে ৯ তারিখ প্রতিদিনের রোজা ১ বছরের রোজার সওয়াব এবং প্রতিরাতের ইবাদত ১ বছরের ইবাদতের সমান সওয়াব। (তিরমিজি, খণ্ড:১, পৃষ্ঠা-১৫৮) arafar din roja  আরাফার দিনে রোজা সওয়াব, সৌদি আরবে আরাফার দিন, ইয়াওমে আরাফা

উল্লেখ্য, হাজিদের জন্য আরাফার ময়দানে রোজা রাখা মোস্তাহাব নয়। রাসুলুল্লাহ (স.) আরাফার ময়দানে রোজাবিহীন অবস্থায় ছিলেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আরাফা দিবসের রোজা পালনের মাধ্যমে হাদিসে বর্ণিত ফজিলত হাসিলের তাওফিক দান করুন। হজ সম্পর্কিত বিধানসহ দ্বীনের সকল বিধি সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।