ধর্ম ডেস্ক
১৮ জুন ২০২৩, ১২:১৬ পিএম
হজের মৌসুমে পবিত্র মক্কার বিশেষ স্থানগুলোতে দোয়া করতে পারা হজযাত্রীদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) ওসব স্থানে দোয়া করেছেন। এছাড়াও বিশেষ সময়গুলোতে তিনি দোয়া করেছেন। যেমন তাওয়াফের সময় তিনি দোয়া করেছেন- ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ দিন, আখেরাতের কল্যাণ দিন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন (সুরা বাকারা: ২০১)।’ (আবু দাউদ: ১৮৯২)
কাবা শরিফে দৃষ্টি পড়ার সময় দোয়া করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, পবিত্র কাবার দিকে তাকিয়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। হজরত ইবনে জুরাইজ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (স.) কাবা শরিফকে দেখে এই দোয়া পড়েছিলেন হে আল্লাহ! আপনি এই ঘরের সম্মান, মর্যাদা ও মহিমা বৃদ্ধি করে দিন এবং যে ব্যক্তি এই ঘরের হজ ও ওমরা করে তারও সম্মান মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিন।’ (মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার: ৯৭৯৬)
সাফা ও মারওয়ার ওপর দাঁড়িয়ে নবীজি দোয়া করেছেন; আরাফায় উটের ওপর বসে হাত সিনা পর্যন্ত উঠিয়ে মিসকিন যেভাবে খাবার চায় সেভাবে দীর্ঘ দোয়া ও কান্নাকাটি করেছেন; আরাফার যে জায়গায় তিনি অবস্থান করেছেন সেখানে স্থির হয়ে সূর্য হেলে গেলে সালাত আদায় করার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া করেছেন। মুজদালিফার মাশআরুল হারামে ফজরের নামাজের পর আকাশ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ আকুতি-মিনতি ও মুনাজাতে রত থেকেছেন। (সহিহ মুসলিম: ১২১৮)
মুজদালিফা দোয়া কবুলের স্থান। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) মুজদালিফায় অবস্থানকালে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ডাকো। তোমাদের দোয়া কবুলের কিছু স্থানে আছ। তবে জেনে রেখ! আল্লাহ তাআলা গাফেল অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি: ৩৪৭৯)
জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের পর দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে নবীজি দীর্ঘক্ষণ দোয়া করেছেন। ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত যে, তিনি প্রথম জামরায় সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সাথে তাকবির বলতেন। তারপর সামনে অগ্রসর হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কেবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত তুলে দোয়া করতেন। অতঃপর মধ্যবর্তী জামরায় কঙ্কর মারতেন এবং একটু বাঁ দিকে চলে সমতল ভূমিতে এসে কেবলামুখী দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে দোয়া করতেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। এরপর বাতন ওয়াদী হতে জামরায়ে আকাবায় কঙ্কর মারতেন। এর কাছে তিনি বিলম্ব না করে ফিরে আসতেন এবং বলতেন, আমি নবী (স.)-কে এরূপ করতে দেখেছি। (বুখারি: ১৭৫১) হজের সময় যেসব দোয়া সুন্নত
ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হজ ছিল ছয়টি স্থানে বিশেষভাবে দোয়ায় পূর্ণ। প্রথম সাফায়, দ্বিতীয় মারওয়ায়, তৃতীয় আরাফায়, চতুর্থ মুজদালিফায়, পঞ্চম প্রথম জামরায় এবং ষষ্ঠ দ্বিতীয় জামরায়।’ (জাদুল মাআদ: ২/২৬৩) আরাফার দিনের দোয়া
মুলতাজাম দোয়া কবুলের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) থেকে কাবা শরিফের দরজা পর্যন্ত জায়গাটুকুকে মুলতাজাম বলে। আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি ইবনে উমর (রা.)-এর সঙ্গে হজে ছিলাম। ইবনে উমর (রা.) হাজরে আসওয়াদ ও কাবা শরিফের দরজার মাঝের দেওয়ালের নিকট দাঁড়ালেন। নিজের বুক, দুই হাত ও কপাল লাগিয়ে রাখলেন এবং বললেন- রাসুলকে (স.) আমি এভাবেই করতে দেখেছি।’ (ইবনে মাজা: ২৯৬২)
বিশেষভাবে আরাফার দিনের দোয়া সম্পর্কে আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আরাফার দিনের চেয়ে উত্তম এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ সবচেয়ে বেশি বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন; নিশ্চয়ই তিনি নিকটবর্তী হন; অতঃপর আরাফাবাসীকে নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গৌরব করে বলেন, এরা কি চায়?’ (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮) মুলতাজামের কাছে দোয়া, কঙ্কর নিক্ষেপের সময় দোয়া
আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে আরাফার দিনের দোয়া..।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৮৫)
জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘(আরাফার দিন) আল্লাহ তাআলা নিকটতম আসমানে আসেন এবং পৃথিবীবাসীকে নিয়ে আসামানের অধিবাসী অর্থাৎ ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন। বলেন, দেখো, আমার বান্দারা উষ্কখুষ্ক চুলে, ধুলামলিন বদনে, রোদে পুড়ে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে সমবেত হয়েছে। তারা আমার রহমতের প্রত্যাশী। অথচ তারা আমার আজাব দেখেনি। ফলে আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত বেশি পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩৮৫৩) বিদায়ী তাওয়াফের পর দোয়া, মুজদালিফায় দোয়া
হজের সব কর্ম শেষ করে দেশে ফেরার আগে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়। তাওয়াফ শেষে আপনি মুলতাজামের কাছে চলে যাবেন। মুলতাজামে চেহারা, বুক, দুই বাহু ও দুই হাত রেখে দোয়া করবেন। এটিই আপনার শেষ সুযোগ। আল্লাহর কাছে যা খুশি আপনি চাইতে পারেন। হাদিসে এসেছে, ‘ইবনে উমর (রা.) হাজরে আসওয়াদ ও কাবা শরিফের দরজার মাঝের দেওয়ালের নিকট দাঁড়ালেন। নিজের বুক, দুই হাত ও কপাল লাগিয়ে রাখলেন এবং বললেন- রাসুলকে (স.) আমি এভাবেই করতে দেখেছি।’ (ইবনে মাজা: ২৯৬২) হজে দোয়া কবুলের স্থান, হজের সময় মক্কার যেসব স্থানে দোয়া
উল্লেখ্য, ইসলামে দোয়া বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহর মুখাপেক্ষিতা ও অনুনয়-বিনয় প্রকাশের মাধ্যম হলো দোয়া। রাসুলুল্লাহ (স.) দোয়াকেই সর্বোচ্চ ইবাদত হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (তিরমিজি: ২৯৬৯) তিনি আরো বলেন, ‘দোয়ার চেয়ে বেশি প্রিয় আল্লাহর কাছে অন্য কিছু নেই।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৮৭০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজের মৌসুমে বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুন। যারা হজের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কায় পৌঁছেছেন তাদেরকে নবীজির অনুসরণে বিশেষ স্থানগুলোতে এবং বিশেষ সময়ে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।