images

প্রবাস

একটি পথের আত্মকথা

প্রবাস ডেস্ক

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:০৩ পিএম

শ্রীহট্ট নামটির সাথে কেমন যেন এক মায়াভরা আকুতি আছে। কেউবা সিলেট, কেউবা জালালাবাদ নামে যে অঞ্চলটিকে চেনেন, হাওর-পাহাড় মিলিয়ে বিধাতা তাকে অপরূপ সাজে সাজিয়েছেন। প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যে ভরপুর, বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ রঘুনন্দন, পাহাড়ের উঁচু-নিচু ভূমিতে সবুজ শ্যামল চা বাগান যেন এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তার অসামান্য ভালোবাসার প্রতিদান। মৎস্য আর কৃষি সম্পদে সমৃদ্ধ হাওরাঞ্চলের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যেকোনো পরিব্রাজকের মনেই প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। এতসবের মাঝেই রঘুনন্দনের কোল ঘেষে আমার জন্ম।

বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীনতার ডাক দিলেন, তখন আমি শিশু। স্বাধীনতা পূর্বকালে শোষক সরকারের আমলে আমার যাত্রা শুরু। বৃহত্তর সিলেটের প্রবেশদ্বার মাধবপুর উপজেলার উত্তরাঞ্চলের দুটি ইউনিয়নে আমার অবস্থান। শুরুতে লোকে আমায় গুণু মিয়া সড়ক বলে ডাকতো। গুণু মিয়া ছিলেন গঞ্জের বড় কর্তার অফিসের বড় কেরানি। লোকে কেরানি সাহেব নামে চিনতেন। কেরানি সাহেব যে এলাকার অধিবাসী ছিলেন, সেই সময়ে ওই এলাকাটি ভাটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল। কোনো পথ-ঘাট ছিল না। বর্ষাকালে নৌকা আর শীত মৌসুমে পায়ে হাঁটার কোনো বিকল্প ছিল না।

রঘুনন্দনের পাদদেশে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রাম। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা বলে ভাটির মানুষ এটিকে মোড়াপাড়া বলে ডাকতো। সেই মোড়াপাড়ায় ছিল ছাতিয়াইন রেলওয়ে স্টেশন। সেই যুগে রেলপথই ছিল যোগাযোগের উন্নত মাধ্যম। স্টেশন পার হলেই রঘুনন্দন পাহাড়। ভাটি বাংলার মানুষের গ্রামীণ অর্থনীতির এক বড় নিয়ামক ছিল পাহাড়ের গহীন জঙ্গল। ব্যতিক্রম বাদে গ্রাম বাংলার সব বসত বাড়ি ছিল ছন বাঁশের তৈরি। পাহাড়ের টিলায় টিলায় ছিল ছন বাঁশের মহাল। সেই মহালের চন বাঁশ আর জ্বালানি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো ভাটি অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ। রঘুনন্দন, রেলপথ আর সড়কপথের সুবিধাভোগী হওয়াতে ভাটি অঞ্চলের লোকেরা মোড়াপাড়ার মানুষকে ভাগ্যবান মনে করতো।

মোড়াপাড়া বা রতনপুর থেকে কেরানি সাহেবের বাড়ি আনুমানিক চার কিলোমিটারের পথ। এই চার কিলোমিটারের পুরোটাই ছিল ফসলের মাঠ। জমির আইল ঘুরে, শুষ্ক মৌসুমে পথিকের ইচ্ছায় তৈরি হতো পথ। বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছিল একমাত্র বাহন। দাসপাড়া, শ্রীমতপুর, গোপীনাথপুর, এক্তিয়ারপুর মিলিয়ে কয়েক হাজার পরিবারের বসবাস ছিল এ অঞ্চলে। গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল হাতে গোণা কয়েকটি পরিবারের, বাদবাকি সবাই ছিলেন শ্রমজীবী। বছরের অধিকাংশ সময় রঘুনন্দন পাহাড় ঘিরেই আবর্তিত হতো তাদের জীবন-জীবিকা। বর্ষা মৌসুমে নিজেদের নৌকা না থাকায় সম্পদশালীদের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর করতে হতো।

কাঁদা, পানি মিশিয়ে জীবন চলার পথটি ছিল বড়ই দুর্বিষহ। গঞ্জের বড় কর্তার আশেপাশে থাকায় সুযোগ বুঝে কেরানি সাহেব একদিন বড় কর্তার সাহায্য চাইলেন। কর্তার পরামর্শ মতো গ্রামীণ মাতবর সাহেবদের সাথে আলোচনা শুরু হলো। সকলের স্বতঃসিদ্ধ ইচ্ছায় চার কিলোমিটারের একটি পায়ে চলা পথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলো। একপাশে খাল তৈরি হবে, আর খালের মাটি দিয়ে তৈরি হবে পথ। প্রশাসনিক আর দলিল দস্তাবেদের দায়িত্ব নিলেন কেরানি সাহেব। বড় কর্তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কিছু খরচাপাতিও জোগাড় করলেন। সেই থেকে আমার যাত্রা শুরু। এক পাশে খাল তৈরি করে, খালের মাটি দিয়ে সমতল ভূমিতে দুই ফুটের মতো উঁচু করে তৈরি হলো পথ।

বর্ষাকালে অথৈ জলে আমি ডুবে যেতাম। বানের পানিতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে কোথাও কোথাও আমার অস্তিত্ব হারিয়ে যেত। শুষ্ক মৌসুমে কিছু মানুষ আমার পরিচর্যা করতো। খালের মাটি দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে আমাকে পূর্বরূপে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা হতো, তবে অতি বর্ষণ সবসময় আমাকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিতো। ইউনিয়ন বোর্ডের কেউ আমার দিকে ফিরে তাকাতো না। গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া মানুষেরা ছন, বাঁশ নিয়ে যখন আমার উপর দিয়ে হেঁটে যেত, কাঁদা পানিতে তাদের আঁটকে যাওয়ার দৃশ্য দেখে কষ্টে আমার বুকটা ভারী হয়ে উঠতো। ভাটির মানুষ উজানে না আসলে, তাদের জীবন জীবিকা চলে না। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক সবাই সকাল-সন্ধ্যা আমার উপর দিয়ে হেঁটে যায়। তাদের কষ্ট দেখে আমার বুকে আর্তনাদ শুরু হতো। ছাত্তার মেম্বার, কালা মেম্বার, জাফর আলী সরদার, আবু শ্যামাসহ এলাকার মুরুব্বিরা আমার সেবার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে ধর্ণা দিতো। অদৃশ্য কারণে সরকারি দায়িত্বে নিয়োজিত কেউ আমার দিকে ফিরে তাকাতো না। যোগাযোগের অব্যবস্থার কারণে উজানের মানুষ, ভাটির গ্রামে আত্নীয়তার সম্মন্ধও ফিরিয়ে দিতো।

পঁচাত্তরে বিয়োগান্তক ঘটনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শাহাদাত বরণ করেন। উর্দি শাসকের সময়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ আমার প্রতি একটু সদয় হলেন। খাল খনন কর্মসূচির আওতায় নাম পরিবর্তনের শর্তে কিছু উন্নয়নের প্রস্তাব এলো। আমার যারা দেখভাল করতেন, সকাল সন্ধ্যা আমি যাদের সেবা করতাম, উন্নয়নের স্বপ্নে সবাই মিলে আমার নামটা বদলে দিলেন। রতনপুর-দাসপাড়া সড়ক নামে আমার নবযাত্রা শুরু হলেও, লোকদেখানো খাল খননের মধ্য দিয়ে আমার বেহাল দশার কোন উন্নতি হয়নি। হাজারো পরিবারের দু:খ কষ্ট লাগবে আমার অপারগতা যেন স্থায়ী রুপ নিল।

১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোট কে সামনে রেখে আমাকে নিয়ে অনেকেই নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ভাটির গ্রামের মানুষগুলোর মন জয় করতে, এলাকার বড় বড় নেতারা তখন আমার উপর দিয়ে হেঁটে যায়। গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন করলেও সবার দাবি ছিল একটাই, আমার উন্নয়ন। এভাবে রতনপুর-দাসপাড়া রাস্তার উন্নয়ন, এলাকার একক দাবিতে পরিনত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন মুক্তি যুদ্ধের সংগঠক মাওলানা আসাদ আলী, বিএনপি থেকে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন কাজী কবির উদ্দিন আর স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। নিজ নিজ কর্মী সমর্থকদের কাছে সবার একই প্রতিশ্রুতি, পাশ করলে আমার চেহারা বদলে দিবেন। পায়ে হাঁটা পথকে রিক্সা, ভ্যান আর টেক্সি চলাচলের উপযোগী করবেন। এমন প্রতিশ্রুতির কথা শুনে আমি আনন্দে উদ্বেলিত হই!


৭৯'র ভোটে তালা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার এমপি হলেন। ক্ষমতাসীন দল বিএনপিতে যোগ দিলেন। অর্থ বিত্তে প্রভাবশালী মানুষ সরকারি দলে যোগ দিয়ে আরও ক্ষমতাশালী হলেন। বিএনপির বিদায়ে এরশাদের নতুন জমানা শুরু হয়। জাতীয় পার্টির সরকার দেশ চালায় নয় বছর। দল বদলের মাধ্যমে সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার আরও প্রভাবশালী হন। ৮৬, ৮৮ সালেও এমপি হন। ভাটির মানুষের কাছে আবারও একই প্রতিশ্রুতি দিলেন, ক্ষমতায় গেলে আমার চেহারা বদলে দিবেন!! ভাটির দুঃখ রতনপুর-দাসপাড়া রাস্তার উন্নয়ন করবেন। প্রভাবশালী এমপি থেকে সংসদের হুইপ হলেন, প্রতিমন্ত্রী হলেন। একনাগাড়ে নয় বছর ক্ষমতায় ছিলেন, একবারও আমাকে নিয়ে ভাবলেন না। অতি বৃষ্টি আর ঝড় বন্যায় আমি আরও বিপর্যস্ত হলাম।

তীব্র গন আন্দোলনে এরশাদের পতন হয়। ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এমপি হলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা এনামুল হক মোস্তফা শহীদ। এলাকার সন্তান মাহমুদ হাসান দীপুর সঙ্গে উনার বেশ সদ্ভাব। অবহেলিত অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার আশায় বুক বাঁধলেন। সবার সংগে আমিও ভাবলাম, এবার কিছু একটা হবে। না, সব আশায় গুড়ে বালি! বিনয়ী রাজনীতিবিদ এনামুল হক মোস্তফা শহীদের বক্তব্য, 'বিরোধী দলের এমপিদের কথা প্রশাসন শুনে না'। পাঁচ বছর অপেক্ষা করে এবারও আমার কিছু হয়নি। আমি যেমন ছিলাম, আরও বিপর্যস্ত দীনহীন হলাম।

৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচন। আবারও ভোট চাইতে মাঠে নামেন নেতারা। এলাকাবাসীর একই দাবি, আমার উন্নয়ন। এনামুল হক মোস্তফা শহীদ আবারও এমপি হলেন। এবার সরকারি দলের এমপি হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হলেন। পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, আমার কিছু হলো না। এবারের সুর ভিন্ন, 'এমপিদের ক্ষমতা সীমিত'। ২০০৮ সালে আবারও তিনি এমপি হলেন। এবার বঙ্গভবনের রাজ দরবারে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। খুশিতে মনটা ভরে গেল। এবার কিছু একটা হবেই!! মন্ত্রী হয়ে একদিন হাইওয়ে ওভার ব্রিজ উদ্বোধন করতে এলাকায় আসলেন। সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন সহ শত শত শত মানুষের উপস্থিতিতে ছাতিয়াইনের চেয়ারম্যান খাইরুল হোসেইন মনু আমার ভাগ্য পরিবর্তনের জোড় দাবি জানালেন। ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলেশনসহ আবেদন পত্র মন্ত্রীর হাতে তুলে দিলেন। বিজ্ঞ রাজনীতিক জনপ্রিয় নেতা মন্ত্রী মহোদয় কথা দিলেন, তিন মাসের মধ্যেই এলজিইডির প্রকল্পে উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। আমার মনে খুশির ঝলক বয়ে গেল।

মাস যায়, বছর যায়, এলজিইডির দেখা নাই। মন্ত্রী মহোদয় ভীষণ ব্যস্ত, আমাকে ভুলেই গেলেন। এলাকার সন্তান মাহমুদ হাসান দীপু তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান অসীম চৌধুরীকে ফোন দিলেন। ক্ষোভ বিক্ষোভ নিয়ে সবকিছু বর্ণনা করলেন। তরুণ নেতা অসীম চৌধুরী কথা দিলেন, সাধ্যমতো কিছু একটা করবেন। অসীম চৌধুরী কথা রাখলেন। বিভিন্ন প্রকল্প থেকে এলজিএসপি'র বরাদ্দ কাটছাট করে কিছু টাকা আমার উন্নয়নে বরাদ্দ দিলেন। আমার চাহিদার তুলনায় তা যৎসামান্য হলেও পঞ্চাশ বছরে কেউ একজন কথা রেখেছে, সেই আনন্দে আমি আবারও উদ্বেলিত হলাম।

এলজিএসপি'র বরাদ্দে আমার বুকের খানাখন্দ ভরাট হলেও রিক্সা, টেক্সি চলা তো দুরের কথা, অল্প বানেই আমি ডুবে যাই। তবুও অহর্নিশ অসীম চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। এভাবেই চলে আসে ২০১৪, মাওলানা আসাদ আলীর সুযোগ্য সন্তান এডভোকেট মাহবুব আলী সংসদ নির্বাচনের মনস্থির করলেন। নতুন প্রত্যাশা তৈরি হলো। আমার সেবার জন্য যুগ যুগ ধরে যে মানুষটি সুযোগ পেলেই নেতাদের দুয়ারে ধর্ণা দেয়, তাঁর অতি সুহৃদ আর আপনজন এডভোকেট মাহবুব আলী ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা রহম আলী। নির্বাচন নিয়ে প্রায়শই প্রবাসী মাহমুদ হাসান দীপুর সংগে তাদের কথা হয়। জল্পনা, পরিকল্পনা কোন কিছুই বাদ যায় না। এবার আমার কিছু না হয়ে উপায় নেই। এলাকাবাসীও আশায় বুক বাধলেন।

সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের সন্তান শিল্পপতি সৈয়দ তানভিরকে হারিয়ে, এমপি হলেন এডভোকেট মাহবুব আলী। প্রবাস থেকে বিজয় শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মাহমুদ হাসান আমার প্রসঙ্গ টেনে আনলেন। অতীতে কিভাবে এমপি, মন্ত্রী হয়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেন, সবকিছুই স্ববিস্তারে বর্ণণা করলেন। সবশুনে নব নির্বাচিত এমপি মহোদয় কথা দিলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের শুরুতেই আমাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রহম আলী সাহেব আগ বাড়িয়ে বললেন, মাধবপুর- চুনারুঘাটের সর্ব প্রথম এলজিইডির উন্নয়ন প্রকল্প হবে রতনপুর-দাসপাড়া রাস্তা। এতো আনন্দ, এতো সুখ কি আর চেপে রাখা যায়!! এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হলো, মাহবুব সাহেব কথা দিয়েছেন, অচিরেই আমার বুকে ইট পাথরের খেলা শুরু হবে। এলাকাবাসী দিন গুনে, মাঝেমধ্যে কানাডায় ফোন করে তাদের আশা আকাঙ্ক্ষার খোঁজ খবর নেয়।

মাস যায়, বছর যায়। এলজিইডির দেখা নেই। রহম আলী সাহেব বলেন, নতুন এমপি, সবকিছু বুঝতে একটু সময় লাগছে। এমপি সাহেবের এক মেয়াদ প্রায় শেষের পথে, আমার বুকে আলো জ্বলার কোন লক্ষণ নেই। অতি স্বজ্জন মানুষ মাহবুব আলী, নিশ্চয় একটা কিছু করবেন। এরি মাঝে একদিন এমপি মহোদয়ের অতি বিশ্বস্থ মানুষটি খবর দিলেন, ডিও হয়েছে, আগামী মাসে টেন্ডার হবে। কানাডা থেকে বাতাসের বেগে খবরটি এলাকায় চাউর হয়ে যায়। মাস, বছর যেতে যেতে চলে আসে ২০১৮ সালের নির্বাচন। আবারও এমপি হলেন এডভোকেট মাহবুব আলী, সরকারে যায় আওয়ামী লীগ। সাদাসিধা রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ, দু'টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন। আমার চোখে জলধারা একই ভাবেই বয়ে চলে। আমাকে আর কেউ প্রবোদ দেয় না। শোকে, দুঃখে আমি এখন নির্বিকার। আমি বয়েও চলেছি, ক্ষয়েও চলেছি। এভাবেই বৃষ্টি বন্যায় ভেসে, একদিন হয়তো আমার অস্তিত্বটি বিলীন হয়ে যাবে। এখন তো ভোটের বালাই নেই, তাই দায়বদ্ধতা প্রশ্নাতীত! আমি এখন ষাটের দশকে। তবুও যতদিন বয়ে চলি, হ্রদয় দিয়ে প্রার্থনা করবো, কোন একদিন কারো সুদৃষ্টি আমাকে বদলে দেবে। ইট, পাথরের সমন্বয়ে পিচঢালা পথে রাখাল মনে বাউলের সুর বেজে উঠবে। সেই সুদিনের অপেক্ষায় আমি বয়ে চলবো আজীবন!! 

লেখক: কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক
সাধারণ সম্পাদক, আলবার্টা রাইটার্স ফোরাম।