জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৪ জুন ২০২৫, ০১:৩০ পিএম
ব্রুনাইয়ের শ্রমবাজার নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সরকারের বৈধ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে একটি চক্র। সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ব্রুনাই রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর নামে কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
তবে এসব অভিযোগের পক্ষে তারা কোনো তথ্য, নথি কিংবা প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। এমনকি সাংবাদিকদের প্রশ্নের সঠিক উত্তরও দিতে ব্যর্থ হন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি ইকরাম চৌধুরী। তার দাবি, আগের সরকার ব্রুনাইয়ের সঙ্গে যে জিটুজি (সরকার-থেকে-সরকার) ভিত্তিক চুক্তি করেছে, তা একতরফা ও স্বৈরাচারী। এর ফলে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী পাঠানোর সুযোগ হারিয়েছে।
তার অভিযোগ, সরকারি প্রতিষ্ঠান বোয়েসল একদিকে সরকারি ফি হিসেবে ৪০ হাজার টাকা দাবি করলেও, গোপনে ৪-৫ লাখ টাকা করে আদায় করছে। সেইসঙ্গে বলা হয়, গত এক বছরে মাত্র ৯০০ কর্মী পাঠানো হয়েছে এবং তাদের অনেকে ব্রুনাইয়ে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন।
যদিও এসব দাবির পক্ষে ইকরাম চৌধুরী কোনো লিখিত তথ্য, সাক্ষ্য বা ভুক্তভোগীর পরিচয় দিতে পারেননি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বোয়েসলের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শওকত আলী বলেন, প্রমাণ ছাড়া যে কেউ অভিযোগ করতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই আলাদা। আমরা কোনো দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে টাকা নেই না। সব টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে জমা হয়। নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি জানান, দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য সার্ভিস চার্জ ৫৬ হাজার ৩৫০ টাকা, আধা দক্ষদের জন্য ৪৪ হাজার ৪০০ টাকার একটু বেশি, আর অদক্ষদের জন্য ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবই অফিসিয়াল ভাউচারের মাধ্যমে আদায় হয়।
বোয়েসল জানিয়েছে, প্রার্থী বাছাই সম্পূর্ণভাবে ব্রুনাইয়ের নিয়োগদাতা কোম্পানির হাতে। তারা সরাসরি বা অনলাইনে ইন্টারভিউ নিয়ে নিজে থেকে কর্মী নির্বাচন করে। এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাব বা হস্তক্ষেপ থাকে না। ফলে নিচুভাবে ‘আন্ডার টেবিল’ লেনদেনের সুযোগও থাকে না।
জানা গেছে, বোয়েসলের আগে যখন বেসরকারিভাবে ব্রুনাইয়ে কর্মী পাঠানো হতো, তখন বিভিন্ন এজেন্সি ৩-৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়ম লঙ্ঘন হতো। ফলে প্রবাসীরা গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তেন। সেই কারণে ব্রুনাই সরকার পরে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করে ২০২৪ সাল থেকে সীমিত সংখ্যক কর্মী নিতে শুরু করে।
বোয়েসলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকারের নির্ধারিত নীতিমালা ও ফি অনুসরণ করেই পুরো প্রক্রিয়া চলছে। অথচ একটি চক্র পুরনো অনিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে আবারও বাজার দখলের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ ছাড়া এমন সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্যই হলো ব্রুনাই শ্রমবাজারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো।
এমআইকে/এইউ