images

প্রবাস / শিল্প ও সাহিত্য

আমার মনের মধ্যিখানে

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম

আমার দরকারে আমি নিজে কী করতে পারি এবং
তোমাকে কখন এবং কেন আমার প্রয়োজন, এটাই আমার মনের মধ্যিখানে কিলবিল করছে।
সেদিন হয়েছে আজ তা বহুদিন, এসেছিল এক তরুণী আমার কাছে, পরামর্শ নিতে।
করবে না সে জীবনে বিয়ে দরকার নেই তার স্বামীর তবে সে থাকতে চায় আজীবন ভরে আমার জীবনসঙ্গিনী হয়ে।
বলেছিল সে কথার ছলে, আমি শিক্ষিত, আমি সুন্দরী, আমি স্বনির্ভর, আমি স্বাধীন, আমি আত্মনির্ভরশীল।
আমি কেন করিব তোমারে অকারণে বিয়ে এবং হয়ে থাকতে আজীবন শুধু পরাধীন স্ত্রী হয়ে?
আমার স্বামীর কোনো প্রয়োজন নেই।
অথচ আমার বাবা-মাও আমাকে বিয়ে করার জন্য জোর করছেন।
কী করি বলো তো?
বলেছিলাম আমি তাকে তোমার কথায় বেশ যুক্তি আছে এবং যা বলছো আমাকে সবই সত্য তবে ভেবে দেখো কিছুক্ষণ, কী করবে পড়িলে ঝামেলায় যদি আসে এমন একটি ক্ষণ?
আরও বলেছিলাম তাকে আমি;
তুমি নিঃসন্দেহে জীবনে উন্নতি করবে। তবে মনে রাখতে হবে কিছু কথা, যেমন জীবন চলার পথে সব কিছু তোমার ইচ্ছে মতো হবে না বা তোমার ইচ্ছে মতো চলবে না। তোমারও নিজের ভুল-ভ্রান্তি হবে, হিসাব নিকাশে গন্ডগোল হবে। ভুল সিদ্ধান্তের জন্য পূর্বপরিকল্পিত পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যাবে, মাথা গরম হবে, ঠিক তখন তুমি কাকে দোষারোপ করবে, নিজেকে?
তরুণী উত্তরে বলেছিল, কখনও না।
আমি তখন মৃদু হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে, তার মুখের ওপর আমার হাতটি বুলিয়ে বলেছিলাম, ওরে পাগলি, এই জন্যই তো তোমার আমার মতো একজন স্বামীর প্রয়োজন।
শুনিয়া মেয়েটি বলেছিল মোরে, যদি বিয়ে আমি করি তোমারে তাহলে কী কোনো ঝামেলা হবে না আমার জীবনে?
এ কথা শুনে পড়েছিলাম আমি মহা এক বিপদে!

বড়লোক এবং ক্ষমতাশীল মেয়ে করিবে ডাকাতি, করিবে দুর্নীতি, ধরিবে আমার সুখ।
বলিলে কিছু তখন তাকে, কহিবে তখন ভালোবাসি তোকে, বন্ধ করিবে মুখ।
যদি কখনও লড়াই করি, প্রতিবাদ করি অন্যায়ের,
ধরিবে তখন আমার গলা, বলিবে এখন চুপ।
বলিবে মোরে শোন, করবি যদি বিশৃঙ্খলা, বদ্ধ করিব মুখ।
যখনই চাইব আইনের আশ্রয়, বলিবে সবাই আমি স্বাধীনতা ধরে রাখার উপযুক্ত নই।
কেহ শুনিবে না আমার কথা, ভাবিবে আমি এক ভন্ড, সেই ভালো, বরং থাকি চুপচাপ নইলে ঘটিবে কান্ড।
ক্ষমা করা পরম ধর্ম, একথা কখনও সঠিক নয়।
কারণ ক্ষমা করা মানে এক ধরনের আস্কারা দেওয়া। এতে অপরাধীর অপরাধ করার ক্ষমতা দিনে দিনে আরো বৃদ্ধি পায়, শেষে সে সারাজীবন অপরাধই করে।

এমন সময় মনে মনে আমি ভাবিতে শুরু করি।
জীবনের সব পরীক্ষা শুধু যোগ্যতা দিয়ে পাশ করা যায় না, হঠাৎ বুদ্ধিরও দরকার হয়।
যদি তুমি খারাপ পরিস্থিতিতেও হাসতে পারো, তবে দেখবে তুমি জিতে গেছো।
যদি যন্ত্রণা দেখে পালিয়ে যাও, দেখবে একদিন সেই যন্ত্রণায় তোমার জীবনের বড় শত্রু হয়ে তোমার ঘাড়ে বসেছে।
আমার জীবনের একটি বড় অভিজ্ঞতা সেটা হলো, যে তোমাকে একবার সত্যিকারে ভালোবাসবে, সে কখনও ছেড়ে যাবে না।
যদিও হাজার কারণ তাড়া করবে সরে যেতে, তারপরও কোনো একটা অজুহাত খুঁজে বের করবে ধরে রাখতে। তবে যে বা যারা পঞ্চাশ বছরেও মুক্তির স্বাদ পায়নি, তারা তো মুক্তির মর্মই ভুলে গেছে, তাদেরকে কীভাবে বোঝানো যাবে মুক্তি কী জিনিস?

অনেকের ধারণা অতীত মুছে ফেলার শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে স্থান পাল্টানো, কথাটি সত্য নয়। আমি বাংলাদেশ ছেড়ে সুইডেনে চল্লিশ বছর, তারপরও অতীত মুছে ফেলতে পারিনি। আবার যেমন, আমিও মাঝে মধ্যে কৃপণ হই, তার মানে এই নয় অর্থ আমাকে পিশাচ করেছে, বরং সেই সঞ্চিত অর্থ আমাকে অনেক সময় মহৎ করে তুলেছে।
আমার লেখা প্রতিটি সাধারণ শব্দ, প্রতিটি ছোট্ট ভালোবাসার কথা, প্রতিটি দয়া এবং মায়া জীবনের এক অপূর্ব — reflection of the beauty of my heart and soul, যেন আমার মন যেখানে হৃদয় সেখানে।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com