জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
১৪ জুন ২০২৩, ০৩:৩৫ পিএম
একাধিকবার নানা শারীরিক জটিলতায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। আবার সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। তবে সোমবার (১২ জুন) দিবাগত রাতে হঠাৎ অসুস্থ হওয়ার পর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার পরে চিকিৎসা কেমন চলছে, শারীরিকভাবে কেমন আছেন তা নিয়ে অনেকটা ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে ভর্তির পর এরআগে অনেকটা নিয়মিত তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল টিমের কোনো না কোনো সদস্য গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে সবশেষ তথ্য জানাতেন। তবে এবার সেখানেও কিছুটা বিপত্তি ঘটেছে। এমন কি বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্যদেরও পরিস্থিতি জানতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নানামুখী চেষ্টার পর পর অবশ্য বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে।
এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, চেয়ারপারসন মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে আছেন। বোর্ডের সদস্যরা সার্বক্ষণিকভাবে উনার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রয়োজনীয় যেসব চিকিৎসা দরকার হচ্ছে, সেটা উনারা ব্যবস্থা করছেন টাইম-টু-টাইম উনার শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। উনার শারীরিক অবস্থা ভর্তি যেদিন হয়েছেন, ওই দিনের মতো এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল আছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেখেন এবং তার বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন।
বুধবার বিকেলে আবারও মেডিকেল বোর্ড বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।
এরআগে মঙ্গলবার রাজধানীতে এক কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার অন্যায়ভাবে কারাবন্দি করে রেখেছে। এখনো বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
জানা গেছে, মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকে সভায় লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান ও দেশের বাইরের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও অংশ নিয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমানের সহধর্মিণী শর্মিলা রহমান সিঁথি সার্বক্ষণিক ম্যাডামের স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখছেন বলে জানান অধ্যাপক জাহিদ।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই বছরের অক্টোবরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।
পরে অসুস্থতার কারণে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করেন ছয় মাসের জন্য। ওই বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গুলশানে তার বাড়িতে রয়েছেন। প্রতি ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে পরিবারের আবেদনে।
মাঝে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে অনেকদিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা।
সবশেষ গত ২৯ এপ্রিল নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। পাঁচ দিন পর তিনি মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে বাসায় ফেরেন।
বিইউ/এএস