মো. ইলিয়াস
১২ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:০০ এএম
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে, ১২ জুন খুলনা ও বরিশালে এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোট। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন হবে।
এ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই বলেই জানিয়ে আসছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকেই স্থানীয় সরকার ও জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন বর্জন করে আসছে। এখন জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলে দল প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তৃণমূলসহ দেশের মানুষের কাছেও আস্থা হারাতে হবে। শুধু তাই নয়, ‘শেষ পর্যন্ত বিএনপির সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে’- এমন ভুল বার্তা যাবে নেতাকর্মী ও জনগণের কাছে।
এই ৫ সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বিএনপি। তবে গত সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিটি নির্বাচনে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এবার জনগণ সরকারের কোনো ট্র্যাপে পা দেবে না। বিএনপি কোনো ট্র্যাপে পা দেবে না। আমাদের সরাসরি বক্তব্য, আমরা কোনো ট্র্যাপে যাচ্ছি না। তাদের ট্র্যাপকে উল্টে (সরকার) ফেলে দেব।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আন্দোলন একটাই। এই সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচন তো অনেক আগেই বাদ দিয়েছি।
কিন্তু সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলের এমন অবস্থানের কথা জানার পরও আগ্রহী নেতাদের দৌড়ঝাঁপ থামাতে পারছে না বিএনপি। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, দলের নেতাকর্মীদের এই পাঁচ সিটির নির্বাচনে অংশ নেওয়া ঠেকাতে পারবে তো বিএনপি?
সূত্র বলছে, বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে না চাইলেও দলের অনেক নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন। বিএনপি অংশ না নিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন অনেকেই। কেউ কেউ বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে সরাসরি কিংবা বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন। যদিও দল থেকে তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তত এক ডজন প্রার্থী পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য তোড়জোড় চালাচ্ছেন। এছাড়া কয়েকশ নেতা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য লবিং করছেন। তবে দলের সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় প্রকাশ্যে মাঠে নামছেন না।
সূত্র বলছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এখন লন্ডনে। সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার জন্যই গত সপ্তাহে লন্ডনে গেছেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, বিএনপির আগের যে সিদ্ধান্ত ছিল বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয়সহ স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ব্যাপারে, এখনো সেই সিদ্ধান্তই রয়েছে। দলের এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে যদি কেউ নির্বাচনে যান, তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগেও নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। যদিও নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হন দুই প্রভাবশালী নেতা তৈমুর আলম খন্দকার ও মনিরুল হক সাক্কু।
এদিকে সরকারি নানা প্রলোভনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ যাতে মেয়র প্রার্থী হতে না পারেন, তা নিয়ে সতর্ক বিএনপির হাইকমান্ড। হতাশ ও ক্ষুব্ধদের দলে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দলবিরোধী চক্রান্তে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিএনপির প্রত্যাশা, সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলন শুরুর মুহূর্তে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে যাবে না।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পাঁচ সিটির মধ্যে কেবল সিলেটে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী জয়ী হয়েছিলেন। তখন গাজীপুরে হাসান উদ্দিন সরকার, খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু, রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং বরিশালে মজিবর রহমান সরোয়ার বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। অবশ্য এর আগে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটির সবকটিতেই মেয়র পদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন।
জানতে চাইলে গত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ঢাকা মেইলকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। স্থানীয় ও জাতীয় সব জায়গাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করা বিএনপির পক্ষে ঠিক হবে না। পার্টির সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সব নির্বাচনে কারচুপি হচ্ছে। জনগণ যেখানে ভোট দিতে পারছে না সেখানে নির্বাচনে গিয়ে কি লাভ।
গত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন হাসান উদ্দিন সরকার। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল যদি নির্বাচন করে তাহলে সবাই নির্বাচন করবে। দল যদি নির্বাচন না করে তাহলে আমরা দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।
এমই/জেএম