বোরহান উদ্দিন
০১ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:৪৩ পিএম
ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে ঘুরতে আবার এলো নতুন বছর। দেশের রাজনীতি নতুন বছরে নতুন মোড় নেবে এবং উত্তাপ বাড়বে- এটা অনেকটা অনুমেয়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির ভাবনায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করা। অন্যদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন থেকে এক চুলও সরে আসার লক্ষণ নেই আওয়ামী লীগের। এমন অবস্থায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ অন্যান্য দাবি আদায়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বিএনপিকে।
বিএনপি নেতারাও তাই মনে করছেন। রাজনীতি সচেতনরাও বলছেন, দাবি আদায় করতে হলে বিএনপিকে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সে জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করা এবং মামলা-মোকাদ্দমা সামলে এগিয়ে যাওয়া ততটা সহজ হবে না। বিশেষ করে শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার ও মামলার ভার সামাল দেয়া কঠিন হবে বিএনপির জন্য। কারণ গত কয়েকদিনে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলাও সচল হয়েছে।
অন্যদিকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে সতর্ক অবস্থানে থাকার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে তারা বিএনপির বড় কর্মসূচি ঘিরে সারাদেশেই মাঠে থাকছে। ফলে সংঘাতেরও আশঙ্কা আছে।
অবশ্য নেতাকর্মীরা বলছেন, আসছে বছর তাদের জন্য ‘ডু অর ডাই’ বছর। যে কোনোভাবে মাঠে টিকে থাকতে চাইবেন তারা। তবে শীর্ষ নেতারা বলছেন, শঙ্কার কথা মাথায় রেখেই আগামীর কর্মপরিকল্পনা সাজাতে চান তারা। সতর্কভাবে পা ফেলার পক্ষে বিএনপির হাইকমান্ড।
অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাওয়ার গুঞ্জন আছে। তাই এই অংশকে সামলে রাখা, অন্য নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির যে সূচনা হয়েছে তা চলমান রাখাও কঠিন হবে বলে আলোচনা আছে। কারণ ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে কাছে টানতে টোপ দিতে পারে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সাক্ষাৎ-পরবর্তী বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির একজন মধ্যম সারির নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, এতদিন ধরে একভাবে কথা বললেও কয়েকদিন ধরে কাদের সিদ্দিকী যে ভাষায় কথা বলছেন তাতে বোঝা যায় কি হতে পারে। সরকার ছোট দলকে কাছে টানবেই। কিন্তু লোভ সামলানো বড় কঠিন।
কী বলছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা?
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, যতই চ্যালেঞ্জ আসুক বিরোধী সব দলকে সঙ্গে নিয়ে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত সফলতায় নিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প তাদের হাতে নেই। আন্দোলন দমাতে সরকার আরও কঠোর হবে- এটা ধরে নিয়েই তারা এগোতে চান। কারণ এবার ব্যর্থ হলে নেতাকর্মীদের চরম মাশুল দিতে হতে পারে। রাজনীতির মাঠে টিকে থাকাই কঠিন হবে।
যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের একজন শীর্ষ নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, যা হওয়ার হবে, পেছনে তাকানো যাবে না। কারণ এবার পেছনে গেলে আর সামনে এগোতে পারব না।হাইকমান্ডকেও বুঝতে হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সরকার পতনের ১০ দফা দাবি আদায়ে বছরের শুরুর দিকে শন্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই থাকবে বিএনপি। ১১ জানুয়ারি সব বিভাগীয় শহরে চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েক মাস আগ থেকেই আন্দোলনের গতি বাড়ানো হবে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে সরকার একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেই চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে তারা। ১০ দফা তখন এক দফায় পরিণত হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, শুধু বিএনপি কেন, নতুন বছর দেশের জনগণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের হবে। আমরা চাই এই বছরে জনগণকে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে। আমরা সেটা পারব।
১০ দফা দাবি আদায়ে আরও কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে এই শীর্ষ নেতা বলেন, যত কঠিন পরিস্থিতিই হোক জনস্বার্থে আমরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি।
বিএনপির সূত্র জানায়, নতুন বছরে দলটি সরকার পতনের আন্দোলনকে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। অলআউট কর্মসূচি নিয়ে তারা মাঠে নামার আগে সবার মধ্যে ঐক্য আরও শক্তিশালী করতে চায়। সরকারের কোনো প্রলোভনে কেউ যাতে দলছুট না হয় সে জন্যও কর্মপরিকল্পনা করবে বিএনপি। প্রয়োজনে সমমনা অনেক ছোট দলের দাবি দাওয়াতেও গুরুত্ব দেয়ার চিন্তা আছে বিএনপিতে।
বিএনপির নেতাকর্মীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছেন, পরিস্থিতি যাই হোক নেতৃত্ব নিয়ে সমস্যায় তারা পড়বেন না। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার কর্মসূচির উদাহরণ টেনে কেউ কেউ বলছেন, হঠাৎ মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা আটক হলেও কর্মসূচিতে কোনো ব্যঘাত ঘটেনি।
হাইকমান্ডও গুরুত্ব দিচ্ছে, শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হলেও যেন আন্দোলনের গতি থমকে না যায়। এজন্য তৈরি করা হচ্ছে কয়েক স্তরের নেতৃত্ব।
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক ঢাকা মেইলকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলে দিয়েছেন শেষ কর্মী পর্যন্ত নেতৃত্ব দেবে। এই মেজেসই আন্দোলনে সফল না হওয়া পর্যন্ত চলবে। সো, নেতৃত্ব কে দেবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
বিইউ/জেএম