images

রাজনীতি

কী চমক থাকছে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে?

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২২ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:০৮ পিএম

‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আগামী শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। এবারের সম্মেলনে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অপরিবর্তিত থাকছে না নতুন কেউ জায়গা নিচ্ছেন- সেটি নিয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আলোচনা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আবারও আওয়ামী লীগের সভাপতি হচ্ছেন- এটা নিয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই। বেশি আলোচনা হচ্ছে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। এই পদে পরিবর্তন আসতে পারে এমন গুঞ্জন শুরু থেকে শোনা গেলেও দিন যত গড়াচ্ছে ততই বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হ্যাটট্রিকের গুঞ্জন জোরালো হচ্ছে।

Awami Leagueআওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ঢাকা মেইলকে জানান, বারবার অবসরের ঘোষণা দিলেও নেতাকর্মীদের দাবির মুখে দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। এবারও তিনি সভাপতি হচ্ছেন। কারণ দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী তিনি। এই মুহূর্তে তার বিকল্প কাউকে ভাবা হচ্ছে না।

তবে এবার সম্মেলনের মাধ্যমে দলে বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এলে সম্মেলনে সেটিই বড় চমক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

যেভাবে সাজানো হয়েছে সম্মেলন সূচি

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসবেন। এরপর আধাঘণ্টা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে।

Awami Leagueপরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনাররা হলেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও মশিউর রহমান। নির্বাচন কমিশন প্রথমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী আহ্বান করবেন। একাধিক প্রার্থী না থাকলে প্রস্তাব ও সমর্থনের মাধ্যমে শীর্ষ দুই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এরপর কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

নৌকার আদলে ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে সাত ফুট। সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূলমঞ্চে চার লেয়ারে চেয়ার সাজানো হবে। প্রথমে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাকি দুটোতে কেন্দ্রীয় নেতারা। মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে।

Awami Leagueবিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছুটা কৃচ্ছ সাধনের লক্ষ্যে সম্মেলনে সাদামাটা আয়োজন থাকছে এবার। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের বেশির ভাগই দুই দিনব্যাপী হয়েছে। এবার তা এক দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে খরচ কমাতে। এবারের সম্মেলনের জন্য বাজেট তিন কোটি ১৩ লাখ টাকা। এবার আলোকসজ্জা একেবারেই করা হচ্ছে না। আগের মতো বিশাল তোরণও হবে না।

এবার এই সম্মেলনে বিদেশ থেকে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আমন্ত্রণ পেয়েছে।

সম্মেলন ঘিরে নানা গুঞ্জন, হিসাব-নিকাশ

সূত্র বলছে, সভাপতি পদে শেখ হাসিনাই থাকছেন, এটা নিশ্চিত। এর বাইরে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন। তবে অতীতের সম্মেলনগুলোতেও একই আলোচনা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ আসেননি।

দলের একাংশের নেতাকর্মী মনে করছেন, সাধারণ সম্পাদক পদে রদবদলের সম্ভাবনা তেমন একটা নেই। যুক্তি হিসেবে বলেছেন, বেশিরভাগ জেলা সম্মেলনে পুরোনোরাই শীর্ষ নেতৃত্বে রয়ে গেছেন। কেন্দ্রেও এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।

আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, সভানেত্রী হিসেবে এবারও থাকবেন শেখ হাসিনা। দুইবার দায়িত্ব পালন করলেও শেষ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের ওপরই আস্থা রাখছেন শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পরিবর্তন হয়তো আসছে না।

Awami Leagueযদিও এই মুহূর্তে আরও কয়েকজনকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। খোদ ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক হতে চান অন্তত ১০ জন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দুইবার দায়িত্ব পালন করেছেন। সামনে তাকে আরও বড় দায়িত্ব দেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। সে হিসেবে নতুন কেউ আসতে পারেন মনে করেন কেউ কেউ। যুক্তি তুলে ধরে তারা বলছেন, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন নেতৃত্ব এসেছে। এমনকি আলোচনায় আসেননি, এমন নেতৃত্বও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। তাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও নতুন মুখ আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

সাধারণ সম্পাদকের পদে যারা আলোচনায় রয়েছেন তাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর তিন সদস্য- কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। এই পদে আরও আলোচনায় রয়েছেন চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- মাহবুবউল-আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।

নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত পাওয়া নেতাই হবেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক। দলীয় প্রধান জাতীয় সম্মেলনে উপস্থিত কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেও জানান তারা।

Awami Leagueএদিকে, আওয়ামী লীগের আগের কয়েকটি জাতীয় সম্মেলনের মতো এবারও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে ঘিরে নেতাকর্মীর মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোতে আসছেন কি না- তা নিয়ে নেতাকর্মীর মনে ব্যাপক কৌতূহল।

এ প্রসঙ্গে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের দিকে সারাদেশের মানুষ তাকিয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রায় ৪২ বছর এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি ঝড়ঝঞ্ঝা, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দলকে সংগঠিত করেছেন, ক্ষমতায় এনেছেন। শুধু দলই নয়, গোটা দেশ ও দেশের মানুষকে তিনি জানেন এবং বোঝেন। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আস্থা ও বিশ্বাস-কী করলে দলের ভালো হবে, সেই সিদ্ধান্ত তিনিই সবচেয়ে ভালো নিতে পারবেন।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলেই মৌলিক নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয় উল্লেখ করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন,  দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, অর্থনৈতিক পলিসি কী, আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের ইশতাহারে কী যুক্ত করা প্রয়োজন, সেগুলোও কাউন্সিলে হয়। এই সম্মেলনের এক বছর পর নির্বাচন, ফলে সে বিষয়গুলোও আসবে। পাশাপাশি কাউন্সিলে পুরোনো কমিটি বিলুপ্ত হয়, নতুন নেতৃত্ব আসে। আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেই এই দায়িত্ব দেন।

ডব্লিউএইচ/জেবি/আইএইচ