images

রাজনীতি

মামলার ‘গ্যাঁড়াকলে’ জাপা!

বোরহান উদ্দিন

১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৫০ এএম

জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধার মামলাকে কেন্দ্র করে দলটিতে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই মামলার জেরে দলীয় কর্মকাণ্ড চালাতে পারছেন না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। সবশেষ উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ থেকেও সুখবর না পাওয়ায় আপাতত তার দলে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ মিলছে না- এটা অনেকটা নিশ্চিত।

মাঠের কর্মসূচিতে খুব সক্রিয় না থাকলেও জাপায় এমন অস্থিরতা অবশ্য নতুন নয়। কিছুদিন আগে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে দল থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে আলোচনা শেষ না হতেই রওশন এরশাদ-জিএম কাদেরের নেতৃত্বের টানাপোড়েন নিয়ে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। মাঝে বিদিশা এরশাদের তৎপরতাও আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। এবার মামলার ‘গ্যাঁড়াকলে’ পড়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছে দলটি।

যদিও হঠাৎ এমন মামলা ও পরবর্তী ঘটনাক্রমের পেছনে সরকারের হাত আছে বলে দাবি করছেন জাতীয় পার্টির নেতারা। বিরোধী দলীয় নেতা ও দলের চিফ পেট্রন রওশন এরশাদ বলয়ের লোকদের দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চান না।

অবশ্য গত সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের সাক্ষাত হয়েছে। এর পর সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েন কমে আসতে পারে- এমন আলোচনাও আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

এদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে জিএম কাদের চুপচাপ থাকলেও দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন জাপাকে চাপে রাখতেই এমন তৎপরতা।

gm-quader

অন্যদিকে জিএম কাদেরের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, বাদী যে পরিচয়ে মামলা করেছেন তা আইনগতভাবে টেকে না।

ঢাকা মেইলকে এই আইনজীবী বলেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পার্টির কোনো উপদেষ্টা নেই। চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আছেন। জিয়াউল হক মৃধা পার্টির উপদেষ্টা হিসেবে যে দাবি করেছেন তা সঠিক নয়। কাজেই জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে উনার মামলা আইনত টিকে না।

জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, দলের ভেতরে-বাইরের ষড়যন্ত্রে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি কোনদিকে যায় সেদিকেও আমরা নজর রাখছি। তবে যা হচ্ছে তা দুঃখজনক।

কী হচ্ছে আদালত পাড়ায়?
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এরশাদের মৃত্যুর পর ছোট ভাই জিএম কাদের দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতাও তিনি।

সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। তবে হঠাৎ জাপা থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে জিএম কাদেরের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। গত ৩০ অক্টোবর এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

শুধু তাই নয়, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টির সব কার্যক্রম বাধ্যতামূলকভাবে স্থগিত রাখতেও আদালতে আবেদন করেন জিয়াউল হক।

এই মামলায় জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদেরসহ ১০০ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে সহস্রাধিক ব্যক্তিকে বিবাদী করা হয়।

rawsan

পরে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে জিএম কাদেরের করা আবেদন খারিজ করে দিলে আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশনে যান তিনি।

হাইকোর্টে শুনানির পর বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়ালের একক বেঞ্চ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে জিএম কাদেরের নিষেধাজ্ঞার আদেশ আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করেন।

এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ গত সোমবার পর্যন্ত স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন চেম্বার আদালত। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে আদেশ দেন- জিএম কাদের দলে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন না। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতে চলমান মামলা আগামী ৯ জানুয়ারির মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।

যে অভিযোগে মামলা
মামলায় অভিযোগ, এরশাদের মৃত্যুর পর হাইকোর্টে একটি রিট মামলা বিচারাধীন থাকার মধ্যে ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল করে নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন জিএম কাদের। পরে তিনি জিয়াউল হকসহ একাধিক নেতাকে বহিষ্কার করেছেন, যা অবৈধ।

কী করছে জাপা?
মামলা হওয়ার পর তা প্রত্যাহার চেয়ে গত ২২ নভেম্বর রাজধানীতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে দলটি। এর বাইরে আর তেমন কিছুই করেনি দলটির নেতাকর্মীরা।

JAPA

জাপা নেতাকর্মীদের আশঙ্কা, মামলার এই প্রক্রিয়া আরও লম্বা সময় ধরে চলতে পারে। সেক্ষেত্রে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক অবশ্য এমন মামলার পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন। তিনি বলেন, মামলা যে কেউ করতে পারে, তার অধিকার আছে। তবে আইনজীবীরা জানিয়েছেন এসব মামলার কোনোটারই আইনগত ভিত্তি নেই। এগুলো সব মিথ্যা মামলা।

তবে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ মামলার বিষয়টি আত্মঘাতি বলে মন্তব্য করেছেন। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, যা হচ্ছে এটা সাময়িক। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। দলের নাম নিয়ে যারা এগুলো করছেন তাদের মনোভাব আসলে ভালো না। আশা করি আদালতে সত্য প্রমাণ হবে।

বিইউ/জেএম/এএস