বোরহান উদ্দিন
০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:৩৭ পিএম
অবশেষে ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশের জায়গা পেল বিএনপি। নয়াপল্টন নিয়ে অনড় অবস্থানের পর পুলিশের সঙ্গে আলোচনায় গোলাপবাগ মাঠে কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে দলটি। ইতোমধ্যে বাইরে থেকে অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকেছেন। অন্যদিকে ঢাকার নেতাদের অনেকে গ্রেফতার এড়াতে বাসা ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন। ফলে সমাবেশে ঢাকার দুই মহানগরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কতটা নিশ্চিত করা যাবে তা নিয়ে দলের মধ্যে নানা আলোচনা আছে।
বিশেষ করে গত বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালামসহ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। অবশ্য মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান গ্রেফতার হলেও তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। অন্যদিকে সংঘর্ষের আগেও ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাও গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। ফলে নেতারা জোরালো প্রস্তুতির কথা বললেও সফল সমাবেশ শেষ করা নিয়ে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজও রয়েছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার বাইরে নয়টি সাংগঠনিক জেলায় নানামুখী বাধার মুখেও বিপুল জনসমাগম ঘটেছে সমাবেশে। ঢাকায় সব সমাবেশকে ছাড়িয়ে যাবে এমন কথা এতদিন বলে আসছেন নেতারা। অন্যদিকে সারাদেশের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা নেতাকর্মীরাও তাকিয়ে আছেন ঢাকার দিকে।
এছাড়া অতীতে সারাদেশে সক্রিয় আন্দোলন হলেও ঢাকার নেতাদের ব্যর্থতার গ্লানি আছে। যা নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে ঢাকার নেতাদের। তাই এবারের সমাবেশ সফল করতে অতিরিক্ত চাপ আছে মহানগরের নেতাদের দিকে।
যদিও কর্মসূচি পালন নিয়ে খুব চাপ দেখছেন না বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মাঠে চাপ, স্বাভাবিক পরিস্থিতি অনেক কিছুই থাকবে। এগুলো গায়ে মাখার সুযোগ নেই। এখন তো মোটেও সুযোগ নেই। ১০ ডিসেম্বর সারাদেশের মানুষ দেখবে ঢাকায় বিএনপির শক্তি। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সফল সমাবেশ করবো।’
সবশেষ ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল গঠিত হয় ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি। দুই বছর মেয়াদী সেই কমিটি পাঁচ বছর অতিক্রম করলেও পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি মহানগরের কমিটি। পাশাপাশি ২০১৮ সালে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার সময় তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই কমিটি।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন, ২০২০ সালে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুব বেশি সক্রিয়তা দেখাতে না পেরে দুই কমিটির নেতারা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।
ওইসময় ঢাকা উত্তরের দায়িত্বে ছিলেন এম এ কাইয়ুম ও আহসানউল্লাহ হাসান। অন্যদিকে দক্ষিণের দায়িত্বে ছিলেন হাবিব উন নবী খান সোহেল ও কাজী আবুল বাশার।
পরে তাদের সরিয়ে দিয়ে গত বছরের ২ আগস্ট ঢাকার দুই মহানগরে নতুন কমিটি দেয় বিএনপি। ঢাকা উত্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমানউল্লাহ আমান ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হককে। অন্যদিকে দক্ষিণে আবদুস সালাম ও রফিকুল আলম মজনুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এই চার নেতার নেতৃত্বে ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন করায় বেশি প্রশংসিতও হচ্ছে এই কমিটি। অন্যদিকে গোটা ঢাকায় জোনভিত্তিক সফল সমাবেশও করেছে কমিটির নেতারা। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকায় বড় ধরনের কর্মসূচি হিসেবে এবারের বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এজন্য এই কর্মসূচি সফল করাকে ঢাকার নেতাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
মহানগরের নেতারা বলছেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারি দল ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে এমন ধারণা আগেই ছিল। যে কারণে প্রস্তুতিও ভালোভাবে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দফায় দফায় ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান টিটো ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘পরিস্থিতি যাই হোক, আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশনা ছিল দলের শেষ কর্মী পর্যন্ত নেতৃত্ব দেবে। এবার তাই হচ্ছে। নেতা কে আছেন, কে নেই সেদিক তাকাচ্ছি না। আমরা কর্মসূচি সফল করতে বদ্ধপরিকর। বাকিটা কালকে মাঠে প্রমাণ পাওয়া যাবে।’
রামপুরা-খিলগাঁও এলাকায় রাজনীতিতে সক্রিয় মহিলা দলের ক্রীড়া সম্পাদক নীলুফা ইয়াসমীন নীলু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বাধা দেওয়ার কারণে লোক আরও বেশি হবে। কালকেও বাধার মুখে পড়তে হতে পারে এটাও সবাই জানি। কিন্তু যে যেভাবে পারবে সেভাবেই মাঠে যাবে। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। জিততেই হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সব বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘোষণা অনুযায়ী গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে করেছে বিএনপি। সবশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ।
ময়মনসিংহ থেকে প্রতিটি সমাবেশের আগের দিনই বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়ে নেন। দূরদূরান্ত থেকে কেউ কেউ চিড়া-মুড়ি নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। তবে ঢাকায় আসা নেতাকর্মীদের জন্য খিচুড়িসহ নানা আয়োজন থাকলেও বুধবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সব ভণ্ডুল হয়ে যায়।
এবারের সমাবেশে ১০ লাখ লোকের কথা বলা হচ্ছিল। আসলে কেমন প্রস্তুতি বিএনপির- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা আমিনুল হক বলেন, ‘সংখ্যা বলার সুযোগ নেই। এতটুকু বলতে পারি বিএনপির গণজোয়ারের প্রমাণ পাওয়া যাবে।’
বিইউ/জেবি