নিজস্ব প্রতিবেদক
০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:২৮ পিএম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ৯টি বিভাগে জনসভা করেছি। সরকারের সকল বাধা উপেক্ষা করে এসব জনসভায় জনতার ঢল নেমেছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা-নির্যাতন করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ধৈর্য ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চেয়েছি। তবে মনে হয়, সরকার অন্যকিছু চায়। আমরা চাই গণতন্ত্র।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে জেনেছেন যে, গত রাতে প্রায় সোয়া ৩টার দিকে আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ সাদা পোশাকে গ্রেফতার করেছে। আজ তাদের ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে আমরা জেনেছি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, পুলিশের পক্ষে বলা হয়েছে- নেতৃবৃন্দকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই আনা হয়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এত গভীর রাতে সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে আসার মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা ও দম্ভের প্রকাশ আছে, যুক্তি নেই কোনো। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর বিনা উস্কানিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ, র্যাব, সোয়াত বাহিনী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান একযোগে আক্রমণ করে অনেকে খুন ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করে। তাদের গুলি ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ার পরিমাণ এতই বেশি ছিল যে মনে হয়েছে যেন যুদ্ধ চলছে। নিরস্ত্র রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর এমন নির্মম আক্রমণ ও জুলুম নজিরবিহীন। তারা দলের মহাসচিবকে তার অফিসে ঢুকতে দেয়নি কিন্তু নিজেরা ঢুকে অফিসের কক্ষ, আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স, নগদ অর্থ ও অন্যান্য দ্রব্যাদি নিয়ে গেছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, নিজেরা ব্যাগে করে বোমা অফিসের ভেতরে নিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, ওইগুলো অফিসে পাওয়া গেছে। কিন্তু সাংবাদিকদের চোখে তা ধরা পড়েছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তা প্রচার হয়েছে। এমন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের নিন্দা করার ভাষ্য আমাদের জানা নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, একই দিনে অফিসের ভেতর ও বাইরে থেকে দলের অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ৫০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। এমনকি গ্রেফতারকৃত অনেক আহত নেতাকর্মীকে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এমন নির্মমতা শুধু অনির্বাচিত সরকারের অনুগত কোনো দলীয় বাহিনীর পক্ষেই সম্ভব। আমরা গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবি করছি।
নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টন সড়কে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের সম্মতি চেয়ে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছিল স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, লিখিত চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও তা নিয়ে সরকার গড়িমসি করে। আমরা না চাওয়া সত্ত্বেও অযাচিতভাবে ও স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নজিরবিহীনভাবে ২৬ শর্তে গণ-সমাবেশের যে সম্মতি দেওয়া হয়েছিল- তা অনিবার্য ও যুক্তিসঙ্গত কারণে আমরা প্রত্যাখ্যান করে আলোচনার মাধ্যমে তৃতীয় কোনো উপযুক্ত স্থানে সভার অনুমতি দেওয়ার যে অনুরোধ জানিয়েছি, তা দিতেও গড়িমসি করা হয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ দুপুরে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনার বরাবরে গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণ-সমাবেশ অনুষ্ঠানের জন্য পত্র প্রেরণ করে। কিছুক্ষণ আগে আমাদের চাহিদা মোতাবেক গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণ-সমাবেশের জন্য পুলিশ সম্মতি দেয়। অতএব ঢাকা বিভাগীয় গণ-সমাবেশ আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা অভিযোগ করেন, আমরা তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সরকারি বাহিনীসমূহ ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা গত প্রায় ১৫ দিন যাবৎ প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে জনসভা বানচালের জন্য গোটা ঢাকা মহানগর এবং ঢাকা বিভাগসহ সকল বিভাগের সকল জেলা, উপজেলা, মহানগরে মহড়া দিচ্ছে। তাদের এসব অগণতান্ত্রিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম পুলিশের সামনেই এবং সমর্থনে চলছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, রাজধানী ঢাকায় সরকারি দল হঠাৎ করেই মিছিল করছে আর আমাদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক শ্লোগান দিচ্ছে। এ অবস্থায় যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কারণ, আমাদের এ গণসমাবেশ দুই মাস আগ থেকেই নির্ধারিত ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এমই/আইএইচ