মো. ইলিয়াস
০৫ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৪১ এএম
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আর সোয়া এক বছর। ভোটের আগে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী করতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা করছে বিএনপি। সরকার হটানোর ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের জন্য রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অনেকদিন ধরে বলা হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে তাদের দ্বিতীয় দফা যে সংলাপ হচ্ছে সেখানে যুগপৎ আন্দোলনের জন্য দলটির চূড়ান্ত করা দাবিগুলো তুলে ধরা হবে। এরপরই আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। এবং সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতেই আন্দোলন হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ হয় তাদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। যুগপৎ আন্দোলনের জন্য সেসব প্রস্তাবসহ বিএনপি কিছু দাবি চূড়ান্ত করেছে। দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে রাজনৈতিক দলের কাছে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হবে। এরপর তাদের নতুন কোনো প্রস্তাব থাকলে তা যুক্ত করা হতে পারে। সংলাপ শেষে সবার মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। যা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরবে দলটি।
বিএনপি নেতারা বলেছেন, বিভিন্ন দলের সঙ্গে এবারের আলোচনা তারা দুই সপ্তাহের মধ্যেই শেষ করার চেষ্টা করবেন। এবারের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আন্দোলনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে। প্রস্তাবিত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নিরপেক্ষ সরকার অথবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন, বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং একই কারণে ৩৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার।
দলটির কয়েকজন নেতা বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত পর্যায়ে। বড় দলের অনেক উদারতা রয়েছে, কিন্তু ছোট ছোট দল দাড়ি-কমা বাদ পড়লেও অনেক সমস্যা মনে করে। দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের দাবি-দফা চূড়ান্ত করা হবে।
তবে যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে নামার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় তারা এখনই বলতে পারছেন না। দলটির কেউ কেউ বলছেন, আন্দোলন তো হচ্ছে। বিএনপি ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে। এছাড়া বিভিন্ন দলগুলো ইতিমধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, পালন করছে।
চূড়ান্ত আন্দোলনের আগ পর্যন্ত টানা কর্মসূচি পালন করতে চায় বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে তৃণমূল ও রাজধানীর পর এবার ১০ বিভাগে গণসমাবেশের ঘোষণা করেছে দলটি। এসব কর্মসূচি সফল করতে বিভাগীয় নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ১০টি শক্তিশালী টিম।
৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ। এরপর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে দলটি। পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচি আসবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, আন্দোলনের দাবি নিয়ে দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো আন্দোলন সংগ্রাম এবং নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকার ইস্যু। সরকারবিরোধী আন্দোলনে শুধু আমরা একাই অংশ নেব না, পুরো জাতি এতে অংশ নেবে। আন্দোলনের দাবিগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে তুলে ধরা হবে তাদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে আন্দোলন হবে, এ নিয়েই আলোচনা হচ্ছে।
দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শেষ হতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। কারণ যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এগুলো কমন। তারপর বিষয়গুলো আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে তুলে ধরছি, আলাপ আলোচনা করছি। বিভিন্ন রাজনীতি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ হলেই যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।
যুগপৎ আন্দোলন কবে নাগাদ শুরু হতে পারে এমন প্রশ্ন জবাবে আমীর খসরু বলেন, আন্দোলন তো হচ্ছে। বিএনপি ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে। এছাড়া বিভিন্ন দলগুলো ইতিমধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, পালন করছে। এরপর ওরা ওদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি দেবে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করব।
এমই/এমআর