images

রাজনীতি

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, সরকারের নীতিকে দুষছেন বিএনপি নেতারা

মো. ইলিয়াস

০৬ আগস্ট ২০২২, ০১:৩৩ পিএম

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির হারকে অস্বাভাবিক মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তারা এর জন্য সরকারের জ্বালানি নীতিকে দুষছেন। সরকার অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে সবধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। তাদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে জনগণ ফুঁসে উঠবে এবং এতে সরকারের পতন হবে বলে আশা করছেন তারা।

শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১০টায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। 

শনিবার (৬ আগস্ট) জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এটা অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত এবং জনবিরোধী। সরকারের ব্যর্থতা দুর্নীতি লুটপাটের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী। বিদ্যুৎ নেই, লোডশেডিং, তার মধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাবে। পরিবহনের ভাড়া বাড়বে, নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে, এটা কোনো জনবান্ধব সরকার করতে পারে না। সরকার জনবিরোধী, জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, সে কারণে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে তাদের বুক কাঁপে না। দেশের জনগণ জেগে উঠছে, এই জনবিরোধী সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হবে।’

জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম ঢাকা মেইকে বলেন, ‘অগণতান্ত্রিক সরকার জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা কখনোই জনগণের কথা ভাবে না। তারা বিশাল অংকের একটি ঋণ নেবে, সেটা তারা পরিশোধ করতে পারবে কি পারবে না এটার প্রতি কোনো খেয়াল নেই। লোন নেওয়ার শর্ত পূরণের জন্য তারা এই সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে জনগণের ওপর বোঝা বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। জনগণের এই সরকারের ওপর কোনো আস্থা নেই, আর সরকারেরও জনগণের ওপর কোনো জবাবদিহিতা নেই।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ করে সমসাময়িক কোনো সরকার এত বৃদ্ধি কখনোই করেনি। শ্রীলঙ্কার সংকটের পর দেশের অর্থনীতিবিদরা বলে আসছিলেন, আমাদের দেশও ওদিকে ধাবিত। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো আছে। গতকাল রাতের তেলের দাম বৃদ্ধির যে পদক্ষেপ, এটা মানুষকে আতঙ্কিত করবে, বিপদগ্রস্ত করবে, হতাশ করবে। তেলের সাথে এদেশের অর্থনৈতিক, শিল্প, শিক্ষা সবকিছু জড়িত।’

দুদু বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো মানে সবকিছু দাম বাড়িয়ে দেওয়া। এখন এমনিতেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নাগালের বাইরে রয়েছে। দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিকভাবে বেড়ে আছে। সে কারণে আমার কাছে মনে হয় একটি ব্যর্থ সরকারের, যার কোনো কিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই, একমাত্র দুর্নীতি করা ছাড়া। তাদের এই বিপদগ্রস্ত জাতিকে আরও বিপদে ফেলা থেকে নিজেদের সরে যাওয়া উচিত।’

BBB
গণপরিবহন সংকটে ভোগান্তিতে নগরবাসী। ছবি: ঢাকা মেইল

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সরকার অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। হুনডি দিয়ে বিভিন্নভাবে রিজার্ভ নষ্ট করে ফেলেছে। এখন আমদানির সেই ডলার তাদের কাছে নেই। পত্রপত্রিকায়ও দেখেছি বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছে না। সরকার যেভাবে মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছে আসলে কি আন্তর্জাতিকভাবে এভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে? বলা হচ্ছে কি, বিপিসি লস করেছে। বিপিসি লস করেছে এটা হলো ভেলিভারি ফি সরকারের নীতি, সে নীতি ছিল সরকারের লুটপাটের নীতি। সেই লুটপাট করতে গিয়ে, ডাকাতি করতে গিয়ে আজকে একেবারে টান পড়েছে।’

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘এই যে প্রতি বছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, এটা সরকার বলছে, আমাদের ব্যাংক বলছে, এগুলো সংকট তৈরি করছে। তাই এখন দাম বাড়িয়ে দিয়ে রেশনিং করতে চাচ্ছে প্রকারান্তরে। অতএব সরকারের সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থতা তাদের যে লুটেরা অর্থনীতির নীতি ছিল, তারই বহিঃপ্রকাশ এগুলো হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই কেন? যেহেতু ডিজেল এলএনজি ওপর তারা আমদানিনির্ভর করে ফেলছিল এই বিদ্যুৎ খাতকে। আমাদের গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে, এতে মজুদ রয়েছে, এগুলো উত্তোলনের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। অতএব সেই জায়গাতেই শর্ট। স্বাভাবিকভাবে সেই জ্বালানি শর্ট তা আমদানি করতে পারছে না, তারা এখন দাম বৃদ্ধি করে মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লুটেরা লুট করার কারণে, বিদেশে পাচার করার কারণে আজকে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’ 

এমই/জেবি