images

রাজনীতি

খালেদা জিয়াকে মাংসের ঝোল-রুটি খাওয়ানো হলো না এই বিএনপি নেত্রীর

মোস্তফা ইমরুল কায়েস

৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম

সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একবার রংপুরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি অবস্থান করেছিলেন সার্কিট হাউজে। সেখানে গিয়ে ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী মর্জিয়া সুলতানা পনু তাকে চালের রুটি ও মোরগের মাংসের ঝোল খাইয়েছিলেন। তার ইচ্ছে ছিল বেঁচে থাকলে আবারও তাকে খাওয়াবেন। এবার সেই ইচ্ছে করেছিলেন, কিন্তু তার ইচ্ছে আর পূরণ হলো না। তার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন খালেদা জিয়া। পনুর এই আফসোস সারাজীবন ভর থাকবে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা এভারকেয়ার হাসপাতালে সামনে তার সঙ্গে কথা হচ্ছিলো এই প্রতিবেদকের। পনু জানান, তার গ্রামের বাড়ির পিরোজপুরে ও তার শ্বশুর বাড়ি রংপুর জেলায়। সেই সূত্রে রংপুরে থাকাবস্থায় তিনি সার্কিট হাউজে গিয়ে নিজের রান্নাকৃত রুটি ও মোরগ মাংস খালেদা জিয়াকে খাইয়েছিলেন। আজো সেই স্মৃতি তার কাছে অমলিন হয়ে আছে। কিছুতেই ভুলতে পারছিলেন না তিনি। কথাগুলো বলতে বলতে পনু আবেগপ্রবণ হয়ে যান। তখন তার চোখ কান্নায় ছলছল করছিল।

রংপুর সার্কিট হাউজের সেই স্মৃতি মনে করে পনু বলছিলেন, সেবার ওনাকে (খালেদা জিয়াকে) বলেছিলাম, আমি বেঁচে থাকলে আবারও আপনাকে খাওয়াবো। এবার ইচ্ছে করেছিলাম যে তাকে একটু চালের রুটি ও মোরগের গোশত খাওবো। কিন্তু সেটাতো আর হলো না। 

পনু বলেন, আমি যখন  ঢাবির শামসুন্নাহার হলের প্রেসিডেন্ট ছিলাম তখন তার সঙ্গে অনেক স্মৃতি ছিল। অনেকবার যোগাযোগ হয়েছে। তার সঙ্গে বিভিন্ন রকম স্মৃতি রয়েছে। কোনো সময় ভাবিনি আমরা তাকে এভাবে এই সময়ে হারাবো।

পনু আশির দশকে ঢাবির শামসুন্নাহার হলের তৎকালীন ছাত্রদলের সভাপতি। এক সময় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও তিনি এখন পুরোদস্তুর একজন গৃহিনী। তবে রাজনৈতিক চিন্তা ও আদর্শকে এখনো মনে প্রাণে লালন করেন।

খালেদা জিয়ার কলম উপহার 
পিনু তখন ঢাবিতে সবেমাত্র ছাত্র রাজনীতি শুরু করেছেন। প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তখন বিএনপির দলীয় কার্যালয় ছিল ধানমন্ডিতে। সেখানে তিনি মাঝে মাঝে যেতেন। প্রথমবার গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে পনুর দেখা হয়। তখন খালেদা জিয়া তার ব্যাগ থেকে একটি কলম বের করে উপহার দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি মনে করে পনু বলছিলেন, তিনি এত বড় একজন নেত্রী অথচ তার ব্যাগ থেকে কলম বের করে দিলেন। বললেন, এই নাও তুমি এটা দিয়ে লিখিও।

আরেকবারের স্মৃতি তুলে ধরেন পনু বলেন, একবার কুড়িগ্রামে গিয়েছিলাম। সেবার তিনি আমার মেয়ের কথা শুনে তার জন্য আপেল-কমলা দিয়েছিলেন। আমাকে ডেকে বললেন, এই নাও তুমি তোমার মেয়েকে খাওয়াবা। এগুলো মনে হলে বুঝি তিনি আমাদের কত কাছ থেকে ভালোবাসতেন। সেই মেয়ে এখন চিকিৎসক।

পনু বলেন, তিনি (খালেদা) সবসময় বলতেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। দলের চেয়ে দেশ বড়। আরও বলতেন, আমরা ব্যক্তিকে নিয়ে না ভেবে দলকে নিয়ে ভাবি, দলকে না ভেবে দেশকে নিয়ে ভাবি। অথচ পাশাপাশি আরেকজনকে দেখেন জুতা মেরে তাড়ায় দিলো দেশের মানুষ। আর আমরা আজকে খালেদা জিয়াকে কান্নায় বিদায় জানাচ্ছি। দুজন ফারফর ডিফরেন্স। আসলে এটাই জীবনের বৈচিত্র। কত কটাক্ষ করে হাসিনা তাকে নিয়ে কথা বলেছেন অথচ তিনি কোনো দিন উত্তর দেননি।

বিএনপি নেতা শায়রুল কবির খোকনের হাত ধরেই পনু রাজনীতিতে সক্রিয় হন। পরে তাকে শামসুন্নাহার হলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

এমআইকে