নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪১ এএম
এক-এগারোর সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাত্রা, এরপর পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ষড়যন্ত্রে সেখানেই প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়া- অবশেষে দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
প্রয়াত সাবেক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তিনি। তাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।
তবে শুধু তারেক রহমানকে একা নন, তার সঙ্গে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরেছেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং একমাত্র সন্তান ব্যারিস্টার জাইমা রহমানও। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা বিমানবন্দর থেকে বের হবেন।
এদিকে তারেক রহমান ও তার পরিবারকে বরণ করতে বিমানবন্দরে রয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। সেখানে তাদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বুলেট প্রুফ গাড়ি। সেই গাড়িতে চড়েই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসবেন ৩০০ ফিটে। সেখানে তার জন্য রাজকীয় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। বানানো হয়েছে বিশাল মঞ্চ।
এর আগে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত আটটার কিছু পরে লন্ডনের বাসা থেকে রওনা হয়ে সোয়া ১০টার দিকে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান তারেক রহমান ও তার পরিবার। এরপর রাত সোয়া ১২টায় তাদের বহনকারী বিমানটি বাংলাদেশের উদ্দেশে উড়াল দেয়।
এই ফ্লাইটটি প্রথমে দুবাইতে যাত্রা বিরতি দেয়। সেখান থেকে ফের উড়াল দিয়ে বাংলাদেশের আকাশে ঢুকে প্রথমে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে। সেখানে যাত্রী নামিয়ে এবং যাত্রা বিরতি দিয়ে তৃতীয় দফায় উড়াল দিয়ে ঢাকার বিমানবন্দরে নামে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে।
বিএনপির পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়, ঢাকায় নেমে প্রথমে ৩০০ ফিটে নিজের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তারেক রহমান। সেখানে একমাত্র বক্তা হিসেবে তিনি বক্তব্যও দেবেন। এরপর যাবেন এভারকেয়ার হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন মা খালেদা জিয়াকে দেখতে।
দেশে নিজের কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাবা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতে যাবেন তারেক রহমান। সেখান থেকে যাবেন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে। একই দিন শহীদ শরীফ ওসমান হাদির কবরও জিয়ারত করবেন তিনি।
এদিকে তারেক রহমানের সংবর্ধনাকে ঘিরে ৩০০ ফিটে তৈরি মঞ্চস্থলে জড়ো হয়েছেন সারাদেশ থেকে আসা লাখ লাখ নেতাকর্মী। বুধবার সকাল থেকে তারা ঢাকায় আসা শুরু করেন। এই মুহূর্তে সেখানে লোকে লোকারণ্য। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সমবেত হয়েছেন হাজার হাজার উৎসুক জনতাও।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কারাগারে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয় তারেক রহমানের ওপর। ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি সবগুলো মামলা থেকে জামিন পান। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। তৎকালীন সরকারের ষড়যন্ত্রে আর ফিরতে পারেননি।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সব বাধা দূর হয়ে যায়। অবশেষে বিএনপির কোটি কোটি নেতাকর্মীর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে জন্মভূমিতে ফিরলেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করছে তার দল এবং দেশের মানুষ। দলীয় নেতারা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে গণতন্ত্রের যে কবর রচনা হয়েছিল, তারেক রহমানের হাত ধরে সেই গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম ঘটবে।
এএইচ