images

রাজনীতি

৩০০ ফিট জনসমুদ্র, জমজমাট অস্থায়ী বাণিজ্য

মো. মেহেদী হাসান হাসিব

২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৬ এএম

দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তাকে দেওয়া হবে রাজকীয় সংবর্ধনা। সে লক্ষ্যে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় তৈরি হয়েছে বিশাল মঞ্চ। সেখানে জমায়েত হয়েছে সারাদেশ থেকে আসা লাখ লাখ নেতাকর্মী। 

দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের অবস্থানের কারণে ৩০০ ফিট এলাকায় অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের দোকান। চা-পান-বিড়ি, পানি, হালকা খাবারের স্টল ছাড়াও রয়েছে শীতের কাপড়। জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য সামগ্রীর দোকানও বসেছে। সেসব দোকানে সাধারণ দিনের তুলনায় বিক্রি কয়েক গুণ বেশি।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১টা থেকে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোর পর্যন্ত ৩০০ ফিট এলাকা সরেজমিন ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা যায়।

3 স্থানীয় ও ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা জানান, সমাগম শুরু হওয়ার পর থেকেই ক্রেতার চাপ বেড়েছে। অনেক দোকানে কয়েক দফা পণ্য শেষ হয়ে নতুন করে আনতে হয়েছে। বিশেষ করে পানি, চা ও খাবারের চাহিদা বেশি।

অস্থায়ীভাবে বিরিয়ানির দোকান বসিয়েছেন মো. মতিন নামে একজন। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জে আমার একটি খাবারের হোটেল রয়েছে। আজ তারেক রহমানের দেশে আসবেন। এজন্য এখানে লাখো মানুষ জড়ো হবেন। তাই এখানে বিরিয়ানির দোকান দিয়েছি। এখন পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি মানুষ আমার কাছ থেকে খবাার কিনে খেয়েছেন।

কলা-রুটি বিক্রেতা কুদ্দুস উদ্দিন বলেন, ভ্যানে করে এক ভ্যান কলা-রুটি নিয়ে এসেছিলাম। সব শেষ, এখন আবার মাল আনতে যাচ্ছি। আল্লাহর রহমতে ব্যবসা ভালো হচ্ছে।

ডিম বিক্রেতা আয়েশা খাতুন বলেন, আমি প্রতিদিন ৩০০ ফিট এলাকায় ডিম ও দুধ বিক্রি করি।  প্রতিদিন গড়ে ২০০-৩০০ ডিম বিক্রি হয়। আর দুধ ৫ থেকে ৬ লিটার। আজ ডিম নিয়ে এসেছিলাম ১ ৫০০টি। সব শেষ, আবার আনতে পাঠিয়েছি। আর দুধ ১২ লিটারের মতো বিক্রি হয়েছে। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৩০০ ফিটে লোক সমাগমকে ঘিরে শীতের কাপড় ও কম্বল বিক্রি করছেন কয়েকজন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকায় হঠাৎ শীত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাইরে থেকে আসা অনেকেই হয়তো শীতের কাপড় আনেনি, কিংবা রাতভর এখানে থাকবেন। সে কথা চিন্তা করে তিনি শীতের কাপড় ও কম্বল বিক্রি করছেন। ভালো ব্যবসা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা দোহার থেকে আসা করিমত দেওয়ান ঘুমানোর জন্য কম্বল কিনছিলেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, অনেক আগে এখানে চলে এসেছি। শীতের কাপড়ও গায়ে আছে। তবে ঘুমানোর জন্য তো একটা কিছু লাগবে। তাই কম্বল কিনছি। লিডার যতক্ষণ না আসে তত সময় একটু ঘুমিয়ে নেব।

4

এদিকে রাস্তার পাশে কম্বল দিয়ে পুরো শরীর ঢেকে হাজারো নেতাকর্মীকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়। অন্যদিকে বড় ধরনের জনসমাগমকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকায় নেমে প্রথমে ৩০০ ফিটে নিজের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তারেক রহমান। সেখানে একমাত্র বক্তা হিসেবে বক্তব্যও দেবেন। এরপর যাবেন এভারকেয়ার হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন মা খালেদা জিয়াকে দেখতে। 

পরদিন শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাবা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতে যাবেন তারেক রহমান। সেখান থেকে যাবেন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে। একই দিন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শরীফ ওসমান হাদির কবরও জিয়ারত করবেন তিনি।

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কারাগারে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয় তারেক রহমানের ওপর। ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি সবগুলো মামলা থেকে জামিন পান। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। তৎকালীন সরকারের ষড়যন্ত্রে আর ফিরতে পারেননি। 

দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সব বাধা দূর হয়ে যায়। অবশেষে বিএনপির কোটি কোটি নেতাকর্মীর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কিছু সময় বাদেই ফিরছেন তিনি। 

এমএইচএইচ/এএইচ