নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪১ পিএম
দীর্ঘ ১৭ বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য করা, বক্তব্য প্রচারেও পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নিষেধাজ্ঞা। সবাই এখন অতীত। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেশের মাটিতে পা রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রাত সোয়া ১২টায় উঠবেন বিমানে।
তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে অবিস্মরণীয় করে রাখতে চায় বিএনপি। দেশে ফিরলেই তাকে দেওয়া হবে রাজকীয় সংবর্ধনা। সে লক্ষ্যে ঢাকার ৩০০ ফিটে বিশাল মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। সেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের একমাত্র বক্তা তারেক রহমান।
প্রিয় নেতার ঐতিহাসিক এ সংবর্ধনায় যোগ দিতে রাজধানী ঢাকার লাখ লাখ নেতাকর্মী আগেই প্রস্তুত। সারাদেশের জেলাগুলো থেকেও এরইমধ্যে সংবর্ধনাস্থলে এসে জড়ো হয়েছেন বহু নেতাকর্মী, এখনই একেবারে টইটম্বুর বলা চলে। ঝাঁকে ঝাঁকে আসছেন আরও হাজারে হাজার।

সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আনতে ১০টি বিশেষ ট্রেন রিজার্ভ করেছে বিএনপি। বাসে-ট্রাকে করেও রওনা হচ্ছেন বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী। ফলে তারেক রহমানকে দেখতে এবং তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সারাদেশের নেতাকর্মীদের জনস্রোত দুদিন ধরে ঢাকামুখী।
দলটির লক্ষ্য, তারেক রহমানের ঐতিহাসিক এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্তত অর্ধকোটি নেতাকর্মী সমবেত করা। সে অনুযায়ী সব পরিকল্পনা প্রস্তুত। বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীদের আসার সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা থাকলেও এরইমধ্যে কয়েক লাখ নেতাকর্মী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় চলে এসেছেন।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ৩০০ ফিটে সংবর্ধনা স্থল সরেজমিন ঘুরে এবং কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে ঢাকা মেইল প্রতিবেদক জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে বাসে এবং ট্রাক ভাড়া করে তারা ঢাকায় এসেছেন। অনেকে এসেছেন ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল নিয়ে, কেউ কেউ এসেছেন নিজের ভাড়ায় টানা অটোরিকশায়।

এছাড়া ধানের শীষ দিয়ে বাইসাইকেল সাজিয়ে সামনে তারেক রহমানের বড় ছবি টাঙিয়ে ভোলা থেকে সেই বাইসাইকেল নিয়েই ঢাকায় রওনা হয়েছেন, জেলা প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এমন চিত্রও দেখা গেছে। পাশাপাশি তারেক রহমানের টানে ঢাকায় এসে ধান দিয়ে বানানো জামা পরেও ঘুরতে দেখা গেছে অনেককে।
সর্বোপরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশজুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। সংবর্ধনাস্থলে আসা অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা গেছে, তারা ঈদের আনন্দ অনুভূব করছেন। কারণ, কয়েক ঘণ্টা পরই দেখা পাবেন প্রিয় নেতার।
এদিকে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। বিএনপির পক্ষ থেকেও রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এখন শুধু তার দেশে ফেরার অপেক্ষা। এই অপেক্ষা তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার, অপেক্ষা বিএনপির কয়েক কোটি নেতাকর্মীর।

জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১২টায় উড়বে তারেক রহমানকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইট। সেটি দুবাই হয়ে প্রথমে অবতরণ করবে সিলেট বিমানবন্দরে। সেখান থেকে ঢাকায় পৌঁছাবে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকায় নেমেই প্রথমে ৩০০ ফিটে দলীয় সংবর্ধনায় যোগ দেবেন তারেক রহমান। সেখানে একমাত্র বক্তা হিসেবে তিনি ভাষণ দেবেন। এরপর যাবেন এভারকেয়ার হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন মা খালেদা জিয়াকে দেখতে।
পরদিন শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাবা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতে যাবেন তারেক রহমান। সেখান থেকে যাবেন সাভারের জাতীয় স্মৃতি সৌধে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বীরযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে। এছাড়া একই দিন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শরীফ ওসমান হাদির কবরও তিনি জিয়ারত করবেন বলে জানা গেছে।

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কারাগারে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয় তারেক রহমানের ওপর। ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি সবগুলো মামলা থেকে জামিন পান। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। আর ফেরেননি। সপরিবারে থাকছিলেন সেন্ট্রাল লন্ডনের এডমন্টনে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার সব বাধা দূর হয়ে যায়। অবশেষে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) তিনি ফিরছেন।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যেসব বাধা সৃষ্টি হয়েছিল, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে এলে সেসব দূর হয়ে যাবে, গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম হবে।
এএইচ