images

রাজনীতি

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচন বিলম্বিত করা: মুজাহিদুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সদস্য ও সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‌‘সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাগুলো ঘটানোর পেছনে একটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে— নির্বাচনকে বিলম্বিত করা। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং গভীরভাবে ভাবতে হবে। সম্প্রতি দেশ একটি ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গেছে, যেখানে জনগণের প্রধান দুটি দাবি ছিল— ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং বৈষম্যের অবসান।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ‘স্টার নির্বাচনী সংলাপ: আপনার দল, ভোটারের প্রশ্ন’ শিরোনামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

এক আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই গণঅভ্যুত্থানের পর যারা অনির্বাচিত সরকার রেখে সুবিধা ভোগ করেছে, তারাই নতুন রূপে আবারও ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসনের চেষ্টা করতে পারে। এসব ষড়যন্ত্র থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।’

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হলেও শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দেশের বর্তমান অবস্থা বুঝে একটি সামগ্রিক পরিবর্তনের দিকে যেতে হবে। এক কথায় বলতে গেলে, সর্বাঙ্গে ব্যথা— ওষুধও দিতে হবে সর্বাঙ্গে।’

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্ত এলাকাগুলো ছিল ঘুস, নারী নির্যাতন ও অবিচারমুক্ত। সেখানে জনগণের শক্তি ও বুদ্ধির ওপর ভর করে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠেছিল।’

মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আজ আমাদের সামনে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের নতুন অঙ্গীকার গ্রহণ করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বড় দলগুলোর ওপর নির্ভর না করে নতুন রাজনৈতিক পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। নতুন প্রজন্মের শক্তি ও সক্ষমতার ওপর আস্থা রেখে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোতে হবে। গণঅভ্যুত্থান ছিল স্বতঃস্ফূর্ত; এটিকে কোনো মাস্টারমাইন্ড বা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে ব্যাখ্যা করা ঠিক নয়।’

রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ক্ষমতায়নকে প্রধান বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে সেলিম বলেন, ‘প্রশাসন ও রাজনীতিতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। পরিকল্পনা শুধু রাজধানীতে বসে করলে হবে না; ইউনিয়ন ও থানা পর্যায় থেকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। জাতীয় বাজেটের একটি নির্দিষ্ট অংশ আইনি ও বাধ্যতামূলকভাবে স্থানীয় সরকারের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে।’

নির্বাচন ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে টাকার খেলা চলছে। তফসিল ঘোষণার আগেই বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে, যা নির্বাচন কমিশনের নজরে আনা জরুরি। জামানতের টাকা ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করায় দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ কার্যত প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতি মূলত অর্থনীতিরই প্রতিফলন। লুটপাটের অর্থনীতি থাকলে লুটপাটের রাজনীতিই তৈরি হবে। বাজারকেন্দ্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতি, মনোনয়ন ও ক্ষমতা সবই পণ্যে পরিণত হয়। এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে ঘুস ও দুর্নীতিকে সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য করতে হবে।’

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জানান, মুক্তিযুদ্ধ পুঁজিবাদী বাংলাদেশ গড়ার জন্য নয়, সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে একটি নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য হয়েছিল। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সিপিবি আজও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

এএইচ/এফএ