জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২২ পিএম
বীরদের যথাযথ শ্রদ্ধা না করলে এ দেশে আর কোনো মায়ের গর্ভে বীর জন্মাবে না—এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধারা যেমন দেশকে ভিনদেশীদের জুলুম থেকে মুক্ত করেছেন, তেমনি ২৪ জুলাই বিপ্লবে অংশ নেওয়া যোদ্ধারা জাতিকে ফ্যাসিবাদের কবল থেকে রক্ষা করেছে।
সোমবার বিকেলে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ২৪ জুলাই আন্দোলন না হলে আজ নির্বাচন শব্দটিও উচ্চারণ করার সাহস থাকত না। সিইসি চেয়ার পেতেন না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হতো না; বরং অনেক উপদেষ্টা জেলে বা আয়না ঘরে থাকতেন। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশের স্বার্থে যারা জীবন ও রক্ত দিয়েছেন—আমরা সবাইকে সমানভাবে শ্রদ্ধা ও স্মরণ করি।
জামায়াত আমির অভিযোগ করেন, জুলাই বিপ্লবের আগে জাতি টানা ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের জুলুমের শিকার হয়েছে এবং ওই সময়ে অসংখ্য সহযোদ্ধা হারাতে হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে জুলাইয়ের অন্যতম বীর ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে উল্লেখ করে জাতিকে ব্যথিত করেছেন। তিনি সিইসিকে জাতির সামনে ব্যাখ্যা দেওয়ার আহ্বান জানান; অন্যথায় জাতি পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে বলেও সতর্ক করেন।
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভক্তি নয়, ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচিত হলে সকল ফ্যাসিবাদবিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করবে। তবে শর্ত হিসেবে তিনি দুর্নীতিমুক্ত শাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাধা না দেওয়া এবং সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দাবি করেন। তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে আত্মনির্ভর, তারুণ্যনির্ভর ও মর্যাদাশীল; যেখানে মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষা নিশ্চিত হবে এবং কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করা হবে না।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। ন্যায়ের পক্ষে সাংবাদিক সমাজকে জামায়াত সহযোগিতা করবে; সমালোচনা হলেও তা হতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থে। স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ সাংবাদিকদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের চেতনা ৫৪ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি; বরং ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রকে পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেছে। তিনি ফ্যাসিবাদের পতনের পর ঐক্যে ফাটল ধরার কথা উল্লেখ করে সকল ষড়যন্ত্র রুখতে ঐক্যের আহ্বান জানান।
অপর বিশেষ অতিথি সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণেই বারবার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করতে হয়েছে। তিনি জুলাই যোদ্ধা ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতার সমালোচনা করেন এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নৈতিক দায়িত্বের প্রশ্ন তোলেন।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও অফিস সেক্রেটারি কামরুল আহসান হাসানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ। সভাপতির বক্তব্যে বুলবুল বলেন, ২৪ জুলাইয়ের ৫ আগস্ট হারানো সার্বভৌম শক্তি পুনরুদ্ধার হয়েছে; সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে জুলাই জাতীয় সনদের পক্ষে গণভোটে হ্যাঁ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এআর