নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১০ পিএম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘নির্বাচনকে বানচাল করা এবং গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার উদ্দেশে গণঅভ্যুত্থানে যারা প্রতিচ্ছবি ছিলেন, যারা নায়ক ছিলেন, নেতা ছিলেন এবং যারা অংশগ্রহণকারী ছিলেন, তাদেরকে টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে।’
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা পুরো জাতি দেখেছে। ওসমান হাদিকে যারা হত্যা চেষ্টায় লিপ্ত ছিল, তাদের কিন্তু এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আমরা বলতে চাই, অতি দ্রুত সময়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা এবং আয়োজনের সঙ্গে যারা জড়িত, প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের ভেতরে বাইরে যারা নীলনকশা করছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেফতারের আওতায় আনতে হবে এবং আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
নাহিদ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষারোপ করছে। আমরা মনে করি এই সময়ে আমাদেরকে এই জায়গা থেকে সরে এসে একটা ন্যূনতম জাতীয় ঐক্য রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে বিভক্ত থাকলে ফ্যাসিস্ট শক্তি সবচেয়ে বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত হবে। আমরা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে গণতন্ত্রের যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে চাই।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকের এই দিনে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঠিক প্রাক্কালে মুক্তিযুদ্ধপন্থি লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার যারা স্বাধীনতাকামী ব্যক্তি ছিলেন, তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। বিজয়ের প্রাক্কালে বাংলাদেশের যারা চিন্তাশীল মানুষ ছিলেন, স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন তাদেরকে হত্যা করা হয়, যাতে বাংলাদেশ জাতি হিসেবে মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াতে না পারে।
তিনি বলেন, ৫৪ বছরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করার জন্য লড়াই সংগ্রাম করে যেতে হয়েছে। ২৪-এর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেই লড়াইয়ে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি লড়াইয়ে বুদ্ধিজীবীদের একটি শ্রেণি যেমন পক্ষে ছিল, আবার এক শ্রেণি বিপক্ষেও ছিল। আওয়ামী লীগের সময়ে কিছু বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন নামে আওয়ামী লীগের মতাদর্শ উৎপাদন করে গিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদের পক্ষে সম্মতি তৈরি করেছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা ৫ আগস্টের পরে এই সময়েও সেটি দেখতে পাচ্ছি। বুদ্ধিজীবীর নাম করে ৫ আগস্টের বিরুদ্ধে, জুলাইয়ের বিপক্ষে এবং গণহত্যার পক্ষে সম্মতি তৈরি করে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি জনগণের পক্ষের বুদ্ধিজীবীরা সবসময় ছিলেন, তারা আছেন, তারা কথা বলবেন। দেশের যে চিন্তার স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতার লড়াই ছাড়া আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অপূর্ণ।
তিনি বলেন, আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আমরা তাদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে চাই। আমরা চাই এই সময়ের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবীরা সেই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে ৪৭,৭১ এবং ২৪ এর আমাদের যে ঐতিহাসিক লড়াই ছিল, সেই লড়াইকে ধারণ করে বাংলাদেশকে একটা আত্ম-মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক।
এ সময় সারজিস আলম ও সাইফ মুস্তাফিজসহ এনসিপির অন্যান্য নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
এএইচ