বোরহান উদ্দিন
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫০ এএম
- ঢাকার আলোচিত ৪ আসনে নিজস্ব প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি
- এনসিপি ও খেলাফত মজলিসের কেউ মনোনয়ন পাননি
- ছাড় দেওয়ায় স্বস্তিতে পার্থ-ববি হাজ্জাজ
- দলীয় চার প্রার্থী থাকায় এখনো ফাঁকা ঢাকা-২০ আসন
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৬ আসনে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। যেখানে প্রথম দফায় ঘোষণার পর স্থগিত হওয়া মাদারীপুর-১ আসনেও প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। সে হিসেবে এখন পর্যন্ত মোট ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল বিএনপি। বাকি ২৮ আসনের তালিকা ‘যথাসময়ে’ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তবে ঢাকার যেসব আসনে সমঝোতা করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), খেলাফত মজলিসের নেতাদের দেওয়ার জোর আলোচনা ছিল সেখানেও প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। ফলে আপাতদৃষ্টিতে আসন সমঝোতার গুঞ্জন থামিয়ে দিয়েছে দলটি।
যদিও ঢাকার তিনটি আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এর মধ্যে ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএমের ববি হাজ্জাজ এবং ঢাকা-১৭ আসনে আন্দালিব রহমান পার্থ বিএনপির সমর্থন পাবেন-এ কারণে আসন দুটিকে নিজস্ব প্রার্থী দেয়নি দলটি। আর ঢাকা-২০ আসনে দলের একাধিক শক্ত প্রার্থী থাকায় তালিকা চূড়ান্ত করতে সময় লাগছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমাদের অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যারা আছেন, তাদেরগুলো এবং আমাদের দুই একটা ডিসিশন হবে, সেগুলো আমরা আরো পরে ঘোষণা করব। বাকিগুলো আমরা যথাসময়ে ঘোষণা করব।’
কিছুদিন ধরে আলোচনা ছিল, বিএনপি ঢাকার কয়েকটি আসন শরিক বা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে দলের এমন নেতাদের জন্য ছাড় দিতে পারে। বিশেষ করে ঢাকা-৭, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০ ও ঢাকা-১৮ আসনে সম্ভাব্য সমঝোতার গুঞ্জন ছিল তীব্র। কিন্তু বৃহস্পতিবার সব আলোচনাকে ‘পেছনে ফেলে’ চার আসনেই দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করে বিএনপি।

দলের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোতে ঝুঁকি নিতে চায়নি বিএনপি। একাধিক শরিককে জায়গা দিলে নির্বাচনী মাঠে নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা ছিল। আর সমঝোতার প্রতিশ্রুতি পূরণে অক্ষম হলে সেটি ‘বিপরীতধারার ক্ষোভে’ পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত পরিচিত মুখ, সংগঠনে সক্রিয় ও মাঠপর্যায়ে গ্রহণযোগ্য নেতাদেরই বেছে নিয়েছে বিএনপি।
বিশেষ করে নবগঠিত দল এনসিপির নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সমালোচনা করে একের পর এক বক্তব্য দিয়েছেন; পাশাপাশি নির্বাচনে তাদের অবস্থানও স্পষ্ট ছিল না। এসব কারণে শেষ পর্যন্ত ঢাকার আসনগুলোতে তাদের জন্য ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। তবে শেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি বদলে গেলে কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকতেও পারে—এমন ইঙ্গিত মিলেছে দলীয় সূত্রে।
কোন আসনে কাকে প্রার্থী করল বিএনপি
ঢাকা-৭ আসনটি খেলাফত মজলিসের মাওলানা মামুনুল হকের জন্য ছাড়ার আলোচনা ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে মাঠে অবস্থান দুর্বল এবং জোটগত অনিশ্চয়তার কারণে ঝুঁকি না নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছে।
ঢাকা-৯ আসনটিকে এনসিপির ডা. তাসনিম জারার জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে- এমন গুঞ্জন ছিল প্রবল। একই সঙ্গে দলে আলোচনা ছিল মির্জা আব্বাস আগে থেকেই ঢাকা-৮ এ প্রার্থী হওয়ায় তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে বাদ দেওয়া হতে পারে এই আলোচনা আগেই ছিল। শেষ পর্যন্ত দুজনের কাউকেই না দিয়ে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদকে বেছে নেয় বিএনপি।
ঢাকা-১০ আসনটিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার নাম আলোচনায় ছিল। বিএনপি তাকে ‘সমঝোতার প্রার্থী’ করতে পারে এমন খবরও ছড়িয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলমকে প্রার্থী করেছে বিএনপি। অবশ্য এই আসনে ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীমও বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর নাসির উদ্দিন অসীম ফেসবুক পোস্টে নেতাকর্মী-সমর্থকদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, ‘ঢাকা-১০ আসনে আমাকে যারা ভালোবাসেন, তাদের সকলের প্রতি অনুরোধ, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আপনারা সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণসহ ম্যাডামের সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। আমাদের ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে ম্যাডামের জীবন আমাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অতীতের মত আপনাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।’
ঢাকা-১৮ আসনে আলোচনায় ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। কিছুদিন আগে তিনি বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন।
আরও পড়ুন
বিএনপিতে ‘সৌভাগ্যবান’ ২৪ পরিবার
বয়সে তরুণ হলেও জুলাই আন্দোলনে পরিবার এবং তার ভূমিকার কারণে এই আসনে এক ধরণের ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল স্নিগ্ধ’র জন্য। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি তরুণ রাজনীতিক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনকে মনোনয়ন দেয়।

ঢাকার যে ৩ আসনে এখনো প্রার্থী নেই
ঢাকার ১৯টি আসনের মধ্যে ১৬টি আসনে বিএনপি নিজ দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও এখনো তিনটি আসন প্রার্থীশূন্য রয়েছে। সেখানে যুগপদ আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে থাকা দুই দলের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টি আগেই পরিষ্কার হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-১৩ আসনে ববি হাজ্জাজ এবং ঢাকা-১৭ আসনে আন্দালিব রহমান পার্থ ইতোমধ্যেই বিএনপির সমর্থনে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় এই দুই আসন শরিকদের জন্য ছাড়ছে বিএনপি।
অন্যদিকে ঢাকা-২০ সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়েছে বিএনপি। এখানে দলের চারজন শক্ত প্রার্থী থাকার কারণে চূড়ান্ত নাম ঘোষণা আটকে আছে।
আরও পড়ুন
এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন- ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তমিজ উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী যুবদলের ঢাকা জেলা সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস (মুরাদ), জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ এবং ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান (অভি)।
বিইউ/এমআর