নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২৮ পিএম
ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে গত কয়েক দিন ধরেই ভিড় লেগেই আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার খোঁজ নিতে বিভিন্ন স্থান থেকে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান করছেন। তবে তাদের অনেকের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন উপস্থিত সাধারণ মানুষ। কারণ, সেখানে দাঁড়ানো বেশির ভাগ কর্মীকে দেখা গেছে সেলফি তুলতে, লাইভ ভিডিও করতে এবং আড্ডায় মেতে থাকতে।
হাসপাতালের প্রবেশমুখে দুপুরে দেখা যায়—একদল তরুণ কর্মী মোবাইল ফোন উঁচিয়ে ছবি তুলছেন। কেউ সেলফির জন্য পোজ দিচ্ছেন, কেউ আবার লাইভে এসে নিজেদের উপস্থিতির কথা জানাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে উল্লাসধ্বনিও শোনা যায়। অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের অভিযোগ, এসব কারণে জায়গাটিতে অকারণে ভিড় বাড়ছে।
এভারকেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন সাধারণ মানুষ বলছিলেন, এখানে কেউ আসতে পারে, দোয়া করতে পারে। কিন্তু সেলফি তোলা বা ভিডিও করতে এসে পথ আটকে দিলে সমস্যা হয়।
মিরপুর থেকে সকালে হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, হাসপাতালের সামনে স্বাভাবিক পরিবেশ থাকার কথা, কিন্তু গত কয়েক দিনে সেটা ঠিক থাকছে না। আমরা যারা রোগীর খোঁজ নিতে বা স্বজনকে দেখতে এখানে আসি, তাদের জন্য ভিড়টাই বড় সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। কিছু নেতাকর্মী দেখা গেল সেলফি তুলছে, ব্যানার নিয়ে দাঁড়াচ্ছে, লাইভ ভিডিও করছে। এতে পথ আটকে যাচ্ছে, সবার চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স আসা–যাওয়া করতেও অসুবিধা হয়। হাসপাতাল তো আনন্দ করার স্থান নয়; এখানে মানুষের দুঃসময়ের মুহূর্ত চলছে। রাজনৈতিক মত থাকতেই পারে, কিন্তু আচরণে সংযম দরকার। সবার আগে চিকিৎসার পরিবেশ রক্ষা করা উচিত, এটুকু সচেতনতা অনেকের নেই।
কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে এসেছে বিএনপি কর্মী মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, এটা সত্যি যে কিছু তরুণ কর্মীর আচরণ আমাদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করছে। অনেকে আন্তরিকভাবে আসছেন, খোঁজ নিচ্ছেন—এটা স্বাভাবিক। কিন্তু কয়েকজন সেলফি তুলছে, ভিডিও করছে, লাইভ দিচ্ছে—যা হাসপাতালের পরিবেশের সঙ্গে যায় না। দলের ভাবমূর্তিও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা বারবার বলছি, সংবেদনশীল সময়ে দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি। ভিড় বাড়লে রোগীর চিকিৎসায় প্রভাব পড়তে পারে। যারা আসবেন, তারা যেন শান্তভাবে দাঁড়ান, ভিড় না বাড়ান—এটা আমরা সংগঠনগতভাবে নজরদারি করছি। দলের সিনিয়র নেতারাও সবাইকে সচেতন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মানবিক পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলাই সবচেয়ে বড় বিষয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জরুরি সেবার সামনে ভিড় হলে রোগী পরিবহন এবং চিকিৎসা–সুবিধা ব্যাহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের অনুরোধ করা হচ্ছে বারবার।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কয়েক দফা অনুরোধ করেও ভিড় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। তবে তারা বলছেন, পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক রাখতে তারা নিয়মিত নজরদারি করছেন।
দলের এক মধ্যম সারির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণ জরুরি। কিছু কর্মীর কারণে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ ঘটনায় বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—একটি সংবেদনশীল সময়েও নেতাকর্মীদের এমন আচরণ কি যথাযথ? কেউ লিখেছেন, দোয়া করা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেলফি ও লাইভ ভিডিও এত বড় ভিড় সৃষ্টি করছে যে মানুষের চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, রাজনৈতিক সমর্থন থাকতেই পারে, কিন্তু হাসপাতালের পরিবেশ রক্ষা করা উচিত।
এএইচ/এআর