images

রাজনীতি / জাতীয়

প্রতিহিংসা মুক্ত মানবিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চান তুলি

নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৬ এএম

* জননিরাপত্তা ও মাদক বিস্তার রোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার
* তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি, ক্রীড়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা
* নির্বাচিত হলে জননিরাপত্তাকে প্রথম অগ্রাধিকার দেবেন
* রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ইতিবাচক উদাহরণ দাঁড় করাতে
* তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নকে বড় গুরুত্ব দেবেন
* গুম হওয়া ভাইয়ের আন্দোলন থেকেই রাজনীতি
* বনগ্রাম এবং কাউন্দিয়ায় সেতু নির্মানে গুরুত্ব থাকবে

ঢাকা-১৪ আসনের নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সানজিদা তুলি। যিনি একই সঙ্গে গুম হওয়া ভাই সাজেদুল ইসলাম সুমনের সন্ধানের আন্দোলনে বহু বছর ধরে সক্রিয়। গুম— নির্যাতনের দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পেরিয়ে তিনি এখন রাজনীতির মূল মঞ্চে দাঁড়িয়ে মানবিক, প্রতিহিংসাহীন রাজনৈতিক চর্চার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। তুলি জানান, ভিন্ন রাজনৈতিক মতের কারণে নিখোঁজ হওয়া ভাই এবং শত শত ভিক্টিম পরিবারের বেদনাই তাকে মূলত রাজনীতিতে যুক্ত করেছে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবার আগে প্রতিহিংসার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী বা কোনো প্রতিষ্ঠান যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নাগরিকের অধিকার লঙ্ঘন না করে— এটাই তার মানবিক রাজনীতির প্রথম শর্ত। তিনি বলেন, ‘মানুষ খুব বেশি কিছু চায় না; তারা শুধু নিরাপদে, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চায়।’ তুলির নির্বাচনে আসা ও কেমন রাজনীতির প্রতিফলন ঘটাতে চান বা কি কি তার প্রতিশ্রুতি রয়েছে বিস্তারিত কথা বলেছেন ঢাকা মেইলের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল হাকিম এর সঙ্গে। পাঠকদের জন্য তার একান্ত সাক্ষাৎকার নিচে তুলে ধরা হলো-

ঢাকা মেইল: আপনার নির্বাচনী প্রচারণা কেমন চলছে আর কীভাবে কাজ করছেন?
সানজিদা তুলি: সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারণা করছি এবং নির্বিঘ্নভাবে করার চেষ্টা করছি। কারণ, ঢাকা-১৪ এলাকাটা অনেক বড়-দারুস সালাম, শাহ আলী, মিরপুর—তারপর রয়েছে সাভারের বনগ্রাম এবং কাউন্দিয়া-এই দুইটা ইউনিয়নসহ অনেক ভোটার। এখানে সেই এলাকাগুলো সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, যতটুকু সম্ভব জনসভা করে, ডোর-টু-ডোর গিয়ে কভার করার জন্য। সেই জায়গাগুলোতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, মসজিদ, মাদ্রাসা আছে—সবগুলোতে আমাদের প্রচারণা যেন জারি থাকে, সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

eaecc28e-16ea-4244-b71c-e5c0e4206d14

ঢাকা মেইল: রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে আপনি কীভাবে শান্ত প্রচারণা বজায় রাখছেন?
সানজিদা তুলি: আমরা প্রথমেই বলেছি যে প্রতিযোগিতা আছে—অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে, কিন্তু সময়টা আমাদের জন্য অনেক কম। আমার মনে হচ্ছে, এত এলাকায় এত মানুষের কাছে গিয়ে ভালো কাজ করা বা প্রচারণা ও জনগণের কাছে যাওয়ার সময়টা খুব কম। সেই দিকে মনোযোগ দিলে আর অন্য কিছুর দিকে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ নাই। মেডিকেল ক্যাম্প করেছি কয়েকটা গ্রামে। বিশেষ করে বনগ্রামে, তারপর কাউন্দিয়াতে। বিভিন্ন জনসভা হয়েছে। যেসব গ্রামে হয়তো প্রথমবার গিয়েছিলাম, সেখানে মানুষের কাছে যাওয়া, সামনে যাওয়া, ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে।

তারা প্রার্থীকে পোস্টারে বা ব্যানারে বা অনলাইনে দেখেছেন, কিন্তু সামনে গিয়ে যখন তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়, বিশেষ করে মহিলা-মায়েরা, খালারা, বোনেরা- তাদের সামনে যখন যাই, তাদের চোখে একটা অন্যরকম আনন্দ দেখতে পাই এবং প্রায় ১৫ বছর পর তারা ভোট দিতে পারছেন—মানুষের মধ্যে একটা উচ্ছ্বাস কাজ করে তাদের সবার মধ্যে। আর ইনশাআল্লাহ তরুণ প্রজন্ম যারা ভোটার হয়েছে—তাদেরকে স্বাধীনভাবে তাদের চিন্তাধারাগুলো শুনি আমরা উঠানবৈঠকগুলোতে। সেগুলোতে আমরা চেষ্টা করছি সর্বাত্মকভাবে—এলাকাবাসী যাদের আকাঙ্ক্ষা, তাদের চাহিদাগুলো জানা এবং সেই অনুযায়ী আমাদের পরিকল্পনাগুলো করা। তবে এলাকাভিত্তিক প্রয়োজনগুলো একটু ভিন্নÑমিরপুরে একরকম, শাহ আলীÑদারুস সালামে একরকম, আবার বনগ্রাম—কাউন্দিয়াতে একরকম। ওই দুইটা ইউনিয়ন নদীর ওই পারে। তাদের চাহিদা একটা ব্রিজ। যেটা আবার এইদিকে নেই। এখানে আবার জনদুর্ভোগ— যানজট খুব, ট্রাফিক সিস্টেমের ম্যানেজমেন্টটা নাই। এই জিনিসগুলো— এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যাÑ আমরা জানার চেষ্টা করছি এবং সেই অনুযায়ী আমাদের কি পরিকল্পনা থাকবে, সেগুলো নেওয়ার চেষ্টা করছি।

43791aa5-20be-45bb-b627-5b5090e6a8f2

ঢাকা মেইল: নির্বাচিত হলে এলাকাবাসীর দাবিগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন আর নির্বাচিত না হলে কী করবেন?
সানজিদা তুলি: প্রায় যুগেরও বেশি সময় রাজপথেই ছিলাম। মানুষকে সাথে নিয়েই ছিলাম এবং মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য আমরা যারা বলবৎ আইনভঙ্গ, বিচারবহির্ভূত হত্যা—এইসব অন্যায়ের শিকার সকলের অধিকার আদায়ের জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করেছি। একসাথে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয় যখন রাজনৈতিক মাঠে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং যখন আমাদের ধানের শীষের জন্য মনোনীত করা হয়, তখন আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি এবং রাজনৈতিক মাঠেও কাজ করে যাচ্ছি। এলাকায় যেসব সমস্যা রয়েছে, যেমন বললাম ব্রিজের কথা কাউন্দিয়া-বনগ্রামের জন্য। তারপর সেখানে স্বাস্থ্যসেবার জন্য তেমন কোনো হাসপাতাল নাই। প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেগুলোতে আমরা গিয়েছি— সেগুলোর শিক্ষার মান যথেষ্ট নিম্নমানের। যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত, ততটুকু নাই। এটা শুধু ওইপারে না—এইদিকেও একই অবস্থা। যেমন মার্কেটগুলোর সামনে লোডিং—আনলোডিং করার জন্য কোনো জোন নাই। সেই কারণে ব্যাপক রকমের যানজট হচ্ছে, মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হচ্ছে। তারপর ‘রুল অব ল’ না থাকার কারণে মানুষ জননিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বাড়ি থেকে সন্তানকে পাঠানোর পর অভিভাবকরা চিন্তামুক্ত থাকবেন কিনা—সন্তান মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে কিনা। ব্যাপকভাবে প্রতিটি এলাকা থেকেই মাদকের অভিযোগ আসছে— এই জিনিসগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একদম জিরো টলারেন্সে থাকতে হবে। 

আর নিরাপত্তা বলছি এই কারণে— যখন দুর্নীতি বেড়ে যায়, দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি আর মাদক—এই জায়গাগুলোতে সামাজিক প্রতিনিধিদের সামনে আসা উচিত। জনগণের আস্থার জায়গায় যাওয়া উচিত। কারণ তা না হলে সমাজকে ঠিক করা সম্ভব না, জনগণের জন্য কিছু করাও সম্ভব না। এই যে সমস্যাগুলো— রাস্তাঘাটের অপরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এসব তো সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা নিয়মিত কাজ। ১৫ বছর ধরে কারও অপেক্ষা করার দরকার হয়নি- এই কাজগুলো করার জন্য। একটা ব্রিজের প্রয়োজন—খুব ছোট একটা ব্রিজ। চার মিনিট লাগে। ঢাকার একদম সংলগ্ন। আমরা মেগা প্রজেক্ট করতে দেখেছি, মেগা লুট করতে দেখেছি কিন্তু এই ব্রিজটা কেন করা যায় না? আমার মনে হয়, নিয়মিত কার্যক্রম ঠিকভাবে করলেই এ সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যেত। 

ইনস্টিটিউশনগুলো কাজ করে কাদের জন্য? জনগণের জন্য। সেখানে আমাদের অতিরিক্ত কিছু করতে হবে—এটা না। আমাদের ন্যায্য ও মৌলিক কাজগুলোই করতে হবে। যদি আমরা ধানের শীষের বিজয় আনতে পারি আর রাস্তাঘাটের পরিষ্কার—পরিচ্ছন্নতা, বাজারে লোডিং—আনলোডিং জোন, যথাযথ পরিকল্পনা, ডিসিপ্লিনÑ এসব থাকলে অবশ্যই আমার মনে হয় ঢাকা—১৪ এলাকাকে আমরা ভিন্নভাবে দেখতে পাব ইনশাআল্লাহ। আর যদি নির্বাচিত না-ও হই—নাগরিক হিসেবে নাগরিক অধিকার ও জননিরাপত্তার জন্য আমি সবসময় কাজ করে যাব।

7ce7c337-dded-4c03-aa5b-daad0db4f620

ঢাকা মেইল: বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থা পাওয়াকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সানজিদা তুলি: বিগত ১২ বছর নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে গেছি। সেখানে আমার বাংলাদেশ জাতীয় দলের অনেক ভাইদের জন্য কাজ করেছি। অবশ্যই নেতৃবৃন্দ যারা আমার পরম শ্রদ্ধেয় এবং তাদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হই তাদের ভালো কাজ দেখে তাদের দিক নির্দেশনায় সেই জায়গা থেকে আসলে আমার মনে হয় যে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। আমাদেরকে এমনভাবে চিন্তা করা হলো যেন আমরা জাতীয় পর্যায়ে কাজ করি যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করি। এই সুনামটা যেন অক্ষণ্ন রাখতে পারি এবং জনগণের পাশে বিগত সময় যেভাবে দাঁড়িয়েছি সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করব ভবিষ্যতেও দাঁড়াতে। এইটা যদি সুনিশ্চিত করতে পারি ভালো কাজগুলো আসলে আপনাদের সামনে তখন এমনি চলে আসবে। 

দেখা যাবে ভালো কাজের ফলটাও সামনে সেভাবেই চলে আসছে। সেটাই আমার মনে হয় মানুষকে তাদের সম্মানের জায়গাটায় নিয়ে যায় এবং আমার যে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বললেন তাদের আস্থার জায়গাটা ওইখানে। বিশ্বাসের জায়গাটা ওখানেই কারণ বিগত সময়েও অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা আপসীন ছিলাম এবং ততদিনই থাকব যতক্ষণ আদায় না হয়। সেই জায়গাটায় অবশ্যই তারা তাদের বিশ্বাসকে যেন আমরা মর্যাদা দিতে পারি এবং আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এখনো আমাদের মাঝে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছেন সেটা পূরণ করার চেষ্টা করবো। তিনি অসুস্থ এবং তিনি বিগত সময় ছয়বার অসুস্থ ছিলেন, মৃত্যুমুখী ছিলেন তার সেখান থেকে তিনি ফিরে এসেছেন।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন আছেন এবং তারপরেও কিন্তু নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সকলকে একত্রিত করে রাখার সেই আকাঙ্ক্ষাগুলো যেন আমরা সবাই পূরণ করতে পারি এবং সবারই একটাই চাওয়া যেটা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। সেই স্বার্থে যেন আমরা সবাই ধানের শীষের জন্য কাজ করি। আমরা বিগত ১৫ বছরে ঘুম খুন হত্যা হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পার হতে হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পার হতে হয়েছে এবং যেই সন্তান ছাত্র-জনতা, শ্রমিক যারা আমাদেরকে এই জুলাই এনে দিয়েছেÑ আমি এখন আপনার সাথে কথা বলতে পারছি। তাদের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা যেন পূরণ করতে পারি ইনশআল্লাহ ওই বাংলাদেশটার দিকেই আমরা যাব।

ঢাকা মেইল: গুম হওয়া ভাই সুমনের আন্দোলন থেকে নির্বাচন— এই পথচলাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
সানজিদা তুলি: আমার ভাই সাজেদুল ইসলাম সুমন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্য রাজনীতি করতেন, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার সঙ্গে আরও যারা গুম হয়ে গেছে, সবাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কর্মী ছিলেন, নেতৃত্বে ছিলেন। তো সেই কারণেই শুধুমাত্র তাদেরকে ভিন্ন দল, ভিন্ন মতের জন্য বিগত সময়ে গুম করা হয়েছে। আর এই বিভৎস বর্ণনাগুলো এখন ইনকয়েরি কমিশনের মাধ্যমে আরও প্রমাণ-নথিসহ আসছে। অনেকে ফেরত এসেছে— আরমান ভাইদের মতো, মাইকেল চাকমাদের মতো—কিন্তু অনেক বড় একটা সংখ্যা ফেরত আসেনি। যেটা আমার ভাই সাজেদুল ইসলাম সুমন, ইলিয়াস আলী ভাইসহ অকেনকে ফেরত আসেনি। কিন্তু আমরা অপেক্ষা করে আছি। প্রতিদিন অপেক্ষা করি। আমার মা এখন ৭৫ বছর বয়সী। উনি অপেক্ষা করে থাকেন— কেউ আসলে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, আমার ছেলেকে দেখেছো? আমার ছেলেকে ফেরত দিবা নাকি? ওই কষ্টটা থেকে। আমাদের ওই বয়ানটা যদি না থাকে তাহলে হয়তো ওই নামগুলো সামনে আসবে না। আমরা তাদের নামগুলোই জারি রাখতে চাই— যেন লুকায়িতদেরকে সামনে নিয়ে আসতে পারি সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি। আর রাজনীতিতে আসাটা—তখনও কিন্তু ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে একটা বড় অংশেই আমরা রাজনীতির মধ্যেই ছিলাম। কারণ যখন সত্য উচ্চারণ করতে হতো এবং আওয়াজ তুলতে হতো—তখন রাজনীতির অংশ হয়েই থাকতে হতো। তো ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে এখনো আমরা আছি।এবং যতদিন আমরা ন্যায়বিচার না আনতে পারব—ততদিন থাকব।

ঢাকা মেইল: গুম—নির্যাতন নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এখন আপনি নির্বাচিত হলে বা নির্বাচিত না হলেও এই পরিবারগুলোর জন্য আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
সানজিদা তুলি: আমি মনোনীত প্রার্থী—এটা একটা সিম্বল, যে পরিবর্তনের একটা আভাস বা দিকনির্দেশনা আমরা এখানে পাচ্ছি। একজন ভিকটিম ফ্যামিলির সদস্যকে দেয়া হলো প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব—ধানের শীষের হয়ে। এটা অনেক বড় সম্মান। এবং সকলে—যত ভিকটিম ফ্যামিলি আছে—তারা মনে করবেন, একজন প্রতিনিধি তাদের হয়ে আছেন। যদি নির্বাচিত সরকার গঠন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, তাহলে যদি আমরা সংসদে যাই—তাহলে তাদের হয়ে বলার একজন সেখানে থাকবে। আরেকটা বলতে চাই—ফ্যাসিজমের যারা আছে, যারা বিগত সময়ে মানুষকে নির্যাতন করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তারা দেখতে পাবেন যে একজন, যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল আমাদের আওয়াজ নিয়ে সে আজ প্রতিনিধিত্ব করছে। এই সিম্বলটা ওখানে থাকা দরকার ছিল। তো সেই জায়গা থেকে আমার মনে হয় অবশ্যই—এটাই পরিবর্তনের রাজনীতি। আমরা সবাই পরিবর্তন চাই। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে তো পরিবর্তন মনে হয় এভাবেই শুরু হচ্ছে।

ঢাকা মেইল: নির্বাচনী প্রচারণায় আপনারা ‘মানবিক রাজনীতি’র যে কথা বলছেন, এর বাস্তব রূপ কী হতে পারে বা অন্যরা কীভাবে অনুসরণ করতে পারে?
সানজিদা তুলি: বিগত সময়ে যেমন— বিরোধী দল করার জন্যই শুধুমাত্র খুন করা হচ্ছে, নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিহিংসার যে রাজনীতি- রাজনীতি প্রতিহিংসা হতে পারে না। আমাদের বাংলাদেশে এটা ছিলই না। বিগত ১৫ বছর আমরা এটা সাফার করেছি। এখন আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব— শুধু একজন সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে না— আমাদের দায়িত্ব এই প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসা এবং মানবিক রাজনীতির জায়গাটা সৃষ্টি করা। মানুষের মানবিক অধিকার আদায়ের জায়গাটা তৈরি করা এবং আমার মনে হয়, কোনো রাষ্ট্রীয় বাহিনী বা রাষ্ট্রীয় ইনস্টিটিউশন যেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মানুষের অধিকার লঙ্ঘন না করে—মানবাধিকার লঙ্ঘন না করে—এটা আমাদের কাছে প্রথমেই প্রাধান্য পাবে। আমরা এই কারণেই রাজনীতির অংশ হতে চাই—যেখানে প্রতিহিংসার কোনো রাজনীতি থাকবে না।

ঢাকা মেইল: রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে আপনি কীভাবে শান্ত প্রচারণা বজায় রাখছেন?
সানজিদা তুলি: আমার ঢাকা—১৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আরমান ভাই। সাধারণত অনেক জায়গায় দেখা যায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে নানা মন্তব্য করা হয়। আমার মনে হয় এর দরকার নেই। সবাই যদি ভালো কাজ করে—সেটাই যদি উদাহরণ হয়— তাহলে জনগণ ভালোই বিচার করবে কাকে সমর্থন দেবে। সবসময়ই খারাপ মন্তব্য, নিন্দা বা প্রতিহিংসার রাজনীতি করার উদ্দেশ্য রাজনীতি হওয়া উচিত না। এখনকার নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারা বদলে গেছে। আমরাও চাই না এই সংস্কৃতি থাকুক— রাজনীতির মধ্যে যে অপসংস্কৃতি ছিল, সেটা না থাকুক। ওটা ছাড়াও মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য দাঁড়ানো যায়, লড়া যায় এবং আমরা ঢাকা—১৪কে সেই জায়গায় দেখছি।

ঢাকা মেইল: বড় একটা ভোটার তো তরুণ প্রজন্ম। তাদের নিয়ে কোনো ভাবনা আছে?
সানজিদা তুলি: অবশ্যই তাদের নিয়ে ভাবনা আছে। এবং আমাদের এখন যে ইশতেহার বা এজেন্ডা বললেনÑওটা পুরোপুরিই সেই ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করেই নেওয়া হয়েছে। কারণ এখন আর আমরা আগের মতো রাজনীতির এজেন্ডায় কাজ করছি না। তরুণ প্রজন্ম কী দেখতে চাচ্ছে—তারা জুলাই অভ্যুত্থান করে পরবর্তী বাংলাদেশে কী দেখতে চায়—সেভাবেই করতে হবে। অন্য কোনো পথ নেই। তরুণদের জন্য আমরা কী করতে পারি—যেমন আপনি দেখেন, প্রত্যেকটা এলাকায় মাঠ নাই। কিন্তু তরুণরা বিভিন্ন দিকে ধাবিত হচ্ছে—মাদক, ইন্টারনেট—এভরিওয়্যার। তো সেই জায়গাগুলোতে আমাদের অনেক কিছু করার আছে। যদি আমরা তাদের অনলাইনে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে অনেক বড় একটা সেক্টর বা এরিয়ায় কাজের সুযোগ তৈরি হবে। তারপর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারিকুলামে প্রশিক্ষণভিত্তিক বিষয় যোগ করা যায়। এগুলো যদি এড করতে পারি, তাহলে তাদের জন্য বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করা যাবে। অনলাইনভিত্তিক যেসব সেক্টর আছে—সেখানে বিদেশি ভাষার ট্রেনিং থাকে। সেই ক্ষেত্রে আমরা তাদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিদেশে পাঠাতে পারি। অনেকে যেতে চায়Ñ তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ অনেক। শিক্ষাক্ষেত্রেও আমাদের পর্যাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় নেই; আর যেগুলো আছে, তাদের অবস্থাও খুব ভালো বলা যায় না। তো সেই ক্ষেত্রে কী ধরনের নিশ্চয়তা দেওয়া যায়—এই জায়গাগুলোতেও আমাদের অনেক কাজ করার আছে।

ঢাকা মেইল: স্থানীয় কোনো চ্যালেঞ্জ বা ব্যারিস্টার আরমানের প্রার্থী হওয়া নিয়ে বাড়তি কোনো চ্যালেঞ্জ মনে করছেন কিনা?
সানজিদা তুলি: না, বাড়তি কোনো চাপ নাই, সবাই সবার জায়গায় বড় এবং সবাই যথার্থভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন। আমরাও নির্বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব যেন ধানের শীষকে বিজয়ী করে আনতে পারি। কারণ এটাই লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্যেই আমরা সাধারণ জনগণ কাজ করে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ আস্থা আছে— জনগণের বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে আসতে পারব। ইনশাআল্লাহ ধানের শীষকে বিজয়ী করতে পারব।

ঢাকা মেইল: জয়ী হলে প্রথম ১০০ দিনে কোন তিনটি কাজকে অগ্রাধিকার দেবেন?
সানজিদা তুলি: প্রথম কাজ হবে মিরপুরের ট্রাফিক সিস্টেম—হোল্ড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটি ঠিক করা। কারণ জনগণ যাতায়াতে অসুবিধায় পড়লে তাদের পুরো দিনের সিস্টেমটাই ভেঙে যায়। দ্বিতীয়ত, দ্রব্যমূল্য এখন অনেক বেড়ে গেছে– এটার কোনো লাগাম নেই। এসব তখনই হয় যখন সঠিক পরিকল্পনা থাকে না। বাজারগুলোর অবস্থাও ঠিক নেই—লোডিং-আনলোডিংয়ের কোনো জোন নেই। রাস্তায়ই লোডিং-আনলোডিং হচ্ছে। তাই জনগণের সুবিধার্থে প্রপার জোন করতে হবে। পরিকল্পনা সঠিক হলে কাজগুলো ধীরে ধীরে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। এখন আমরা যেসব সমস্যাগুলো দেখিÑসেগুলো কাজ না করার ফল। মাদকের ব্যাপক বিস্তার, জননিরাপত্তার অভাব—এসবই তার প্রমাণ। তাই আমার প্রথম অগ্রাধিকার থাকবে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারণ উন্নয়ন ধীরে ধীরে সব কাজের মধ্য দিয়ে আসবে, কিন্তু জননিরাপত্তা আমাকে দায়িত্ব গ্রহণের মুহূর্ত থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ এখন অনেক বেশি কিছু চায় না—নিরাপদে জীবনযাপন করতে চায়। তাই এটা-ই আমার প্রধান অগ্রাধিকার। গ্রামের একটি ব্রিজের কথাও বলেছিলাম—বৃদ্ধ, নারী, তরুণ—সবাইয়েরই চাওয়া ওই ব্রিজটি। এটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ— এ ব্যাপারেও ইনশাআল্লাহ কাজ করব। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, হাসপাতাল—এগুলোও আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে থাকবে।

ঢাকা মেইল: আপনার কোনো সম্ভব্য ইশতেহার আছে কিনা থাকলে আপনার নির্বাচনী এলাকার উদ্দেশ্যে বলবেন কিনা?
সানজিদা তুলি: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৩১ দফা নিয়ে আমরা কাজ করছি, প্রত্যেকটা জায়গায় কানেক্ট করার চেষ্টা করছি- এলাকার জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা সেই জায়গাগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। যেমন— যদি নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়, সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একটি পদক্ষেপ আছে ‘ফ্যামিলি কার্ড’। ফ্যামিলি কার্ড হচ্ছে- যিনি নারী প্রধান থাকবেন, তাকে দেওয়া হবে; তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী তারা পাবেন সেই ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে। তো এটাও তাদের এক অর্থে ক্ষমতায়ন, এবং এটা রিকগনিশন-তারা নেতৃত্বে থেকে পরিবারের দায়িত্বটি গ্রহণ করছেন। পরবর্তীতে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বললে— সেই জায়গাগুলোতেও আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ আছে। এটা শুধু নারীদের জন্য বললাম; সবার ক্ষেত্রেই আমরা চেষ্টা করব যেন সব জায়গায় এরকম প্রায়োরিটি রাখা যায় এবং যাতে সামাজিক ব্যালান্সটা তৈরি হয়। যেমন এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি– নাগরিকের নিরাপত্তা: জননিরাপত্তা, কাজের ক্ষেত্র, সামাজিক ক্ষেত্র, রাজনীতি-সব জায়গাতেই সেই নিরাপত্তা নাই। আপনারা দেখছেন যে অনলাইন বুলিং ইত্যাদি জিনিস অনেকটাই বেড়ে গেছে। তো সব জায়গাতেই চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের প্রয়োজন আছে। সব জায়গাতেই যেন আমরা সেই নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করতে পারি। সবাইকে নিয়ে সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাব।

এএইচ/