images

রাজনীতি

হাসিনার মৃত্যুদণ্ড: হুমকি-ধামকি দিয়ে ‘লাপাত্তা’ আওয়ামী লীগ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে এই রায় ঘোষণা শেষের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। 

রায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মাধ্যমে পরিস্থিতি ঘোলাটের করার জন্য বিভিন্ন নাশকতার হুমকি দিলেও কার্যত ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের উপস্থিতি শূন্য দেখা গেছে। রায়কে ঘিরে যেকোনো অপতৎপরতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

রাজধানীতে যান চলাচল বিকাল পর্যন্ত স্বাভাবিক দেখা গেছে। অনেক এলাকায় ছিল তীব্র যানজট। সারাদিন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে আওয়ামী লীগ কিছু ঝটিকা মিছিল করলেও হাসিনার রায়ের পর এমন কিছুর খবর পাওয়া যায়নি।

তবে রায় ঘোষণার আগের রাতে রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় ফের ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী; দোয়েল চত্বর থেকে শিক্ষাভবনমুখী সড়কও বন্ধ রাখা হয়েছে। 

গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে সেন্ট্রাল রোডে পরিবেশ উপদেষ্টা  রিজওয়ানা হাসানের বাসায় লক্ষ্য করে হেলমেট পরা এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলযোগে এসে পরপর দুটি ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়-এমন দৃশ্য ধরা পড়ে সিসিটিভিতে। খবর পেয়ে বোম্ব স্কোয়াড ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বাসায় উপদেষ্টা উপস্থিত থাকলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

রোববার রাতে বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। জনতা ধাওয়া দিলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। মতিঝিলের টিএন্ডটি বাসস্ট্যান্ড, কারওয়ানবাজারে সার্ক ফোয়ারার সামনে, ফার্মগেট রেলক্রসিং, সব জায়গায় একই ধরনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায়। ফার্মগেটে চলন্ত ট্রেনে ককটেল নিক্ষেপের পর স্থানীয়রা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেলা পৌনে তিনটার দিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল তার ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের যে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে প্রতিটি প্রমাণিত হয়েছে বলে রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এগুলোর মধ্যে এক নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছে পাঁচটি অভিযোগ তিনটি কাউন্টে ভাগ করে সাজা প্রদান করা হয়েছে আসামিদের। তাদের বিরুদ্ধে গঠন করা প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ই জুলাই আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা, রাজাকারের নাতি-পুতি বলে উল্লেখ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের 'প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায়' আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র 'আওয়ামী সন্ত্রাসী' ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর আক্রমণ করে। প্ররোচনা, উস্কানি, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, ষড়যন্ত্রের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে এতে।

এই অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কারণ তিনি অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে ‘ইমপ্রিসনমেন্ট টিল ন্যাচারাল ডেথ’ অর্থাৎ আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে।

টিএই/ক.ম