জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইতোমধ্যে সব আসনে প্রার্থী অনানুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টরা নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছেন। দলটির প্রার্থী তালিকায় এবার বিশেষ চমক রয়েছে। তা হলো-বেশিরভাগ প্রার্থীই তরুণ এবং সাবেক ইসলামী ছাত্রশিবির নেতাদের প্রাধান্য। সাবেক শিবির নেতাদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন কেন্দ্রীয় সভাপতি রয়েছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসা শিবির নেতাদের প্রার্থী করেছে জামায়াত। তবে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিদের এক অন্য দল থেকে নির্বাচন করছেন। এবং তিনি সেই দলের প্রধানও।
ছাত্রশিবিরের সাবেক যেসব কেন্দ্রীয় সভাপতিকে জামায়াত আগামী নির্বাচনের জন্য প্রার্থী করেছে, তারা হলেন— দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন ঢাকা-১২, নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কুমিল্লা-১১, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ময়মনসিংহ-৫, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন সিলেট-৬, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালী-২।
এছাড়াও রয়েছেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম লক্ষ্মীপুর-৩, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ডা. মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন মানিক ফেনী-৩, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন ঠাকুরগাঁও-১, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আমির মাওলানা আব্দুল জব্বার নারায়ণগঞ্জ-৪, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান ঢাকা-১১, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত কুমিল্লা-১০, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের অফিস সম্পাদক ড. মোবারক হোসাইন কুমিল্লা-৫, গাজীপুর সদর মেট্রো থানা আমির সালাহউদ্দিন আইউবী গাজীপুর-৪ এবং ২০২২ সেশনে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের ধানমন্ডি থানা আমির হাফেজ রাশেদুল ইসলাম শেরপুর-১।
এসব প্রার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আলোচিত মুখ রয়েছেন, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৬ সালে নির্বাচন করেন। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ও গণমাধ্যমে অতি পরিচিত মুখ। কুমিল্লা-১১ আসনে তার বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন কামরুল হুদা। এই আসনে জামায়াতের প্রভাব বরাবর দৃশ্যমান। এখানে ১৯৯৬ সালের সংসদ ছাড়া আর কখনও বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়নি।
শিবিরের সাবেক সাভাপতিদের মধ্যে অন্যতম সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম। তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের এই প্রভাবশালী নেতা নির্বাচর করবেন সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসন থেকে। তার বিপরিতে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য এম আকবর আলী।
শিবিরের সাবেক সভাপতিদের মধ্যে অন্যতম অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ । তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি। জামায়াতের এই নেতা নির্বাচন করছেন ময়মনসিংহ-৫ থেকে। তার বিপরীতে রয়েছেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু।
এদিকে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হয়েও অন্য দল থেকে নির্বাচন করছেন মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু। বর্তমানে তিনি আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টির চেয়ারম্যান। এর আগে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ছিলেন। ২০১৯ সালে তাকে বহিষ্কার করে জামায়াত। এরপরে তিনি নিজেই দল গঠন করেন। মজিবুর রহমান মঞ্জু ফেনী ২ (সদর) আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
শিবিরের সাবেক সভাপতিদের মধ্যে আরেকজন হচ্ছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচন করছেন। তার বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম।
এছাড়া শিবিরের আরেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও তরুণ নেতা সালাহউদ্দিন আইউবী নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের প্রয়াত পাটমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার আ স ম হান্নান শাহর ছেলে রিয়াজুল হান্নানের সঙ্গে।
জামায়াত নেতারা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের কমিটিতে তরুণদের স্থান দেওয়া হচ্ছে। পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জুলুম-নির্যাতন উপেক্ষা করে দলীয় কর্মকাণ্ডে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তরুণরা। ফলে তরুণ এই নেতারা পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ পদে পৌঁছে গেছেন। সে ধারাবাহিকতায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হিসেবে তরুণ নেতাদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তরুণ আলেম ও পেশাজীবী নেতাদের পাশাপাশি শহীদ পরিবারের কয়েকজন সন্তানও প্রার্থী হচ্ছেন।
স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররাও এসব তরুণ প্রার্থীকে বেশ আগ্রহ ও ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছেন বলে জানা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা তরুণ ও নতুন প্রার্থী হওয়ায় পুরোনো কোনো অভিযোগ বা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে না তাদের। নতুন বাংলাদেশে তারা নতুন আশা জাগাচ্ছেন ভোটারদের মাঝে। এরই মধ্যে ভোটারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তারা। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে তাদের বিজয়ের বিষয়ে অনেকেই আশাবাদী।
টিএই/এআর