ঢাকা মেইল ডেস্ক
০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১১ এএম
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টিতে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপি। তবে বাকি ৬৩টি আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। বিভিন্ন জেলায় একাধিক আসনে প্রার্থী নির্ধারণ স্থগিত রেখেছে দলটি।
সোমবার রাতে তালিকা ঘোষণার পর থেকেই ওই ফাঁকা আসনগুলোতে কারা মনোনয়ন পেতে পারেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফাঁকা আসনগুলোর বড় একটি অংশ মিত্র দলগুলোর জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। এসব আসনে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি।
দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলেন, যে আসনগুলোতে তারা আগ্রহী, সেখানে আমরা প্রার্থী দিইনি। তারা যখন প্রার্থী ঘোষণা করবেন, তখন আমরা চূড়ান্ত করব।
তবে বিএনপির সব ফাঁকা আসন যে জোটের প্রার্থীদের জন্যই নির্ধারিত, তার নিশ্চয়তা এখনো নেই। কিছু আসনে মিত্র দলের নেতারা ‘গ্রিন সিগনাল’ পেয়ে ইতোমধ্যেই মাঠে প্রচারণা শুরু করেছেন।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঢাকা-১৩ আসন, যেখানে সমমনা দল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বিএনপির অনানুষ্ঠানিক সমর্থন পেয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তবে বিএনপি যেসব আসন ফাঁকা রেখেছে, সেসব আসনে শরিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোট চূড়ান্ত না হওয়ায় এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চললেও দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব জানায়, বিএনপি ইতোমধ্যেই তাদের মনোনীত আসনগুলোতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, ফলে ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

জোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন কারা?
২৩৭টি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর বাকি যে ৬৩টি আসন রয়েছে সেগুলোতে কারা প্রার্থী হবে সেটি নিয়ে সোমবার রাত থেকেই নানা আলোচনা চলছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ইঙ্গিত দিয়েছেন তার অনেকগুলোতে জোট ও মিত্রদের মনোনয়ন দেওয়ার।
বিএনপি সমমনা কিছু রাজনৈতিক দলের সাথে ২০২২ সাল থেকে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। এর বাইরে বাম ঘরানার ছয়দলীয় জোট -গণতন্ত্র মঞ্চের প্রার্থীরাও আগামী নির্বাচনে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে বলেও কয়েকটি দলের নেতারা জানিয়েছেন।
যেমন ঢাকায় সিটি করপোরেশন এলাকার মোট ১৫টি আসনের মধ্যে নয়টিতে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। ঢাকা সিটিতে বিএনপি যে ছয়টি আসন ফাঁকা রেখেছে তার মধ্যে ঢাকা -১৩ ও ঢাকা-১৭ আসন দুটিও রয়েছে।
এরই মধ্যে বিএনপির কাছ থেকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ নিয়ে কয়েকদিন আগে থেকেই ঢাকা-১৩ আসনে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।
বিএনপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরদিন ববি হাজ্জাজ বলেন, মৌখিকভাবে আমাদের জানানো হয়েছে। জোট ডিক্লারেশন অফিসিয়ালি যখন হবে তখন জোটের প্রার্থী একই সাথে ঘোষণা হবে। আমাকে মৌখিকভাবে জানানোর পরই আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছি।
ঢাকার গুলশান-বনানী এলাকায় এরই মধ্যে গরুর গাড়ি মার্কা নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি শরীক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির আন্দালিব রহমান পার্থ।
ঢাকার বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে বিএনপির জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির। ওই আসনেও দলীয় কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি বিএনপি।

মঙ্গলবার জোনায়েদ সাকী বলেন, আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচন করবো। এটি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত।
যদিও ওই আসনে এর আগে তার বিরুদ্ধে মিছিল করেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিএনপির সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা অগ্রাধিকার পেতে পারেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এলডিপির সভাপতি অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বিএনপির সমর্থন পেতে পারেন। ওই আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি।
এছাড়া বগুড়া-২ আসনে প্রার্থী হওয়ার কথা রয়েছে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র সাহাদাত হোসেন সেলিম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার প্রার্থী হওয়ার কথা রয়েছে।
>> আরও পড়তে পারেন
এছাড়া ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এ আসনেও বিএনপি কাউকে মনোনয়ন দেয়নি।
বিএনপি ও জোটের শরীক দলগুলো জানিয়েছে, যে সব আসন বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি তার বেশির ফাঁকা রাখা হয়েছে জোটের প্রার্থীদের জন্য।
অনিশ্চয়তা আছে অনেক আসনে
২০২২ সাল থেকে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিএনপি যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছিল তাতে যুক্ত ছিল গণঅধিকার পরিষদও।
আগামী নির্বাচনে বিএনপি সাথে গণঅধিকার পরিষদ জোটভুক্ত বা আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক তার নিজ এলাকা পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে নির্বাচন করতে এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন বেশ কিছুদিন ধরে।
বিএনপি সোমবার যে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে সেখানে দেখা গেছে পটুয়াখালী-৩ আসনে তারা দলীয় কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি।
একইভাবে দলটির দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের নির্বাচন করার কথা রয়েছে ঝিনাইদহ-২ থেকে। এই আসনেও বিএনপি প্রার্থী দেয়নি।
তাহলে কি ওই দুটি আসন গণঅধিকার পরিষদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্ন ছিল দলের নেতা রাশেদ খানের কাছে। তিনি বলেন, বিএনপির সাথে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে, এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে তখন আমরা কতগুলো আসন চাই, তারা কতগুলো আসন দেবে সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।
একই রকমভাবে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার লালবাগ-কামরাঙ্গীর চর এলাকা নিয়ে ঢাকা-৭ আসন। এই আসন থেকে আগে থেকে নির্বাচন করার কথা রয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হকের।
এবার বিএনপি যে ৬৩টি আসনে প্রার্থী দেয়নি তার মধ্যে এই আসনটিও রয়েছে। তাহলে কী এই আসনটি মামুনুল হকের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে? তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ধর্মভিত্তিক আটটি দল পাঁচ দফা দাবিতে যে আন্দোলন করছে সেখানে আছে মামুনুল হকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও।
প্রশ্ন উঠেছে, একদিকে জামায়াত জোটের সাথে আন্দোলন অন্যদিকে বিএনপির আসন ফাঁকা রাখা। শেষ পর্যন্ত কোনদিকে যাবে মামুনুল হক কিংবা বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস?
>> আরও পড়তে পারেন
নির্বাচনে কে দেবেন বিএনপির নেতৃত্ব, জিতলে প্রধানমন্ত্রী হবেন কে?
এই প্রশ্ন বিএনপি জোটের শরীক এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, এতদিন পর্যন্ত তো ওনারা আমাদের জোটেই ছিলেন। আবার মাঝে মধ্যে দেখি অন্য জোটেও মিটিংয়ে বসছেন। এজন্য আমরাও একটু কনফিউজড।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চও আগামী নির্বাচনে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ ভোটে অংশ নিতে চায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে গত আগস্টে বেশ কিছু প্রার্থী তালিকা বিএনপির কাছে দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে এই জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা-৮ আসনে।
কিন্তু সোমবার বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের যে নাম ঘোষণা করেছে সেখানে ঢাকা-৮ আসন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে।
মঙ্গলবার এ নিয়ে সাইফুল হক বলেন, আমি ঢাকা-৮ আসন থেকেই নির্বাচন করতে চাই। এ জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছি। কিন্তু দেখলাম এই আসন থেকে মির্জা আব্বাস সাহেবকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এ নিয়ে কথা বলবো বিএনপির সাথে।
তবে তিনি এটিও জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত ঢাকা-৮ এর পরিবর্তে যদি ঢাকা-১২ আসনটি দেওয়া হয় সেটি বিকল্প চিন্তা করতে পারেন তিনি।
যদিও ঢাকা-১২ আসন থেকেও বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে সাবেক যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরবকে।
যেসব আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে, তার বেশ কিছু আসনে বিএনপির নেতাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে কৌশলগত কারণে বা স্থানীয় কোন্দলের কারণে এখনো পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি। পরবর্তীতে এসব আসনের প্রার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।

এনসিপির সাথে জোট হচ্ছে বিএনপির?
গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপি কাদের সাথে নির্বাচনী জোট বা আসন সমঝোতা করবে সেটি নিয়েও নানা আলোচনা দেখা যাচ্ছে রাজনীতিতে।
গত মাস দুয়েক মাস ধরে বিএনপির সাথে এনসিপির নির্বাচনী জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে বলেও জানিয়েছে এনসিপি নেতাদের কেউ কেউ।
কিন্তু সে সব আলোচনায় এখন পর্যন্ত সমাধানের কোনো পথ আসেনি বলে নিশ্চিত করেছে এনসিপির শীর্ষ নেতারা।
বিএনপি ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর প্রশ্ন উঠেছে যে ৬৩টি আসন বিএনপি ফাঁকা রেখেছে সেখানে কী এনসিপি নেতাদের কেউ প্রার্থী হতে পারে?
এমন প্রশ্নে এনসিপির নেতারা বলছেন, তারা নির্বাচনী জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত দুটি পক্ষের সাথেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কার সাথে যাবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এনসিপি নেতাদের মধ্যে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১, আখতার হোসেন রংপুর-৪, হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪, সারজিস আলম পঞ্চগড়-১, আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬, আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪ আসন থেকে নির্বাচন করার কথা রয়েছে বলে দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছে।
তবে, এনসিপি নেতাদের ওইসব আসনগুলোতে এরই মধ্যে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। যে কারণে শেষ পর্যন্ত কী করবে এনসিপি সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না দলটি।
আরও পড়তে পারেন
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমাদের সাথে বিএনপির সাথে নির্বাচনী জোট কিংবা আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু কোন আসন বা কতটি আসন আমরা চাই সে সব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
বিএনপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর সোমবার রাতেই একটি সংবাদ সম্মেলন করে এনসিপি। সেখানে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, যারা বিএনপির মনোনয়ন পাননি, তারা যদি এনসিপিতে যোগ দেন—আমরা তাদের স্বাগত জানাব।
যদিও সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, বিএনপির সাথে জোট বা আসন সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে এখনো তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। সূত্র: বিবিসি বাংলা
/এএস