নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল সোমবার (৩ নভেম্বর) তিনশ আসনের মধ্যে ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলটি ৬৩ আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। এসব আসনের মধ্যে বেশ কিছু আসন যুগপৎ আন্দোলনে সঙ্গে থাকা দলগুলোকে ছাড়বে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে বিএনপি। তবে প্রার্থী জটের কারণেও কিছু কিছু আসন স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিএনপির ফাঁকা রাখা আসনগুলোতে কারা ছাড় পাচ্ছেন সেটা নিয়ে চলছে আলোচনা। এর মধ্যে ইসলামি দলগুলোর কয়েকজন নেতা ছাড় পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে একমাত্র জমিয়তে উলামায়ে ইসলামই ঘোষণা দিয়ে বিএনপির সঙ্গে রয়েছে। ফলে দলটি আশা করছে, আগামী নির্বাচনে বেশ কিছু আসনে ছাড় পাওয়া যাবে বিএনপি থেকে।
জমিয়ত নেতাদের মধ্যে বিএনপির কাছ থেকে ছাড় পাওয়ার শীর্ষে রয়েছেন দলের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। তিনি সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এই আসনটি বিএনপি ফাঁকা রেখেছে। ধারণা করা হচ্ছে, জমিয়ত সভাপতিকে আসন ছাড় দেবে বিএনপি।
সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর) আসনেও কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। এই আসনে জমিয়তের হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী। তিনিও এই আসনে ছাড় পেতে পারেন।
জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা মঞ্জরুল ইসলাম আফেন্দীর নির্বাচনী এলাকা নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা)। এই আসনেও কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। এখানেও জমিয়ত মহাসচিবকে ছাড় দিতে পারে দলটি।
বিএনপির কাছ থেকে পাওয়া আসনগুলোর মধ্যে বেশ আলোচিত নারায়ণগঞ্জ-৪। এই আসনে জমিয়তের প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মনির হোসেন কাসেমী। তিনি অবশ্য ২০১৮ সালেও এই আসনে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। এবারও তিনি জমিয়তের প্রার্থী। এবং জমিয়তকে বিএনপি যে কয়টি আসনে ছাড় দিতে পারে বলে আলোচনা আছে এর মধ্যে রয়েছে শামীম ওসমানের আসন হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটিও। এই আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। শেষ পর্যন্ত হেফাজত ও জমিয়ত নেতা মাওলানা মনির হোসেন কাসেমী ছাড় পেতে পারেন আসনটিতে।
আলোচনায় রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনও। এই আসনে জমিয়তের প্রার্থী মাওলানা জুনাইদ আল হাবীব। বিএনপির আলোচিত নেত্রী রুমিন ফারহানা এই আসনে প্রার্থী হলেও আসনটি ফাঁকা রেখেছে দলটি। শেষ পর্যন্ত এই আসনেও বিএনপির কাছ থেকে ছাড় পেতে পারে জমিয়ত।
সুনামগঞ্জ-২ (শাল্লা-দিরাই) আসনে জমিয়তের প্রার্থী ইউরোপ জমিয়তের সভাপতি ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ। এই আসনেও বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। এখানে ছাড় পাওয়ার আলোচনা আছে।
এর বাইরে জমিয়তের অপর অংশ শুরু থেকেই বিএনপির সঙ্গে রয়েছে। সেই অংশটিও দুয়েকটি আসনে ছাড় পেতে পারে। এর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসন। এই আসনে জমিয়তের (একাংশ) প্রার্থী মাওলানা রশিদ বিন ওয়াক্কাস। তিনি বিএনপির ছাড় পেতে পারেন বলে জোড় প্রচারণা রয়েছে।
এদিকে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নিয়ে গঠিত প্লাটফর্মে রয়েছে। জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতিসহ পাঁচ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনেও সক্রিয় দলটি। তবে আলোচিত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের কদর রয়েছে বিএনপির কাছে। শেষ পর্যন্ত তিনি এবং তার দল বিএনপি বলয়ে যেতে পারে বলেও গুঞ্জন আছে।
বিএনপি যেসব আসনে প্রার্থী দেয়নি এর মধ্যে তিনটি আসন এমন রয়েছে, যেখান থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে নিজের আগ্রহের কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন মাওলানা মামুনুল হক। তবে তিনটি আসনের মধ্যে একটিতে ইতোমধ্যে অন্য দলের একজন প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়ার কথা জানা গেছে।
সম্প্রতি মাওলানা মামুনুল হক এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তার কর্মক্ষেত্র রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় হওয়ায় ঢাকা-১৩ আসনে তিনি প্রার্থী হতে আগ্রহী। তিনি বেড়ে উঠেছেন লালবাগ এলাকায়। সে ক্ষেত্রে ঢাকা-৭ আসনও তার পছন্দের তালিকায় আছে। এছাড়া নানার বাড়ি এবং বাবার কিছুদিনের কর্মস্থল হিসেবে বাগেরহাট-১ আসনেও তিনি নির্বাচন করতে পারেন।
বিএনপি ঘোষিত তালিকায় দেখা যায়, তিনটি আসনই ফাঁকা রাখা হয়েছে। তবে এর মধ্যে মোহাম্মদপুর আসনে ইতোমধ্যে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে এবং তিনি কাজও শুরু করেছেন। বাকি দুটি আসন অবশ্য মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে সমঝোতা হলে বিএনপি ছাড়তে রাজি বলে জানা গেছে।
জেবি