images

রাজনীতি

আবেগাপ্লুত তারেক রহমান, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চোখে জল

বোরহান উদ্দিন

২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৬ এএম

# মৃত্যুর মুখেও মা আপনাদের ছেড়ে আসেননি: তারেক রহমান

# দিলেন ঐক্যের বার্তা, আশ্বস্ত করলেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

# শিগগিরই জানা যাবে ধানের শীষের প্রার্থী

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দফায় দফায় ভার্চুয়াল বৈঠক করছেন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে। দূরদেশ থেকে নেতাদের উদ্দেশে তিনি বারবার ঐক্যের বার্তা দিচ্ছেন। তারেক রহমান চাইছেন ভোটের মাঠে দলের মনোনীত প্রার্থীর পাশে সবাই যেন একসঙ্গে কাজ করেন।

গত কয়েকদিনের বৈঠকের শেষ দিনে ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলার সময় মায়ের ত্যাগ স্মরণ করে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। ১৭ বছর ধরে প্রবাসে থাকা এই রাজনীতিবিদের বক্তব্যে বারবার উঠে আসে মা বেগম খালেদা জিয়ার ত্যাগ এবং দেশের প্রতি তার ভালোবাসা। ওই মুহূর্তে চোখের জল ফেলেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও। তারা ধানের শীষের বিজয়ের জন্য একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আশ্বস্ত করেন।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তারেক রহমান। এই মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বিএনপির ১০ সাংগঠনিক বিভাগের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মায়ের ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘আমার মাও মৃত্যুর মুখোমুখি ছিল। ইচ্ছে করলেই মাকে আমি নিয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু মা আসেননি আপনাদের ছেড়ে। ছয় বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও তিনি থেকে গেছেন আপনাদের মাঝে।’

তার এমন বক্তব্যে অনুষ্ঠানস্থলে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। অনেকে ধরে রাখতে পারেননি আবেগ। নীরবে চোখের পানি মুছেছেন বলে জানা গেছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের পুরোটা সময় শুনশান নীরবতা ছিল। আমিসহ উপস্থিত সবাই চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। তার মা, পরিবারসহ যে বক্তব্য দিয়েছেন সত্যিই চোখে পানি ধরে রাখার মতো ছিল না। আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আশ্বস্ত করেছি, নির্বাচন সামনে রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব। এবং তার নির্দেশে সবাই এক হয়ে কাজ করব।’

তারেক রহমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন বলেও জানান আব্দুস সালাম।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের কথাও উঠে আসে তারেক রহমানের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘যে মা তার চল্লিশ বছরের বাড়ি হারিয়েছে, শেখ হাসিনা মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, যে মা তার সন্তানকে হারিয়েছে, মা বুঝে সন্তান হারানোর ব্যথা। সেই মায়ের সবকিছুর মূলেই ছিল এদেশের জনগণ। সবকিছুর মূলেই ছিল একটি গণতন্ত্রিক রাষ্ট্র। ইচ্ছে করলেই তো মা এ ব্যাপারে আপোস করতে পারতেন। কিন্তু মা কোনো আপসে যাননি। তার লক্ষ্যই ছিল ঐক্যবদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি জাতি গঠন করা। সেখানে কত ত্যাগ না স্বীকার করেছেন মা।’ 

আওয়ামী লীগের সময়ে আন্দোলন ও সবশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য কত লোক শাহাদাত বরণ করেছে। কত লোক জেল খেটেছে, কত লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মা যদি আপোস করতেন তাহলে এতো কষ্ট মার করতে হতো না।’

এ কথা বলার সময় তারেক রহমানের কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। তখন সেখানে উপস্থিত অধিকাংশ মনোনয়নপ্রত্যাশীও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

তারেক রহমান সভায় একটি ঘটনার উদাহরণ টেনে বলেন, দুই মায়ের মধ্যে এক সন্তানকে নিয়ে বিরোধ ছিল। বিচারক বলেছিলেন, সন্তানকে দুই ভাগ করে দেব। কিন্তু যিনি আসল মা, তিনি বলেছিলেন- না, সন্তানকে ভাগ করা যাবে না, আমি দূর থেকে দেখব। বিএনপিও আজ সেই সন্তানের মতো একে ভাগ হতে দেওয়া যাবে না। একজন প্রার্থী মনোনয়ন পেলেও বাকিরা যেন সেই মায়ের মতো নির্লোভভাবে তাকে গ্রহণ করেন।’

প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

tarekবিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, তারেক রহমান ধারাবাহিক বৈঠকে নেতাদের উদ্দেশে স্পষ্ট নির্দেশনা দেন কেউ যেন মনোনয়ন পাওয়ার পর মিছিল, মিষ্টি বা ফুল বিতরণ না করেন। এতে দলের ঐক্য নষ্ট হতে পারে। তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন নয়, ঐক্যই এখন দলের সবচেয়ে বড় শক্তি।’

এর আগে সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পৃথকভাবে মতবিনিময় করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

রাজশাহী বিভাগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্পষ্ট বলেছেন মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হোক, আমাদের লক্ষ্য একটাই- ধানের শীষের বিজয়।

খুলনা-৬ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সবাই মিলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। আমরা খুলনা-৬ আসনের ৫ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ঐক্যবদ্ধ। দলের পক্ষ থেকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

গুলশান কার্যালয়ের বাইরে কর্মীদের ঢল

এদিকে নেতাকর্মীদের ভিড় না করার নির্দেশনা থাকলে গত কয়েকদিনের বৈঠকের সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে দেখা দেয় কর্মীসমর্থকদের ভিড়। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তাজুড়ে অপেক্ষায় থাকেন। কোনো কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশী মতবিনিময়ের এই অনুষ্ঠানেও শোডাউন করেছেন কর্মী সমর্থকদের দিয়ে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সব আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষ হলো। কিছুদিনের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে একজনকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তফসিল ঘোষণার পরে দলের মনোনয়নবোর্ড চূড়ান্তভাবে প্রার্থী হিসেবে তাকে ঘোষণা করা হবে।’

বিইউ/এমআর