images

রাজনীতি / সারাদেশ

আওয়ামী লীগের ‘দোসরকে’ নিয়ে সভা করলেন সারজিস

জেলা প্রতিনিধি

০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৭ পিএম

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের এক দোসরকে পাশে নিয়ে সমন্বয় সভা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।

সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর অলোকার মোড়ে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স ভবনের অডিটোরিয়ামে নেতাকর্মীদের নিয়ে এ সমন্বয় সভা করেন তিনি। এসময় তার পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের চিহ্নিত ওই দোসর। বিষয়টি নিয়ে এনসিপির নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুন এনসিপির রাজশাহী জেলা কমিটি ঘোষণা হয়। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের স্বাক্ষরে ওই কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ২৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে মো. রাশেদুল ইসলামকে প্রধান সমন্বয়কারী করা হয়। সেই কমিটিতে আওয়ামী লীগের কয়েকজন দোসরকেও পদ দেওয়া হয় বলে পরবর্তীতে অভিযোগ উঠে। ওই কমিটিতে সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবককে দুই নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী করা হয়।

thumbnail_sarjis

এনসিপির এক নেতা ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, সাইফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসর ছিলেন। তিনি মূলত কোচিং ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে একটি নার্সিং ভর্তি কোচিং ও বেসরকারি নার্সিং কলেজ পরিচালনা করছেন। সেখান থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থনে ব্যাবসা করেছেন তিনি। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন সাইফুল।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার লিটন ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজশাহী নগরীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় নেতৃত্ব দেন। ওইদিন নগরীর আলুপট্টি, কুমারপাড়া ও সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় মুহুর্মুহু গুলি ছোড়া হয়। দু’জন শহীদ হন। আহত হন কয়েকশো আন্দোলনকারী।

thumbnail_Saiful

সেই লিটন ও আয়েনের সঙ্গে সাইফুল ইসলামের হাস্যোজ্জ্বল মুহূর্তের কয়েকটি ছবি ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে। সেই সাইফুল ইসলাম এনসিপির রাজশাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তখন থেকেই ক্ষুব্ধ হন জুলাই যোদ্ধারা। তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। তবে সাইফুলের ব্যাপারে সাড়ে তিন মাসেও দৃশ্যমান কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তিনি এনসিপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে থাকেন। এ নিয়ে দলটির একটি অংশ চরম ক্ষুব্ধ।

জানা গেছে, সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে নগরীতে আসেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় সভায় মিলিত হন তিনি। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

thumbnail_Saiful_&_Liton

সারজিস আলম বলেন, জুলাই আন্দোলনে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। এতগুলো শহীদের রক্তের দায়িত্ব ভুলে গিয়ে তারা যদি একটি নির্বাচন দিয়ে শেষ করে তারা যদি এক্সিট নিতে চায়, আমরা বলি তারা আর মানুষের কাছে আশ্রয় পাবে না। জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না। আমাদের যে জুলাই সনদ এটির যদি আমরা আইনগত ভিত্তি পায় এবং আমরা দৃশ্যমান বিচার দেখতে পায়, তাহলে আমরা নির্বাচনে যাব।

আরও পড়ুন

গণঅধিকার পরিষদ সংসদের উচ্চকক্ষে পিআরের পক্ষে: রাশেদ খান

প্রতীক প্রসঙ্গে সারজিস বলেন, আমাদেরকে শাপলা প্রতীক দিতে আইনি কোনো বাধা নেই। তারপরও যদি আমাদেরকে না দেওয়া না হয় আমরা সেটা মেনে নেব না। নির্বাচন কমিশনকে আমাদের পক্ষ থেকে বলব, আপনারা শুধু আমাদের শাপলা না দেওয়ার পেছনে না ছুটে, আপনারা আপনাদের নীতিমালাগুলো সংশোধন করেন।

thumbnail_Saiful_&_liton2

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন। এ উপস্থিত হন সাইফুল ইসলাম। সারজিস সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তার পাশে ছিলেন ইমরান ইমন। আর তার পাশেই সাদা ফতোয়া গায়ে দাঁড়িয়েছিলেন সেই সাইফুল ইসলাম।

এ ঘটনার পর এনসিপির কয়েকজন নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, যেহেতু ১৭ বছরে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামোর বিলুপ্তি ঘটিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, সেহেতু আওয়ামী লীগ ইস্যুতে তৃণমূলের অবস্থা খুবই স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত ও আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় লালিতপালিত কাউকে এনসিপিতে সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে আমরা বারবার নির্বাক হচ্ছি। বিগত সময়ে রাশিক দত্ত ও ছাত্রলীগকে অর্থ সহায়তা করে আসতেন তিনি। জুলাই আন্দোলনে ০.১ পার্সেন্টও ভূমিকা তার ছিল না। বরং পাঁচ তারিখের আগের অনেক ফেসবুক পোস্ট যেগুলো ফ্যাসিবাদের পক্ষে লিখেছিল, সব ডিলিট করছেন তিনি।

thumbnail_Saiful_&_MP_Ayen_Liton3

এনসিপির ওই নেতা আরও বলেন, সাইফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের পলাতক আসামিদের গোপনে সহায়তা করে আসছেন এমনটা জানার পরে তিনি অনেকের সঙ্গে সরাসরি বিরোধিতায় জড়ান এবং এনসিপির জেলা কমিটিতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালিয়ে যান। আমরা সেন্ট্রালের কাছে দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, শহীদদের রক্তের সঙ্গে যারা বেইমানি করছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

আরও পড়ুন

গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে অভিন্ন সুর বিএনপি-এনসিপির, ভিন্নমত জামায়াতের

আরেক নেতা বলেন, এটা স্পষ্টত শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি। এনসিপিতে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন চলতে থাকলে, দল মুখ থুবড়ে পড়বে।

এ বিষয়ে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভি করেননি।

thumbnail_Saiful_&_MP_Ayen

রাজশাহী জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে এনসিপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন ঢাকা মেইলকে বলেন, ওই ছবিগুলো আমরাও দেখেছি। ওগুলো একটা ইভেন্টের ছবি। আমরা যতটুকু জানছি, ওগুলো ১০-১১ সালের দিকে কোনো একটা পিকনিকের ছবি বা শিল্পী সংঘের কোনো একটা কালচারাল প্রোগ্রামের ছবি। এগুলো ছবি দিয়ে তো মানুষকে আইডেন্টিফাই করা যায় না আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে। আপনার কাছে যদি কোনো ইনফরমেশন থাকে যে, উনি কোনো জুলুম বা করাপশন বা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিপক্ষে অবস্থানের কোনো এভিডেন্স থাকলে আমাদের দেবেন, আমরা সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।

প্রতিনিধি/এসএস