images

রাজনীতি / সারাদেশ

শাপলা প্রতীক পেতে যদি রাজপথে বা আদালতে যেতে হয়, যাব: সারজিস

জেলা প্রতিনিধি

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০২ পিএম

পঞ্চগড়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আইনগতভাবে এনসিপি শাপলা প্রতীক পায়। তবে তা আদায়ে যদি রাজপথ বা আদালতে যেতে হয় আমরা যাব।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের হুদুপাড়া শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস তার জায়গা থেকে বলেছেন- বিদেশি কিছু শক্তি নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে। এই জায়গায় এনসিপি বা অন্য কোনো দলের কথা যদি বলেন- আমরা বরং চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন হোক। কিন্তু আমরা আমাদের জায়গা থেকে সব সময় যেটা বলেছি সেটা হচ্ছে- বিচার ও সংস্কারের প্রক্রিয়া মধ্য দিয়ে গিয়ে একটা সুস্থ নির্বাচন হোক। এটা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য খুবই জরুরি।

thumbnail_PANCHAGARH_SERJIS_MONDIR_PORIDORSON_PIC_(3)

সারজিস বলেন, আমাদের জায়গা থেকে এখন মনে হয়- আমাদের শাপলা পাওয়ার সঙ্গে নির্বাচন পেছানো বা আগানোর কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা যেহেতু আইনগতভাবে শাপলা প্রতীক পাই। আইনগত কোনো বাধা নেই। আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশন তার ওই মেরুদণ্ড শো করবে। বাইরের কোনো চাপ বা বাধাতে তারা নত হবে না। এনসিপির যে শাপলা মার্কাটা সেটা আইনগতভাবে যেন আমরা পাই। সেটা আমাদেরকে দিয়ে দিক। এটা আমাদের একটা প্রত্যাশা থাকবে। এটার লড়াই আলাদা। এটা আমাদের মতো করে আইনগতভাবে যদি যাওয়া লাগে, রাজপথে যাওয়া লাগে, আমরা যাব। এটার সঙ্গে নির্বাচন আগানো-পেছানোর কোনো সম্পর্ক নেই।

সারজিস আরও বলেন, আমরা মনে করি যাদের নির্বাচন পেছানোর একটা কালো উদ্দেশ্য আছে। এই চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত যারা, তারা বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে। দেশকে অস্থিশীল করতে ওই মানুষগুলো নিজেদের চক্রান্ত অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য এখন এই ধরনের কথা বলছে। তারা বলছে- আমরা যদি শাপলা মার্কা না পায় তখন রাজনৈতিকভাবে যে মোকাবিলা করব, এটা মনে হয় নির্বাচন পেছানোর চক্রান্ত। আমরা স্পষ্ট করে বলি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি মনে করে তারা ফেব্রুয়ারির প্রথমে নির্বাচন দিবে, এনসিপির সেই জায়গায় কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা একটা দৃশ্যমান বিচার দেখতে চাই। জুলাই সনদের আমরা আইনি ভিত্তি চাই। যেটার মধ্য দিয়ে আমাদের মৌলিক সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন হবে।

আরও পড়ুন

ফেসবুকে ঘুরছে বিএনপির প্রার্থীদের নাম, রিজভী জানালেন তালিকাটি ভুয়া

তিনি বলেন, আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে ছোট্ট উপহার তাদের হাতে তুলে দিচ্ছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাদের অবস্থাটা জানার চেষ্টা করছি। মন্দিরের অবস্থা, তাদের যে পারিপার্শ্বিক অবস্থা, এগুলো আমরা জানার চেষ্টা করছি। সে অনুযায়ী নোট করছি। আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে তাদেরকে এটা কমিটমেন্ট করেছি যে, আমরা বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে যেটা দেখেছি। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখেছি, আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বী যারা ভাই বোনরা রয়েছেন, তাদের মন্দির কিংবা শ্মশান কিংবা যেখানে প্রতিমা বিসর্জন হয়, এই রিলেটেড যে খাস জমিগুলো আছে, ওই জমিগুলো অভ্যুত্থানের আগেও অনেক হয়েছে। অভ্যুত্থানের পরেও কিছু কিছু লোক ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেগুলো দখল করার চেষ্টা করছে। ভুয়া জাল দলিল দিয়ে। আমরা সরকারের কাছে এনসিপির পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি এরকম একটি কমিশন গঠনের জন্য আবেদন জানাব। যেখান থেকে এই বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে যেগুলো খাস জমি, এরকম ধর্মীয় এবং এই ধর্ম রিলেটেড কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। সেগুলোর যেন নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা হয়।

thumbnail_PANCHAGARH_SERJIS_MONDIR_PORIDORSON_PIC_(5)

তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ শুধু নামকাওয়াস্তে নিজেদের দরকারে সনাতন ধর্মের ভাইদের কাছে এসেছে। কিন্তু আপনারা দেখে থাকবেন বাংলাদেশের অনেক বড় বড় মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। লোক দেখানো একটা কমিটি হয়েছিল। তখন লোক দেখানো দুই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তখন আমরা না দেখেছি কোনো দৃশ্যমান শাস্তি, না দেখেছি কঠিন কোনো বিচার। এই কারণে কিন্তু অনেক ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী ওই টুলটাকে বারবার ব্যবহার করেছে। ধর্মীয় যে আমাদের সম্প্রীতির পরিবেশ ওই জায়গায় ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করেছে। আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে আমাদের সরকারের কাছে স্পষ্ট আহ্বান থাকবে, এরকম কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যদি বাংলাদেশে ঘটে থাকে, আপনারা দৃশ্যমান সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত পঞ্চগড়ের আমরা পনেরোটা দুর্গা মন্দিরে গেছি। প্রত্যেক জায়গায় আমরা বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাব, আনসার বাহিনী যারা আছে। তাদের বিভিন্ন ধরনের উপস্থিতি আমরা ভালোভাবে দেখেছি। নিরাপত্তা আমাদের কাছে সন্তোষজনক ছিল।

আরও পড়ুন

একজন উপদেষ্টাকে আ.লীগ প্রধানের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব রাশেদ খানের!

সারজিস বলেন, কয়েকদিন আগে আমরা দেখলাম যে, প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে- যে প্রতিমা রয়েছে সেখানে বিভিন্ন ধরনের এআই টুল ব্যবহার করে আকৃতিতে বিকৃতি এনে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। পরে যখন বাস্তবে আসে মন্দিরে জেলা প্রশাসক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টিম। তারা দেখেছে এরকম কিছু হয়নি। ভারতীয় একটা মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা সেল আছে। এগুলোকে মিডিয়া বলা যায় না। ওইটার নামই প্রোপাগান্ডা হাউস। তারা তাদের জায়গা থেকে ন্যূনতম পেশাদারিত্বের পরিচয় না দিয়ে এরকম কালো টাকার ইনভেস্টমেন্টগুলো তাদের ওপর ওইখানে যায়। ওই কালো টাকাগুলোকে ব্যবহার করে এরকম ভারতীয় কিছু হাউস প্রপাগান্ডা ছড়ায়। তারা দেখাতে চায় যে আমাদের ভেতর যে ধর্মীয় সম্প্রীতি, এটা মনে হয় আমাদের নেই। এখন আমাদের ভেতরে মনে হয় প্রচুর হানাহানি চলছে। আপনারা আমাদের এখানে মা-বাবা, ভাই, চাচিদের বয়সের অনেকে আছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। আমি অন্তত দেখেছি, আমাদের এই এলাকার শান্তিপূর্ণ সম্প্রীতির একটা পরিবেশ সবসময় থাকে। দেখবেন তারা একই হোটেলে বসে খাওয়া দাওয়া করে। একই যানবাহনে চলাচল করে। বাসায় অনুষ্ঠান হলে একে অপরকে দাওয়াত দেয়। এইটুকু সম্প্রীতি আছে। আমরা চাই এই পারস্পরিক সম্পর্ক সবসময় থাকুক।

মন্দির পরিদর্শনকালে সারজিস মন্দির কমিটির হাতে এনসিপির পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

এসময় সদর উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী তানবিরুর বারী নয়ন, জেলা যুবশক্তির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবু কায়েস বাবুসহ এনসিপির ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিনিধি/এসএস