নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:০২ পিএম
নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন ও পৃথক করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক রায়কে ‘ঐতিহাসিক’, ‘সুনির্দিষ্ট’ এবং ‘কার্যকর ও বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের এক গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক’ বলে মত প্রকাশ করেছেন জনতা পার্টি বাংলাদেশ এর নির্বাহী চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন এবং মহাসচিব শওকত মাহমুদ।
তিন মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের নির্দেশনা এই রায়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করে নেতৃদ্বয় বলেন, কালবিলম্ব না করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন অরাজনৈতিক সরকারের উচিত জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বিচার বিভাগের ওপর সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা। এই বহুল প্রত্যাশিত রায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়াহীনতায় জনতা পার্টি উদ্বিগ্ন। কেননা ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকগুলোতে বিচার বিভাগীয় সংস্কারের সুপারিশমালা সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের তুলনামূলক উদাসীনতা লক্ষণীয়।
আজ জনতা পার্টি বাংলাদেশ’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মহাসচিব যুক্ত বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, সংবিধানের ২২, ১০৭ ও ১০৯ অনুচ্ছেদ এবং মাজদার হোসেন মামলার রায়ের নির্দেশনা উদ্ধৃত করে হাইকোর্ট এই রায়ে বলেছেন, পৃথক বিচার বিভাগ সাংবিধানিক অধিকার। ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব আরোপ করা হয়েছিল। পঞ্চম সংশোধনীতে এক্ষেত্রে বিচার বিভাগের সঙ্গে পরামর্শের বিধান সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু বাস্তবে নির্বাহী বিভাগের চাওয়া-পাওয়া এবং দলবাজিই প্রাধান্য পেয়ে আসছিল। বিচারপতি নিয়োগ, অধঃস্তন আদালতগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বৈষম্যমূলক বিচার ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। এরপর বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় প্রধান বিচারপতিকে হেনস্থা, মর্জি অনুযায়ী রায় বদল, ভিন্নমতের রাজনীতিকদের ওপর জুলুম, দলীয় বিচারকদের মাস্তানি রাষ্ট্রে এক ভয়ানক অবস্থা তৈরি করেছিল। উচ্চ আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা, আনিসুল হক, খায়রুল হক, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকেরা বিচার অঙ্গনে নৈরাজ্য কায়েম করেছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন, বৈষম্যহীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় বিচার বিভাগেও পল্লবিত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্প। জনতা পার্টি বাংলাদেশ মনে করে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারিক পরিমণ্ডলকেও সেভাবে তৈরি করা বাঞ্ছনীয়। এখনও বিচার বিভাগ দুর্নীতিমুক্ত বা স্বৈরাচারদের দোসরমুক্ত নয়। বিচারপ্রার্থী মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের ব্যবস্থা করা, বিচার প্রত্যাশী মানুষের স্বল্প ব্যয়ে বিচার পাবার পথ প্রশস্ত করা। বিচার অঙ্গনকে হয়রানি মুক্ত করা। সর্বোপরি বিচার বিভাগীয় সংস্কারের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
এফএ/