জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৮ আগস্ট ২০২৫, ০২:৫২ পিএম
জাতীয় পার্টিতে চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোনো পন্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। একইসঙ্গে আনিসুল ইসলাম মাহমুদদের বলয়ের নেতাদের ডাকা কাউন্সিলে দলের নেতাকর্মীদের যেতেও বারণ করেছেন জাপা মহাসচিব।
শুক্রবার (০৮আগস্ট) জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, গেল ২৮ জুন জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিল হবার কথা ছিল। হল বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে কাউন্সিলটি স্থগিত করা হয়। ওই সময়ে হল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাজেট সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। তাই, তারা আমাদের হল ভাড়ার অগ্রীম টাকা গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে আমরা ২৭ তারিখেও হল চেয়েছিলাম। কিন্তু, হল কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে হল বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করেন।
‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কিছু সিনিয়র নেতা এই বিষয়টিকে মিথ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই ঘটনায় আমাদের কিছু সিনিয়র নেতারা ২৮ জুনই কাউন্সিল করার জন্য রেষারেষি শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে ২৫ জুন জাতীয় পার্টির ৭৮টি ইউনিট কমিটির নেতৃবৃন্দ সভা করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর উপরে পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করে। একই সাথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। পরবর্তীতে ২৮ জুন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সিনিয়র নেতাদের দল থেকে বহিস্কার করার।’
জাপা মহাসচিব বলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্যদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ৩০ ধারা মোতাবেক জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের অনেককেই বহিস্কার করেন। এর প্রেক্ষিতে বহিস্কৃতরা একটি দেওয়ানী মোকদ্দমা করেন। দীর্ঘ শুনানির পরে মহামান্য বিজ্ঞ আদালত আদেশ দেন যে, আবেদনটি পরিবর্তিত আকারে মঞ্জুর করা হলো। আদালতের নির্দেশনাটি হলো জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও দফতর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখ পর্যন্ত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আদেশে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানকে বাতিল করা হয়নি, চেয়ারম্যান পদ অবৈধ ঘোষণা করা হয়নি এবং বর্তমান চেয়ারম্যানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়নি। মানে হচ্ছে যারা প্রাথমিক সদস্য পদসহ বহিস্কৃত হয়েছে, তারা অদ্যাবধি পর্যন্ত বহিস্কৃত আছে। যারা বহিস্কৃত হয়েছেন তাদের পক্ষে জাতীয় পার্টির কোন সভায় অংশ নেওয়া অবৈধ। তারা কোন সভা ডাকতে পারেন না এবং প্রেসিডিয়াম সভা করতে পারেন না। বহিস্কৃতদের কাউন্সিল ডাকার অধিকার নেই।
পাটোয়ারী বলেন, অনেকেই জাতীয় পার্টির পদ পদবী ব্যবহার করে সভা করছেন, কেউ মহাসচিব দাবি করছেন। প্রকৃতপক্ষে আদালতের আদাশে মহাসচিব শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি এবং আদেশেও মহাসচিবের বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। তাহলে আরেকজন কি করে মহাসচিব দাবী করেন? আমরা লক্ষ্য করছি আদালতের রায়ের অপব্যাখ্যা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, গঠনতন্ত্রের ২০/২(খ) ধারাতে বলা হয়েছে চেয়ারম্যানের দীর্ঘ সময়ের অনুপস্থিতে সিনিয়র কো চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান অথবা প্রেসিডিয়ামের কো সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করতে পারবেন। অর্থাৎ চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে পারবেন। চেয়ারম্যান এখন দেশে আছেন, সুস্থ্য আছেন এবং নিয়মিত অফিসে আসেন, তাছাড়া কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করেননি গোলাম মোহাম্মদ কাদের। চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোন পন্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে নেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তাদের কাজ করার প্রক্রিয়াটি শুরু থেকে বেআইনি এবং অবৈধ। বহিস্কৃতদের কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির মূল ধারার কোন নেতাকর্মী যাবে
জাপা মহাসিচব বলেন, দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের সকল সিদ্ধান্ত সভা করে সবার মতামতের ভিত্তিতে নিয়ে থাকেন। জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। যারা এই পার্টিতে নেতা হয়েছেন তারা গঠনতন্ত্র মোতাবেক পদোন্নতি পেয়েছেন। আবার, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারা বহিস্কৃতও হয়েছেন। বহিস্কৃতরা যে সভা করছে তা গঠনতন্ত্র বিরোধী এবং বেআইনি। আদালতের আদেশকে অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে যা আদালত অবমাননার সামিল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের দলীয় কর্মকান্ড থেকে বিরত আছেন।
তিনি দাবি করেন, দেশে এখন নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। রাষ্ট্রের উপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এমন বাস্তবতায় মনে হচ্ছে নির্বাচন করার জন্য সরকারের কোন আন্তরিকতা ছিল না। নির্বাচন নিয়ে সরকার নতুন ইনিংস শুরু করেছে, আমরা দেখতে চাই এই ইনিংসে সরকার কেমন ব্যাটিং বোলিং করে। এর পরেই আমরা নির্বাচনের ব্যাপারে সঠিক মন্তব্য করতে পারবো। এখন যদি সরকার সচেষ্ট হয় তাহলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে হয়তো নির্বাচন করা সম্ভব হবে। নির্বাচনের জন্য সরকারের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা থাকতে হবে।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে বর্তমান সরকার অবিচার করছে বলেও দাবি করের শামীম হায়দার।
তিনি বলেন, অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথেও নির্বাচন কমিশন দফায় দফায় সভা করছে। কিন্তু, নিবন্ধিত এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ জাতীয় পার্টিকে সভায় ডাকছে না। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের শপথ নিলে অবশ্যই জাতীয় পার্টিকে আলোচনায় ডাকা উচিত।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে যদি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিত স্বাভাবিক না থাকে, পুলিশ ও প্রশাসন যদি সঠিকভাবে কাজ না করে এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়েইং ফিল্ড না থাকে তাহলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হচ্ছে হাত পা বেধে সাঁতার কাটতে নামার সামিল। সরকার যদি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ হয় তবেই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহন করবো।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর শিকদার লোটন, ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস, অধ্যাপক মহসিনুল ইসলাম হাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, আগামীকাল শনিবার গুলশানে জাপার কাউন্সিল করবে আনিসুল ইসলাম মাহমুদরা ।
বিইউ/এএস