নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ আগস্ট ২০২৫, ০৯:১৪ এএম
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণাকে বিএনপি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করলেও, একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়নি দেশের সব রাজনৈতিক দল। কেউ স্বাগত জানিয়েছে শর্তসাপেক্ষে, কেউ আবার হতাশা প্রকাশ করেছে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তা নিয়ে।
ভাষণের পরপরই মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন—জাতীয় নির্বাচন, আরেকটি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে। আমরা দুটোকেই স্বাগত জানাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করি, খুব শিগগিই সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সনদটি স্বাক্ষরিত হবে। প্রয়োজনে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হলে আমরা অংশ নেব।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আগেও বলেছি, সঠিক জায়গায় সংবিধানে সেটি স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে জুলাই শহীদদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়াটা সময়োপযোগী ও যথাযথ হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ও দ্বিধা ছিল, প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার মাধ্যমে তা অনেকটাই কেটে গেছে। ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ভাষণে উপস্থাপিত পরামর্শগুলোকেও তিনি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, ড. ইউনূসের ঘোষণার পরপরই জামায়াতে ইসলামী নির্বাহী পরিষদের বৈঠক বসে। এতে দলটির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত মনে করে—‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। একই মত পোষণ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) আরও কয়েকটি দল।
জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে আপত্তি নেই। তবে তার আগে অবশ্যই ‘জুলাই সনদ’-এর সংস্কার সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন এবং আইনগত ভিত্তি দিতে হবে।
বৈঠক শেষে দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, বুধবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানানো হবে।
ডা. তাহের আরও বলেন, ঘোষণাপত্রে বাস্তবায়নের কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই, যা জাতিকে হতাশ করেছে। সংবিধানে ঘোষণাপত্র সংযুক্ত করা উচিত ছিল। আগে শোনা যাচ্ছিল এটি ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে কার্যকর হবে, কিন্তু ভাষণে এমন কোনো সুস্পষ্ট বার্তা ছিল না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, নির্বাচন সময়ের সঙ্গে নয়, পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। গত ১৫ বছরে আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। অথচ তাদের বিষয়ে কোনো শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এই প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিরা আগামী নির্বাচনে দায়িত্বে থাকবেন কি না, সেটিও পরিষ্কার নয়। তাদের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে না।
সামান্তা শারমিন বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাচাই করতে স্থানীয় পর্যায়ে ‘ফিল্ড টেস্ট’ হওয়া দরকার ছিল। আমরা এখনো এমন কোনো উদ্যোগ দেখি না। অবশ্য এখনো সাত মাস সময় আছে। যদি অন্তর্বর্তী সরকার এই সময়ের মধ্যে এসব ঠিক করতে পারে, তাহলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।
ভাষণের মাধ্যমে নির্ধারিত নির্বাচনের সময়সূচিকে এনসিপি স্বাগত জানাচ্ছে কি না—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা স্বাগত জানানোর কিছু নয়। একে দেখতে হবে সন্দেহের দৃষ্টিতে—উইথ এ গ্রেইন অব সল্ট।
এইউ